কুয়েটে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন ভিসি, শিক্ষক সমিতি কর্মবিরতিতে অনড়

0
15
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাকক্ষে শিক্ষক সমিতির সভা। সোমবার দুপুরে

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ৭৪ দিন পর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও ক্লাসে ফেরেননি শিক্ষকেরা। গতকাল রোববারের মতো আজ সোমবারও শিক্ষকেরা তাঁদের কর্মবিরতিতে অনড় রয়েছেন। শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা ক্লাসে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরোদমে কবে নাগাদ ক্লাস শুরু করা যাবে, তা নিয়ে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা আরও ঘনীভূত হয়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কুয়েটের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক মো. হযরত আলী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। পরে বেলা তিনটার দিকে শিক্ষকদের সঙ্গেও বৈঠকে বসেন, যা এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত চলছিল।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হযরত আলী বলেন, বাংলাদেশে আরও অনেক প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, সেখানে কুয়েটের অনেক কোর্সই পড়ানো হয়। ফলে চাকরির বাজারে এক দিন পিছিয়ে যাওয়া মানে অনেকখানি পিছিয়ে যাওয়া। তিনি আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো, যত দ্রুত সম্ভব ক্লাসে ফেরা।’ এ জন্য তিনি শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয় পক্ষকে ‘কম্প্রোমাইজিং টেন্ডেন্সি’ (আপসের মনোভাব) নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

উপাচার্য বলেন, উভয় পক্ষেরই ক্ষোভ ও দাবি রয়েছে। ঘটনার গভীরতা অনেক। তবে এখন ক্লাসে ফেরাই প্রধান অগ্রাধিকার। এর জন্য যা কিছু ছাড় দেওয়ার প্রয়োজন, উভয় পক্ষকেই তা দিতে হবে।

এদিকে আজ বিশ্ববিদ্যালয় সভাকক্ষে শিক্ষক সমিতির এক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভা শেষে দুপুরে সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. ফারুক হোসেন সভার সিদ্ধান্ত জানান। তিনি বলেন, শিক্ষকেরা আজ দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করছেন। গত ২৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষা উপদেষ্টা এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) প্রতিনিধিদল যে পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করেছেন, তাতে শিক্ষকেরা উপেক্ষিত ও মর্মাহত হয়েছেন এবং এর তীব্র নিন্দা জানান তাঁরা।

অধ্যাপক ফারুক হোসেন আরও বলেন, ‘গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি এবং শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করে শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরানোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় শিক্ষকেরা সব প্রকার প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখবেন।’

ফারুক হোসেন আরও বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত কুয়েটের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সংঘঠিত সব ধরনের সাইবার বুলিং, সামাজিক অবমাননা এবং মানসিক নির্যাতনের ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কুয়েট নিয়ে অপপ্রচারে লিপ্ত সব পেজ, গ্রুপ ও ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে সেগুলো বন্ধসহ আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়ারও দাবি জানান তিনি।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, শিক্ষকেরা প্রশাসনের একটি অংশ হিসেবে কাজ করেন। প্রশাসন যদি এই সময়ের মধ্যে শিক্ষকদের দাবি বাস্তবায়নে গড়িমসি করে বা ব্যর্থ হয়, তাহলে শিক্ষকেরা আর প্রশাসনিক কাজে কোনো সহযোগিতা করবেন না।

অন্যদিকে, আজ বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের মাধ্যমে শিক্ষকদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চেয়ে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। পরে পরিস্থিতির অবনতি হলে ২৫ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেটের আরেকটি সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। গত ৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় আবার গতকাল থেকে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ১৮ এপ্রিল কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় শিক্ষকদের লাঞ্ছিতকারীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকেরা ক্লাসে না ফেরার সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। ওই সভায় অধ্যাপক আবদুল্লা আল ফারুককে সভাপতি করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়, যাঁরা শিক্ষক লাঞ্ছনা ও সাইবার বুলিংয়ের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে প্রতিবেদন তৈরি করবেন।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরদিন শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। ওই দিন দুপুরে সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে ১৩ এপ্রিল থেকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন এবং একপর্যায়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন। ওই আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। গত ১ মে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হযরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.