পটুয়াখালীর কুয়াকাটা-সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে এফবি আল্লাহর দয়া-১ নামের একটি ট্রলার থেকে ফেলা জালে ১৩০ মণ ইলিশ ধরা পড়েছে। গত নভেম্বরে বড় ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর এটি জালে ধরা পড়া সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ইলিশ।
গত বৃহস্পতিবার রাতে কুয়াকাটা থেকে ৬০ কিলোমিটার গভীর সমুদ্রে এসব মাছ ধরা পড়ে বলে এফবি আল্লাহর দয়া-১ ট্রলারের মালিক সূর্য মাঝি জানান। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে এসব মাছ আলীপুর সরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এনে বিক্রির জন্য তোলা হয়। সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, ইলিশগুলো বিক্রির জন্য নিলামে তোলা হয়েছে। ডাকের মাধ্যমে অন্তত ৪০ লাখ টাকায় ইলিশগুলো বিক্রি করতে পারবেন বলে সূর্য মাঝি আশা করছেন।
সূর্য মাঝি বলেন, আল্লাহর দয়া-১ নামে তাঁর ট্রলারটি চট্টগ্রামের বাঁশখালী এলাকার। গত বুধবার আলীপুর মৎস্য বন্দর থেকে ১৭ জন জেলেসহ মাছ ধরার জন্য তাঁরা বঙ্গোপসাগরে যান। বৃহস্পতিবার বিকেলে মাছ ধরার জন্য তাঁরা সাগরে জাল ফেলেন। রাত গভীর হওয়ার পর জাল তুললে দেখেন, প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে তাঁর জালে।
হঠাৎ এত পরিমাণে ইলিশ ধরার পড়ার কারণ কী জানতে চাইলে সূর্য মাঝি বলেন, ‘আমরাও বুইজা পাইনি। মনে হইছে, যেই হানে জাল ফেলাইছি, হেই হানে ইলিশের বিরাট চাক ছিল। হেই চাকটাই আটকা পড়ছে আমার জালে। সাগরে নাইম্যা প্রথম খেওয়ে জাল ভর্তি মাছ পাইছি। এর আগে আমার জালে এত বেশি পরিমাণ মাছ আর ধরা পড়েনি। আমরা আল্লাহর কাছে এ জন্য শুকরিয়া করি। এত পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়েছিল, টেনে তুলতে পারছিলাম না। একপর্যায়ে অর্ধেক জাল কেটে দিতে হয়েছে। তাতে কম করে হলেও ১০০ মণ মাছ ছিল।’
এর আগে গতকাল শুক্রবার দুপুরে এফবি তামান্না ট্রলারে ৭৮ মণ ও এফবি রাইসা ট্রলারে ৬০ মণ ইলিশ নিয়ে আলীপুর মৎস্য বন্দরের ঘাটে আসে। এ ট্রলার দুটির মালিক আলীপুর বন্দরের ইউসুফ হাওলাদার। তিনি বলেন, দুটি ট্রলারের ১৩৮ মণ ইলিশ মাছ ৪২ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন।
ইউনুস মিয়া বলেন, ‘এবার সাগরে ইলিশের চাপ বেশি মনে হইতেছে। তবে ইলিশের জালে কাঁকড়া প্যাঁচাইয়া পড়ার কারণে আমাগো বেকায়দায় পড়তে হইতেছে। কাঁকড়া জালে প্যাঁচাইয়া যাওনে জাল ছিঁড়্যা যায়। যার কারণে দুই দিন সাগরে জাল বাইয়াই আবার ঘাটে ফিররা আইতে হইছে। অ্যাহন জাল ঠিক করতে হইবে, হেরপর আবার সাগরে নামমু।’
কলাপাড়া উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদী-সাগরে ইলিশ রক্ষায় মৎস্য বিভাগ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এত পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়া সেসব কার্যক্রমের ফসল। বৃষ্টি শুরু হলে জেলেদের জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশা করছি।’
মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সমুদ্রে মাছ ধরা নিষেধ। এ ছাড়া ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৮ মাস জাটকা ধরা নিষেধ। তবে এ সময় বড় ইলিশ ধরা যাবে। অপর দিকে পূর্ণিমার ওপর নির্ভর করে আশ্বিন-কার্তিক মাসে সরকার ঘোষিত ২২ দিন পর্যন্ত মা-ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।