১৫ ব্যাংকে ৩৪ হাজার কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি

0
164

গত জুন শেষে ১৫টি ব্যাংকে প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি হয়েছে। ঋণ আদায়ে বিভিন্ন শিথিলতার মধ্যেও অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ। এর প্রভাবে বেড়েছে মূলধন ঘাটতিও।  ঘাটতির তালিকায় নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে চারটি ব্যাংক। অবশ্য বিভিন্ন ছাড় দিয়ে পুনঃতপশিল, আদায় না করেও নিয়মিত দেখানোর সুযোগসহ বিভিন্ন শিথিলতার মাধ্যমে প্রকৃত চিত্র আড়াল করা হচ্ছে। তা না হলে মূলধন পরিস্থিতি আরও খারাপ হতো বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

ঋণের শ্রেণিমান বিবেচনায় প্রতিটি ব্যাংকের নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণ করতে হয়। প্রভিশন ঘাটতি বাড়লে স্বাভাবিকভাবে মূলধন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বাড়ে। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে গত জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা। গত জুন পর্যন্ত বিতরণ হওয়া ১৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকার, যা ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। তিন মাস আগে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। মোট ঋণের যা ছিল ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। এর মানে তিন মাসেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৩ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা। এর বাইরে অবলোপন ও পুনঃতপশিলের পর আদায় না হওয়া ঋণ রয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। এই ঋণকেও দুর্দশাগ্রস্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং পদ্ধতি ব্যাসেল-৩ নীতিমালার আলোকে একটি ব্যাংকের মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ অথবা ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে যা বেশি, ন্যূনতম সেই পরিমাণ মূলধন রাখতে হয়। এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে প্রতিটি ব্যাংককে আপৎকালীন সুরক্ষা সঞ্চয় হিসেবে অতিরিক্ত আড়াই শতাংশ হারে মূলধন রাখার নির্দেশনা রয়েছে। তবে নিয়ম মেনে ১৫টি ব্যাংক গত জুন শেষে মূলধন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। অনেক ব্যাংক আবার প্রয়োজনের তুলনায় বেশি মূলধন রেখেছে।

কোন ব্যাংকের কত ঘাটতি
আগে থেকেই সরকারি-বেসরকারি খাতের ১১টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে ছিল। নতুনভাবে  যুক্ত হওয়া বেসরকারি খাতের সিটিজেন ব্যাংকের ঘাটতি ৯৭ কোটি এবং বেঙ্গল ব্যাংকের ৮৮ কোটি টাকা। আর বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের ৪২ কোটি এবং হাবিব ব্যাংকের ৩৬ কোটি টাকা ঘাটতি।
বরাবরের মতো সবচেয়ে বেশি ঘাটতি রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের। গত জুন শেষে ব্যাংকটির ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। সরকারি ব্যাংকের মধ্যে পর্যায়ক্রমে অগ্রণীর ৩ হাজার ৭৬৮ কোটি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ২ হাজার ৩৮৬ কোটি, রূপালীর ২ হাজার ২৩০ কোটি, জনতার ২ হাজার ১৮৯ কোটি এবং সোনালী ব্যাংকের ঘাটতি ১১ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে– আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকে ১ হাজার ৮১২ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকের ১ হাজার ৩৮০ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ১ হাজার ৩১৪ কোটি ও পদ্মা ব্যাংকের ৮৯৭ কোটি টাকা ঘাটতি। সব মিলিয়ে ১৫ ব্যাংকের ঘাটতি ৩৩ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ব্যাংক খাতে মূলধন রাখার কথা ১ লাখ ৪৫ হাজার ৪৬ কোটি টাকা। তবে সামগ্রিক ব্যাংক খাত রাখতে পেরেছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। এর মানে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন ছিল ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ। এর মানে আপৎকালীন সুরক্ষা হিসেবে অতিরিক্ত আড়াই শতাংশ বিবেচনায় নিলে বেশির ভাগ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি রয়েছে।

আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্তের আলোকে সর্বশেষ ২০২২ সালের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিবেদনে বলা হয়, খেলাপি ঋণ ৩ শতাংশ বাড়লে মূলধন ঘাটতিতে পড়বে আরও ২১টি ব্যাংক। আর শীর্ষ তিনজন করে গ্রাহক খেলাপি হলে চারটি ব্যাংক নতুন করে মূলধন ঘাটতিতে পড়বে। আর যদি খেলাপি ঋণ ৩ শতাংশ বাড়ে এবং একই সময়ে শীর্ষ তিনজন ঋণগ্রহীতা খেলাপি হন তখন বেশির ভাগ ব্যাংক ন্যূনতম মূলধন রাখতে পারবে না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.