‘পুষ্পা ২’ মুক্তি পায় গত বছরের ৫ ডিসেম্বর। মুক্তির পরেই দেশ–বিদেশে ঝড় তোলে সিনেমাটি। এখন পর্যন্ত সিনেমাটি দেশ ও দেশের বাইরে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি রুপির ব্যবসা করেছে। মুক্তির এক মাস পরে বাড়তি কিছু দৃশ্য যোগ করে নতুনভাবে হলে মুক্তি পেয়েছিল সুকুমারের সিনেমাটি।
এক নজরে
সিনেমা: ‘পুষ্পা ২: দ্য রুল রিলোডেড ভার্সন’
জনরা: অ্যাকশন থ্রিলার
পরিচালক: সুকুমার
দৈর্ঘ্য: ৩ ঘণ্টা ৪৪ মিনিট
অভিনয়: আল্লু অর্জুন, রাশমিকা মান্দানা, ফাহাদ ফাসিল
বাড়তি ২৪ মিনিট যোগ করে ‘পুষ্পা ২’–এর রিলোডেড ভার্সন গত ৩০ জানুয়ারি মুক্তি পেয়েছে নেটফ্লিক্সে। ফলে সিনেমার দৈর্ঘ্য দাঁড়িয়েছে ৩ ঘণ্টা ৪৪ মিনিটে! এটি এখন ভারতের সবচেয়ে বড় দৈর্ঘ্যের সিনেমার একটি। প্রায় চার ঘণ্টার সিনেমাটি বাংলাদেশ থেকেও নেটফ্লিক্স ওয়াচলিস্টের সিনেমার তালিকার শীর্ষে রয়েছে। কিন্তু কী আছে এই বাড়তি ২৪ মিনিটে?
এর আগে নেটফ্লিক্সে এক্সটেন্ডেড কাটসহ মুক্তি পেয়েছিল শাহরুখ খানের ‘জাওয়ান’, রণবীর কাপুরের ‘অ্যানিম্যাল’। তবে এসব সিনেমার অতিরিক্ত দৃশ্য হতাশ করেছিল দর্শকদের। অপ্রয়োজনীয় দৃশ্য সংযোজন কিংবা শুধু সহিংসতার দৃশ্য যুক্ত করা এই অতিরিক্ত সময়ে দর্শকেরা বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন। তবে ‘পুষ্পা ২’–এর এই রিলোডেড ভার্সনে কি নতুন কিছু দেখতে পান দর্শকেরা? নাকি হতাশ হতে হয় তাঁদের?
![‘পুষ্পা ২’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি](https://media.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2024-12-05%2Fuiml557j%2F1732871356peelings.jpg?w=640&auto=format%2Ccompress&fmt=avif)
‘পুষ্পা’র গল্প যেখান থেকে শেষ হয়েছিল, ‘পুষ্পা ২’–এর গল্প সেখান থেকেই শুরু হয়। পরিচালক সুকুমার আগের পর্বের সব ধামাকা যেন কয়েক গুণ করে ফেরত দিয়েছেন এই সিনেমায়। আকাশ, পাহাড়, সমুদ্র—গল্পের প্লটে কোনো জায়গা ছাড় পায়নি। বরং নতুনরূপে তুলে ধরেছেন মাইথোলজি, যেটা হয়ে উঠেছে ‘পুষ্পা ২’ সিনেমার গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যে। পুষ্পাকে উপস্থাপন করেছেন এমনভাবে, যেন সে নেতিবাচক চরিত্র হলেও সে যেন আলাদা। আবার সবার প্রিয়।
‘পুষ্পা ২’-এর শুরুতে দেখা যায় কনটেইনারের ভেতরে করে পুষ্পা জাপান গিয়ে পৌঁছায়। সেখানে জাপানি ভাষায় কথা বলে তাক লাগিয়ে দেয় পুষ্পা। সোশ্যাল মিডিয়াজুড়ে ভেসে বেড়াতে থাকে পুষ্পার বলা ‘৩০ দিনে জাপানি শিখুন’ মিমটি। জাপানে গিয়ে পুষ্পা বলে, সে তাঁর ভাগের টাকা নিতে সেখানে এসেছে। তবে পুষ্পার এ হঠাৎ আগমনকে ঠিকমতো নেয় না জাপানের মাফিয়ারা। তারা আক্রমণ করে পুষ্পাকে। গুলি লাগে পুষ্পার গায়ে। সেই গুলি খেয়ে সমুদ্রের পানিতে পড়ে যায় পুষ্পা।
সিনেমা এগোতে থাকলে দেখা যায়, সিদ্দাপ্পাকে নতুন মুখ্যমন্ত্রী বানাতে চায়। এ জন্য পুষ্পা আরও দাম দিয়ে চন্দন কাঠ কিনবে এমন ডিলার খুঁজতে থাকে। এ জন্য সে মালদ্বীপ যায়। ডিল করে সেখানকার মাফিয়া হামিদের সঙ্গে। সিনেমার বাকি অংশে পুষ্পার জাপান কেন যায়, তা নিয়ে কিছু আর জানা যায় না।
![‘পুষ্পা ২’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি](https://media.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2024-12-16%2F96vyjyfy%2Fpushpa_2.webp?w=640&auto=format%2Ccompress&fmt=avif)
যাঁরা প্রথম দিকে হলে গিয়ে সিনেমা দেখেছেন, তাঁরা অনেকেই মনে করেন, পরিচালক সুকুমার হয়তো ‘পুষ্পা’র তৃতীয় সিকুয়েলের জন্য কিছু দৃশ্য আগেই শুটিং করে রেখেছেন। নয়তো এটা ‘পুষ্পা’র দেখা নিছক কোনো দুঃস্বপ্ন। তবে ট্রেলারে জাপানের কিছু দৃশ্য দেখানো হয়, যা সিনেমায় আগে দেখানো হয়নি। বিষয়টি নিয়ে ভক্তদের মধ্যে নানা আলোচনা-সমালোচনা হয়। তবে নতুন সংস্করণে সেসব প্রশ্নের উত্তর মিলেছে।
অতিরিক্ত ২৪ মিনিটে পুষ্পা কেন জাপানে গিয়েছিল, সে প্রশ্নের উত্তর তো মেলেই; এ ছাড়া নির্মাতা এখানে ধাঁধার আরও কিছু টুকরোও মিলিয়ে দিয়েছেন। এখানে পুষ্পার পুরোনো শত্রুদের দেখা যায় আবারও। ‘পুষ্পা ৩’ কেমন হতে চলেছে, সে ইঙ্গিতও ভালোভাবে পাওয়া যায়।
‘পুষ্পা ২’কে প্রথা ভাঙার সিনেমা বললেও ভুল বলা হবে না। নায়কের চরিত্রকে শক্তিশালী বা ‘আলফা মেইল’ হিসেবে দেখাতে গিয়ে যেখানে নারীকে ছোট করা হচ্ছে, সেখানে ‘পুষ্পা ২’-তে দেখা যায় এক ভিন্ন চিত্র। পুষ্পা নারীদের সম্মান করে। স্ত্রীর চাওয়াকে প্রাধান্য দেয়। অনাগত সন্তানকে সে বংশের নাম দিতে পারবে না দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে। পরিবার তাঁর কাছে স্থান পায় সবার আগে।
তবে ‘পুষ্পা’ সিনেমার সবচেয়ে আইকনিক সিন শাড়ি পরে পুষ্পার নাচ। এখানে পুষ্পাকে যেভাবে মাইথোলজির একটি চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, পরিচালক সুকুমার সে জন্য প্রশংসার দাবিদার। আবার শেষ দিকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ‘পুষ্পা’র মারামারির দৃশ্যের প্রশংসাও আলাদাভাবে করতেই হবে।
![‘পুষ্পা ২’ সিনেমায় রাশমিকা মান্দানা ও আল্লু অর্জুন। এক্স থেকে](https://media.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2024-12-05%2F29pqtocl%2FPushpa2TheRulereview21733348849370.jpg?w=640&auto=format%2Ccompress&fmt=avif)
দীর্ঘ সময়ের এই সিনেমা যেন বানানো হয়েছে উপভোগ করার জন্যই। দেখতে গিয়ে আলাদা করে কিছু ভাবতে হয় না। পুরো সিনেমায় ভরপুর অ্যাকশন, থ্রিল, কমেডি, রোমান্স, আর নাচ-গান। তবে যুক্তির চিন্তা করলে অনেক দৃশ্যই হয়তো আপনার মনে খটকা জাগাবে। তবে পরিচালকের উপস্থাপনা, সিনেমাটোগ্রাফি, আর আল্লু অর্জুনের দুর্দান্ত অভিনয় দেখে সেসব ভাবার সুযোগ পাবেন না মোটেও।
পৃথা পারমিতা নাগ
ঢাকা