খাতুনগঞ্জে আমদানির অর্ধেক পেঁয়াজই নষ্ট

0
112
আড়তে পেঁয়াজ নামানোর পর বস্তা বস্তা নষ্ট পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, যেগুলো আলাদা করে রাখা হচ্ছে

আপাতত পেঁয়াজের সংকট কাটলেও এখন নতুন আপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে নষ্ট ও পচা পেঁয়াজ। দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি মোকাম চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের ৫০ শতাংশের বেশি মিলছে পচা। মোকাম এখন নষ্ট পেঁয়াজে সয়লাব। যে কারণে এ পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জের মোকামে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৫ থেকে ২০ টাকায়। মান ভালো না হওয়ায় নষ্ট পেঁয়াজের ক্রেতাও মিলছে না।  ফলে পেঁয়াজের একটি বড় অংশ ফেলে দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বৃহৎ এই বাজারের ব্যবসায়ীরা। এ জন্য বড় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা তাঁদের।

পেঁয়াজের দাম শতক হাঁকানোর পর প্রায় আড়াই মাস পর গত ৫ জুন ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। অনুমতির পর বেনাপোল স্থলবন্দর, সোনামসজিদ স্থলবন্দর এবং ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন শত শত পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক আসতে থাকে খাতুনগঞ্জে। বৃহৎ এই পাইকারি মোকামের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে খাতুনগঞ্জে প্রতিদিনই ৭০ থেকে ৮০ ট্রাক ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ঢুকছে। তবে এর অর্ধেকের বেশি মিলছে পচা ও নষ্ট। আড়তে পেঁয়াজ নামানোর পর বস্তা বস্তা নষ্ট পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। যেগুলো আলাদা করে রাখা হচ্ছে আড়তে। কিছু পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, যা একেবারে বিক্রির অনুপযুক্ত।

খাতুনগঞ্জের কাঁচা পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান কাজী স্টোরের স্বত্বাধিকারী জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘আগের মতো ভারত থেকে ভালো মানের পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। বর্তমানে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের অর্ধেকের বেশি পাওয়া যাচ্ছে নষ্ট ও পচা। এক ট্রাক পেঁয়াজ থেকে বেশ কয়েক বস্তা একেবারে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ফেলে দিতে বাধ্য হতে হচ্ছে। এতে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে খাতুনগঞ্জের অনেককে। এ বিষয়ে সরকারের কঠোর নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।’

খাতুনগঞ্জের আরেক কাঁচা পণ্য বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী বোলাই কুমার পোদ্দার বলেন, ‘আমার মতো অনেকেই ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির খবরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন। কিন্তু এখন এসব পেঁয়াজ অনেকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ দেখা যাচ্ছে, আড়তে আসা ৫০ বস্তার মধ্যে ২৫ বস্তার বেশি নষ্ট হয়ে গেছে। এর কিছু পেঁয়াজের শেকড় বেরিয়ে গেছে। কিছু পেঁয়াজের রং হয়ে গেছে কালো; উঠে গেছে আবরণও। বাড়তি ক্ষতির আশঙ্কায় তাই নষ্ট-পচা পেঁয়াজ একেবারে কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এসব পেঁয়াজের ক্রেতাও মিলছে না।’

হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক সুমন চৌধুরী বলেন, পেঁয়াজের আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে– এমন খবরে অতি উৎসাহী হয়ে তখন থেকেই বাড়তি পেঁয়াজ ট্রাকে লোড করে বর্ডারে এনে রাখে অনেকেই। কিন্তু অনেক দেরিতে অনুমতি দেওয়ায় ও সেসব পেঁয়াজ টানা অনেকদিন ট্রাকে পড়ে থাকা অবস্থায় বৃষ্টিতে ভিজে ও রোদে শুকানোর কারণে বেশিরভাগ পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জের মোকামে যাওয়ার আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া ভারত থেকে এবার তেমন ভালো মানের পেঁয়াজও আসছে না।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের ভালো ও খারাপ– এই দুই ভাগে ভাগ করে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। আমদানি করা পেঁয়াজ টানা অনেকদিন ট্রাকে পড়ে থাকায় এমন অবস্থা হয়েছে।

ক্যাবের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ভারত থেকে ভালো মানের পেঁয়াজ দেশে আমদানির বিষয়টি নিশ্চিত করতে বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়কেই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। না হয় এতে ভোক্তারা ঠকবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.