ইরানের কারাবন্দী মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদির পক্ষে তাঁর দুই সন্তানের হাতে নোবেল শান্তি পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার নরওয়ের অসলোতে এক অনুষ্ঠানে এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। ইরানে নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ৫১ বছর বয়সী নার্গিস।
নোবেল প্রদান অনুষ্ঠানে কারাবন্দী মায়ের লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনায় নার্গিসের ১৭ বছর বয়সী দুই যমজ সন্তান কিয়ানা রহমানি ও আলী রহমানি। ইরানের কুখ্যাত এভিন কারাগার থেকে নার্গিসের লেখা ওই বক্তব্যে বলা হয়, কারাগারের চরম পরিবেশ থেকে তিনি কথাগুলো তুলে ধরেছেন। তাঁর মতো ইরানের অনেক মানবাধিকারকর্মী বেঁচে থাকার জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। জনসমর্থন ও বৈধতা হারানো ইরান সরকার দেশটিতে যে কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়েছে, তা পরাস্ত করবে ইরানের জনগণ।
২০১০ সাল থেকে কারাগারে কাটছে নার্গিসের দিন। বন্দিদশা থেকেই তিনি নারীদের ওপর নিপীড়নের বিষয়টি সামনে আনার লড়াই চালিয়ে গেছেন। এখন পর্যন্ত ১৩ বার গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি। পাঁচবার দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাঁর ৩১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গত অক্টোবরে নোবেল পুরস্কার ঘোষণার সময় নার্গিসকে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন নোবেল কমিটির প্রধান।
নার্গিসকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হলো ইরানি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুর এক বছর পর। পোশাকবিধি না মানার অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর ইরানের নীতি পুলিশের হেফাজতে মৃত্যু হয় তাঁর। এ ঘটনায় ইরানজুড়ে তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়। ওই বিক্ষোভ পশ্চিমাদের ছড়ির ইশারায় হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিল ইরান সরকার। এমনকি নোবেল কমিটির বিরুদ্ধে মানবাধিকার নিয়ে রাজনীতি করার অভিযোগও আনা হয়।
মাসা আমিনির মৃত্যু ঘিরে বিক্ষোভ ইরান সরকারের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধের পরিসর বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন নার্গিস মোহাম্মাদি। আজ অসলোতে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ইরানের নাগরিক সমাজের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক নাগরিক সমাজের কাছে এটিই উপযুক্ত সময়। এ কাজে আমি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাব।’
২০০৩ সালে শান্তিতে নোবেলজয়ী শিরিন এবাদির ডিফেন্ডারস অব হিউম্যান রাইটস সেন্টারে ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে রয়েছেন নার্গিস। নার্গিসকে নিয়ে এ পর্যন্ত ১৯ নারী নোবেল পুরস্কার পেলেন। আর নার্গিস পঞ্চম নোবেল বিজয়ী, যিনি কারাগারে বসে এ পুরস্কার পেলেন।