দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ক্রমে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। চলমান কারফিউ আরও শিথিল করেছে সরকার। মহাসড়কগুলোতে যান চলাচল শুরু হয়েছে। টানা তিনদিন সাধারণ ছুটির পর আজ বুধবার (২৪ জুলাই) থেকে চালু হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি সব অফিস। এদিন বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত অফিসগুলোর সার্বিক কার্যক্রম চলবে।
এ ছাড়া পরীক্ষামূলকভাবে সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
গত সপ্তাহে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারাদেশে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনায় গতকাল পর্যন্ত ১৯৭ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিজিবি নামানো হয়। একপর্যায়ে সরকার গত শুক্রবার রাত ১২টা থেকে সারাদেশে কারফিউ জারি করে। একই দিনে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়। এখনো বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। প্রথম দিন দুই ঘণ্টা বিরতি দিয়ে কারফিউ চলে। পরদিন তিন ঘণ্টা বিরতি দেওয়া হয়। গতকাল ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জে চার ঘণ্টা বিরতি দেওয়া হয়। যদিও সারাদেশে জেলাভেদে এই বিরতি কম-বেশি আছে।
ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীত বুধবার এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) কারফিউ বহাল থাকবে। তবে আজ সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সাত ঘণ্টা কারফিউ শিথিল থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ ছাড়া বাকি জেলাগুলোতে সিদ্ধান্ত নেবে জেলা প্রশাসন।
অফিস চলবে ৪ ঘণ্টা
কারফিউ জারি হওয়ায় গত রোববার থেকে গতকাল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি দিয়েছিল সরকার; কিন্তু কারফিউ শিথিল হওয়ার পর আজ থেকে সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলোও খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে স্বাভাবিক সময়ের মতো অফিস চলবে না। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গতকাল প্রজ্ঞাপন জারি করে জানায়, আজ ও আগামীকাল সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিসের জন্য বেলা ১১টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত অফিস সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে জরুরি পরিষেবা যেমন বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস ও বন্দরগুলোর কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা, টেলিফোন, ইন্টারনেট, ডাকসেবা এবং এ-সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীরা এই সময়সূচির আওতার বাইরে থাকবেন। এ ছাড়া হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এই সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মী, চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও কর্মী, ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম বহনকারী যানবাহন ও কর্মীরা এই সময়সূচির আওতার বাইরে থাকবেন।
জরুরি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত অফিসগুলো এই সময়সূচির আওতার বাইরে থাকবে, যা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে। এর মানে হলো জরুরি সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস ও কর্মীরা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী চলবেন।
কারফিউ আরও শিথিল
চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কারফিউ অব্যাহত থাকছে। তবে ঢাকাসহ চার জেলায় আজ সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে।
এর আগে, গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে কারফিউ জারি করে সরকার। একই সঙ্গে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। প্রথম দফায় শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত কারফিউ চলে। মাঝে দুই ঘণ্টা বিরতি দিয়ে শনিবার দুপুর ২টা থেকে আবার কারফিউ শুরু হয়। রোববার বিকেল ৩টা পর্যন্ত কারফিউ চলে। মাঝে দুই ঘণ্টা কারফিউ শিথিল করা হয়। গত সোমবারও তিন ঘণ্টা বিরতি দিয়ে কারফিউ বলবৎ ছিল। গতকালও ছিল কারফিউ।
ব্যাংক চলবে সীমিত পরিসরে
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট এবং ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আলাদা নির্দেশনা দেবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গতকালই ব্যাংকগুলোর কাছে পাঠানো নির্দেশনায় বলেছে, যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সব ব্যাংকের কিছু শাখা বেলা ১১টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকবে ও সীমিত আকারে সেবা প্রদান করবে। এ সিদ্ধান্ত কেবল আজ ও আগামীকালের জন্য। ব্যাংকগুলো নিজেরা নির্ধারণ করবে কোন কোন শাখা খোলা রাখবে।