আগের দিন অনুশীলনের জন্য হোটেল থেকেই বের হতে পারেনি দল। আর আজ দেশের বিমান ধরার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায় ফ্লাইট। গত দুই দিন কাঠমান্ডুর টিম হোটেলে একপ্রকার বন্দি হয়েই আছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ফুটবলাররা। সময় পার হচ্ছে উদ্বেগ–উৎকণ্ঠায়।
এশিয়ান কাপ বাছাই সামনে রেখে ৩ সেপ্টেম্বর নেপালে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলতে যায় বাংলাদেশ দল। ৬ সেপ্টেম্বর স্বাগতিক নেপালের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়। পরের ম্যাচটি হওয়ার কথা ছিল আজ। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের প্রতিবাদে পরশু নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে শুরু হয় তরুণদের আন্দোলন। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে অন্তত ১৯ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আজও কারফিউ উপেক্ষা করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করেন তরুণেরা। বিক্ষোভের মুখে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান কে পি শর্মা অলি।
এর আগে পরশু রাতে বাংলাদেশ–নেপাল দ্বিতীয় প্রীতি ম্যাচটি স্থগিত করা হয়। এর পর থেকেই শুরু হয় খেলোয়াড়দের দেশে ফেরার অপেক্ষা। তবে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সব ফ্লাইট বাতিল করায় আজ দেশে ফিরতে পারেননি তাঁরা। দল সূত্রে জানা গেছে, ফ্লাইট চালু হলে আজ বাংলাদেশ দল ঢাকায় ফিরতে পারে।

কাঠমান্ডুর ক্রাউন ইম্পেরিয়াল হোটেলে এখন আতঙ্ক আর ভয় নিয়েই সময় কাটছে ফুটবলারদের। আজ দুপুরে আন্দোলনকারীরা টিম হোটেলের গেটও ভাঙচুর করেন, ঢোকার চেষ্টা করেন হোটেলের ভেতরে। লবিতে দাঁড়িয়ে তা দেখে ভয় পেয়ে যান জাতীয় দলের স্ট্রাইকার সুমন রেজা। নেপাল থেকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে সুমন বলেছেন, ‘দুপুরের দিকে আন্দোলনকারীরা টিম হোটেলের গেট ভাঙচুরের চেষ্টা করে। কয়েকজন ভেতরে ঢোকারও চেষ্টা করে। হোটেল কর্তৃপক্ষ নানাভাবে বোঝালে তারা চলে যায়। এসব দেখে খুব ভয় লেগেছিল।’
রাইট উইঙ্গার শাহরিয়ার ইমনের কথা, ‘আমরা ভালো আছি, তবে টেনশন কাজ করছে। বাইরের অবস্থা ভালো নয়। এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে যেতে পারলেই হয়।’ একই চাওয়া ডিফেন্ডার তাজ উদ্দিনেরও, ‘এই পরিস্থিতিতে এখানে থাকাটাই চিন্তার বিষয়।’

দেশে অন্যদের মতোই দুশ্চিন্তায় আছেন গোলকিপার সুজন হোসেনের মা–বাবা। ছেলে নেপালে আটকা। বারবার ফোন করে তাঁর খবর নিচ্ছেন, জানতে চাচ্ছেন কীভাবে দেশে ফিরবেন তাঁরা। সুজন এই প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে অনেকটা ভালো। তবে মা–বাবা একটু চিন্তায় আছেন। মা দেশ থেকে বারবার ফোন দিচ্ছেন। আমি বলেছি চিন্তা করার কিছু নেই। আমরা ভালো আছি।’
জাতীয় দলের অভিজ্ঞ ফুটবলার ইসা ফয়সাল আজ দিনভর আন্দোলনের খবর শুনেই পার করেছেন। হোটেলের পাশে এক সংসদ সদস্যের বাসভবন। ভাঙচুর হয়েছে সেখানেও। এই লেফটব্যাকের কাছ থেকে পাওয়া গেল সেই বর্ণনা, ‘সারা দিন আমাদের হোটেলের পাশে বিক্ষোভ ও অগ্নিসংযোগ করেছে আন্দোলনকারীরা। পরে শুনলাম হোটেলের পাশে এক এমপির বাসা। সে কারণে নাকি এতটা উত্তপ্ত পরিস্থিতি।’
এবারের নেপাল সফরেই প্রথম জাতীয় দলে ডাক পান আবদুল্লাহ ওমর। কিন্তু খেলতে এসে যা দেখলেন, সেটা তাঁর কল্পনারও অতীত, ‘কল্পনায়ও ছিল না খেলতে এসে এমন কিছু দেখতে হবে।’