কাটছে না ধোঁয়াশা থামছে না বিতর্ক

0
141
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন কিনা– সেই ধোঁয়াশা এখনও কাটেনি। চলছে আইনের নানা ব্যাখ্যা আর যুক্তিতর্ক। চার জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীর স্ববিরোধী বক্তব্য নিয়ে বেশ সরব রাজনৈতিক মঞ্চ। সপ্তাহজুড়ে চলা এই বিতর্ক যেন থামছেই না। দু’দিন আগে খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন না বললেও এবার আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কণ্ঠে ভিন্ন সুর। গতকাল সোমবার তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন কিনা, সে সিদ্ধান্ত আদালতের। তাঁর আগের বক্তব্যে রাজনীতি করতে না পারার কথা দৃঢ়ভাবে বললেও এখন আদালতের ওপর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও আইনজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, হঠাৎ বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রীদের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্যের পেছনে অন্য ‘রাজনীতি’ থাকতে পারে, যা তাঁরা সরাসরি বলতে পারছেন না।

তবে দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পাঁচ বছর পর হঠাৎ খালেদা জিয়ার রাজনীতি করা নিয়ে মন্ত্রীদের বক্তব্য আমলে নিচ্ছে না বিএনপি। বিষয়টিকে দলটি সন্দেহের চোখে দেখছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, এর পেছনে কোনো দুরভিসন্ধি থাকতে পারে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়ার রাজনীতি করা নিয়ে হঠাৎ তাঁরা উতলা হয়ে উঠলেন কেন? একই সঙ্গে তিনি তাঁর মুক্তি দাবি করে বলেছেন, সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হওয়ার পরই খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে ফেরার প্রসঙ্গ আসবে। আগে মুক্তি, তার পর অন্যকিছু। এই ইস্যু প্রথম সামনে আনেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি বলেন, খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে বাধা নেই, তবে নির্বাচন করতে পারবেন না। তাঁর সঙ্গে সুর মিলিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকও একই কথা বলেন। দু’দিন পর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন না। তাঁর সঙ্গে একমত পোষণ করে বক্তব্য দেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদও। মন্ত্রীদের এমন বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে কিছুটা নাটকীয়তা তৈরি হয়। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহ্দীন মালি বলেন, খালেদা জিয়া রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেবেন কিনা, এটা সম্পূর্ণ তাঁর সিদ্ধান্ত। তবে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় খালেদা জিয়ার যে সাজা স্থগিত করা হয়েছে, সেটার সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র এবং আইনি দিক বিশ্লেষণ করে তিনি পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এ প্রসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কৌঁসুলি জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার আইনি বাধা রয়েছে। কারণ তিনি একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। উনাকে রাজনীতি করতে হলে আদালত থেকে ওই মামলায় বেকসুর খালাস বা জামিন পেতে হবে। সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি রাজনীতি করতে পারবেন না। তিনি বলেন, অসুস্থতার কারণে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছে। খালেদা জিয়া যেখানে আছেন, ওটা একটা সাব-জেল। জেলকোড অনুযায়ী তাঁকে চলাফেরা করতে হবে। এখানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঠিক কথাই বলেছেন বলে মনে করেন তিনি। অন্যদিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের অন্যতম সদস্য ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন কী পারবেন না, সে সিদ্ধান্ত তাঁর। তিনি একজন অসুস্থ ব্যক্তি, তাঁকে নিয়ে সরকারের একাধিক মন্ত্রী প্রতিনিয়ত নানা ধরনের কথা ও মিথ্যাচার করছেন। এখানে সরকার ও আদালত খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একাকার হয়ে গেছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা প্যারোলে মুক্তি পেয়ে রাজনীতি করেছেন এবং সংসদ নির্বাচনও করেছেন। তিনি পারলে, খালেদা জিয়া কেন রাজনীতি করতে পারবেন না। এখন অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সরকার চাইলে খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন, না চাইলে পারবেন না। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করে আসছেন, রাজনীতি না করার মুচলেকা দিয়েই সাজা স্থগিত পেয়েছেন খালেদা জিয়া। ‘সাজা স্থগিতের জন্য খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন না বলে মুচলেকা দিয়েছেন’ বলে ২৬ জানুয়ারি সংসদে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বক্তব্য দিয়েছিলেন। তাঁর এই বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচিত হয়। এ বক্তব্যের পক্ষে-বিপক্ষে নানা বিতর্কও হয়। যদিও তাঁদের এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছেন বিএনপি নেতারা। দু’দলের নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যের মধ্যেই হঠাৎ জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীদের এমন বক্তব্যে রাজনীতিতে নতুন মাত্রা পেয়েছে। সরকারি কৌশলের কোনো পরিবর্তন হয়েছে কিনা, এমন জল্পনা-কল্পনাও শুরু হয়েছে। দেশি-বিদেশিদের কাছে নিজেদের গণতান্ত্রিক অবস্থান প্রমাণ করতেই এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপিসহ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হন। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মুক্তির পর থেকে তিনি গুলশানের ভাড়া বাড়িতেই অবস্থান করছেন। ওই সময় সরকারের নির্বাহী আদেশে প্রথমে ছয় মাসের জন্য শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। ‘দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর’-এর ধারা-৪০১ (১)-এ দেওয়া ক্ষমতাবলে তাঁর দণ্ডাদেশ স্থগিত করা হয়। এর পর প্রতি ছয় মাস পরপর তাঁর সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.