কাউন্সিলর প্রার্থীদের সংঘর্ষে বাড়ছে আতঙ্ক

0
157
রাজশাহী নগরের বিভিন্ন এলাকা ছেয়ে গেছে প্রার্থীদের পোস্টারে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারের শেষ মুহূর্তে এসে বাড়ছে উত্তেজনা। এরই মধ্যে কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাঁদের অনুসারীর মধ্যে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এতে ভোটার উপস্থিতি কমে যেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাষ্য, সহিংসতা এড়াতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে তারা। ১৫৫টির মধ্যে ১৪৮ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় নিয়ে সাড়ে ৩ হাজার পুলিশ ও ২৫০ র‍্যাব সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গত শনিবার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কাউন্সিলর প্রার্থী জহিরুল ইসলাম রুবেল পরস্পরের বিরুদ্ধে বোমা হামলার অভিযোগ করেন। মহানগর যুব মৈত্রীর সভাপতি মতিউরের অভিযোগ, রুবেলের নেতৃত্বে তাঁর মিছিলে বোমা হামলা করা হয়। অন্যদিকে রুবেল দাবি করেন, মতিউরের মিছিল থেকে তাঁর বাড়িতে বোমা হামলা হয়। এ ঘটনায় রুবেল অনুসারীদের নিয়ে ওই দিন সন্ধ্যার পর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে অবস্থান, পরে রাজপাড়া থানা ঘেরাও করেন। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেন প্রার্থীরা। রাজপাড়া থানার এসআই কাজল কুমার নন্দী জানান, দুই প্রার্থী পরস্পরের বিরুদ্ধে বোমা হামলার অভিযোগ দিলেও তদন্তে কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।

আগের দিন শুক্রবার ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও মতিহার থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দীন এবং আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী জামায়াত সমর্থিত শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের মহানগর শাখার সভাপতি আবদুস সামাদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। প্রার্থী আলাউদ্দীনও হামলার শিকার হন। পরে রাতেই দু’পক্ষ মতিহার থানায় মামলা করে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পোস্টার লাগানো নিয়ে ৩ জুন ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর তৌহিদুল হক সুমনের সঙ্গে আরেক প্রার্থী আশরাফ বাবুর সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় ছুরিকাঘাতে কাউন্সিলর প্রার্থী আশরাফ বাবু ও তাঁর দুই সমর্থক আহত হন। বাবু মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সুমন মহানগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। এখানে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর নুরুজ্জামান টিটো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

গত ১০ জুন ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আখতার আহমেদ বাচ্চুর নির্বাচনী ক্যাম্পে আগুন দেওয়ার অভিযোগ ওঠে আরেক প্রার্থী আকতারুজ্জামান কোয়েলের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। তবে কোয়েল তা অস্বীকার করেন।

কাউন্সিলর প্রার্থীর অনুসারীদের এসব সংঘর্ষের ঘটনায় ভোটাররা আতঙ্কিত। বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল অংশ না নেওয়ায় এমনিতেই ভোটার উপস্থিতি কম হবে ধারণা করা হচ্ছে। সংঘর্ষের ঘটনায় তা আরও জোরালো হচ্ছে।

রাজশাহী জেলা সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সভাপতি আহমেদ সফি উদ্দিন বলেন, নির্বাচন রাজনীতিকদের হাতে নেই। টাকাওয়ালা, মাদক কারবারি এমনকি ফৌজদারি মামলার আসামিরাও কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। তাঁরা নির্বাচনে জিততে পেশিশক্তি ব্যবহার করছেন, যা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বড় বাধা। সংঘর্ষের ঘটনায় ভোটারদের মধ্যে ভয় তৈরি হচ্ছে এবং ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি কমে যেতে পারে।

রাজশাহী র‍্যাব-৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার জানান, তাঁরাসহ অন্যান্য বাহিনী পুরোপুরি মাঠে নামলে নির্বাচনী পরিবেশে আরও উন্নত হবে।

মহানগর পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান শনিবার সংবাদ সম্মেলনে জানান, সব কেন্দ্রেই কঠোর নিরাপত্তা থাকবে। তবে ১৪৮টি কেন্দ্রে বাড়তি গুরুত্ব পাবে। এরই মধ্যে যেসব অভিযোগ এসেছে, পুলিশ গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছে। নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে পুলিশ সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতা দেখাবে বলে জানান তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.