কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ ঘিরে উত্তেজনার মধ্যে সীমান্তে ‘বাঙ্কার’ নির্মাণ করছে বিএসএফ

0
5
উত্তেজনার মধ্যে সীমান্তে ‘বাঙ্কার’ নির্মাণ করছে বিএসএফ

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতার বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা যেন থামার নাম নেই। গত কয়েকদিন ধরে চলমান উত্তেজনায় নতুন করে ঘি ঢেলেছে মালদার শুকদেবপুর সীমান্তে (চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত) বিএসএফের বাঙ্কার নির্মাণ। অন্যদিকে, বিজিবির বাধায় বিএসএফ ব্যর্থ হওয়ার পর কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ সীমান্তে ভারতীয় গ্রামবাসীরা একদিন নির্মাণ করেছেন দেড় কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া! যে ঘটনায় নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে মেখলিগঞ্জ সীমান্ত এলাকায়।

গত কয়েকদিন ধরেই তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে ভারতের মাহাদিপুর ও বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তবর্তী এলাকায়। গত সোমবার (৬ জানুয়ারি) ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) থ্রি-ফেজের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করতে গেলে শুরু হয় সমস্যার সূত্রপাত। বিতর্কিত ও বিবাদমান জমিতে বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করছে এমন অভিযোগে নির্মাণ কাজে বাধা দেয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। তবে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিবাদের মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়িয়ে গেলে পরিস্থিতি ঘোলাটে আকার ধারণ করে।

বিতর্কিত স্লোগান পাল্টা স্লোগান হাতে ধারালো অস্ত্র নিয়ে মুখোমুখি হয়ে পড়েন সীমান্তের দুই পাড়ের বাসিন্দারা। বড় বিপত্তি হওয়ার আগেই তাদের নিরস্ত্র করে দুই পারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। এরপর একাধিকবার পতাকা বৈঠকের পরেও অধরা সমাধাণসূত্র।

চলমান এই বিবাদের মধ্যেই শুক্রবার ফের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী সুকদেবপুর এলাকায় থ্রি-ফেজের কাঁটাতার বেড়া দেয়ার কাজ শুরু করে বিএসএফ। তবে উদ্বেগের বিষয়, সীমান্তের এই এলাকায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় গ্রামবাসীদের সহযোগিতা নিয়ে একাধিক বাঙ্কার তৈরি করেছে বিএসএফ। বিএসএফ সূত্রের খবর, সীমান্তে যেকোনো রকম উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন তারা। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ সীমান্তে গ্রামবাসীরা অবস্থান নেয়ায় পাল্টা হিসেবে শতাধিক ভারতীয়রা সুকদেবপুরের এই সীমান্ত এলাকায় লাঠি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে রীতিমতো অবস্থান নিয়েছে।

দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পতাকা বৈঠকের পর পরিস্থিতি আপাতভাবে শান্ত মনে হলেও সীমান্তের দুই পাড়ের গ্রামেই রয়েছে এখনও টানটান উত্তেজনা। এরমধ্যেই শুক্রবার বাখরাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের সুকদেবপুর সীমান্তবর্তী এলাকায় পরিদর্শন করেন বৈষ্ণবনগর বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল দলের বিধায়ক চন্দনা সরকার। শাসক দলের এই বিধায়ক দাবি করেন দুই দেশের যৌথ বোঝাপড়ার মাধ্যমেই সীমান্তেই বেড়া নির্মাণ করা হচ্ছিল। ইচ্ছাকৃতভাবে এমন সমস্যা তৈরি করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক কার্যকলাপ দেখে স্পষ্ট যে বিজিবি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক চায় না।

এদিকে, মালদা সীমান্তের উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণকে কেন্দ্র করে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জের কুচলিবাড়ি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায়। ঘটনা ঘিরে উত্তেজনা তিন বিঘা করিডরের দহগ্রামে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কোচবিহারের মেখলিগঞ্জের বাগডোগরা, ফুলতকাডাবরি, দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা এলাকার আন্তর্জাতিক সীমান্তের অরক্ষিত অংশে শুক্রবার সকাল থেকে কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার কাজ শুরু করে বিএসএফ। অভিযোগ, তখনই বিজিবি ও বাংলাদেশের নাগরিকরা এসে কাজে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে।

বিএসএফ বাধা পেয়ে সরে গেলেও সীমান্তবর্তী গ্রামবাসীদের দিয়ে অরক্ষিত অংশে কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার কাজ শুরু করে বিএসএফ। অভিযোগ, সেইসময় বিজিবি এবং বাংলাদেশের নাগরিকরা সীমান্তের কাছে চলে আসে। বেড়া দেয়ার কাজে বাধা দিতে থাকে। কিন্তু, আপত্তি উপেক্ষা করে বিএসএফ আধিকারিকরা কাজ চালিয়ে যেতে বলেন। সীমান্তে ঝামেলার খবর পেয়ে প্রচুর সংখ্যায় গ্রামবাসী সেখানে জমায়েত হয়। তারাও কাঁটাতারের বেড়া দিতে সাহায্য করে।

বিএসএফ সূত্রের খবর, ওই অঞ্চলে অরক্ষিত দেড়কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া লাগানো হয়েছে। এখনও দু’কিলোমিটার অঞ্চলে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া বাকি রয়েছে।

সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.