যেসব ব্যথা আমাদের বেশি পীড়া দেয়, তার মধ্যে কাঁধব্যথা বা ফ্রোজেন সোল্ডার সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক। এই রোগে স্বাভাবিক সময় যেমন হাত বিশ্রামে রাখলে বা আক্রান্ত হাত দিয়ে কোনো কাজ না করলে সাধারণত ব্যথা অনুভূত হয় না। কিন্তু ব্যথা হাত দিয়ে কিছু ধরতে গেলে কাঁধে বিদ্যুৎ চমকের মতো তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। অনেক রোগী রাতে ঘুমাতে পারেন না। আক্রান্ত ব্যক্তি পাশে ফিরলে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় এবং গভীর রাতে তীব্র ব্যথা শুরু হয়। একবার ব্যথা শুরু হলে আর থামতে চায় না। এমনকি ব্যথার ওষুধও কাজ করে না। রোগীরা গরম পানির সেঁক, মালিশ দিতে থাকেন। এসবেও কাজ হয় না।
ফ্রোজেন সোল্ডারের কারণ
ডায়াবেটিস রোগীদের এই ব্যথা সবচেয়ে বেশি হয়। ভারী কাজ করলে বা অন্য কোনো কারণে কাঁধে সামান্য আঘাত পেলে ধীরে ধীরে কাঁধ জমে যেতে থাকে। অনেক রোগী প্রাথমিক অবস্থায় ব্যথার ধরন বুঝতে পারেন না। ধীরে ধীরে এই ব্যথা তীব্র থেকে তীব্রতর আকার ধারণ করে। এক পর্যায়ে রোগী পেছনের দিকে হাত নিতে পারেন না, এমনকি জামা পরতে বা টয়লেটিং করতেও ভীষণ ব্যথা অনুভব করেন। ডায়াবেটিস ছাড়াও সারভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিস রোগীরা এ রোগের জটিলতা হিসেবে ফ্রোজেন সোল্ডারে আক্রান্ত হতে পারেন। তা ছাড়া হার্টে রিং থাকলে বা ওপেন হার্ট সার্জারি করলেও সেখান থেকে ফ্রোজেন সোল্ডার হতে পারে। অনেক সময় এসব কারণ ছাড়াও ফ্রোজেন সোল্ডার হয়।
চিকিৎসা
ডায়াবেটিস থাকলে ইন্ট্রাআর্টিকুলার ইনজেকশন না দেওয়াই ভালো। এতে ডায়াবেটিস বেড়ে যায়। দীর্ঘমেয়াদি থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ ও ম্যানিপুলেশনের সমন্বয়, অর্থাৎ আইপিএম এ ক্ষেত্রে খুব কার্যকর। অনেক ক্ষেত্রে ইলেকট্রোথেরাপিতে সাময়িক আরাম পাওয়া যায়। ফ্রোজেন সোল্ডারের ব্যথা নিমেষে দূর করা সম্ভব নয়। পুরোপুরি ব্যথা ভালো হতে দু-তিন মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।
উপদেশ
ডায়াবেটিস রোগীরা কাঁধের ব্যথার ব্যাপারে সজাগ থাকুন। যাত্রাপথে গাড়িতে বা বাসায় কোনো কাজ করতে গিয়ে হাতে ঝাঁকুনি খেলে বা আঘাত পেলে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে হালকা ব্যথা অনুভব করলে অবহেলা না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী আইপিএম চিকিৎসা শুরু করে দিন। যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করবেন, খরচ ও দীর্ঘসূত্রতা তত কমবে।
লেখক :ডা. মোহাম্মদ আলী, বিভাগীয় প্রধান, ফিজিওথেরাপি ও রিহ্যাব বিভাগ, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা। Email: hprc2005@live.com