কলকাতায় ডিএনএ নমুনা দিয়েছেন এমপি আনারকন্যা ডরিন

0
8
এমপি আনারকন্যা ডরিন
ভারতের কলকাতায় খণ্ড-বিখণ্ড মরদেহের অংশ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনারের কিনা তা নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়েছেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। নভেম্বর মাসের শেষ দিকে কলকাতায় নমুনা জমা দেন তিনি।
 
আনারকন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, নভেম্বর মাসে কলকাতায় গিয়ে সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে (সিএফএসএল) ডিএনএ নমুনা জমা দিয়েছেন।
 
পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি সূত্রের খবর, উদ্ধার হওয়া দেহাংশ যে সংসদ সদস্যেরই তা নিশ্চিত করতে ডিএনএ পরীক্ষা জরুরি ছিল। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, তাই মেয়ের ডিএনএ নমুনা সেন্ট্রাল ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। ডিএনএ নমুনা এবং দেহাংশ মিলে গেলে অপরাধের জোরালো প্রমাণ হাতে আসবে।
 
উল্লেখ্য, গত ১২ মে ভারতে আসে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। তিনি ওঠেন পূর্ব পরিচিত গোপাল বিশ্বাসের পশ্চিমবঙ্গের বরানগরে বাড়িতে। পরদিন ১৩ মে চিকিৎসা করাতে যাবেন বলে গোপালের বাড়ি থেকে বের হন তিনি। কিন্তু ওইদিন রাতেই নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের বহুতল আবাসনের ‘বিইউ-৫৬’ ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে তাকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
 
জানা যায়, বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আখতারুজ্জামান শাহীন এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী। মূলত আখতারুজ্জামানের নির্দেশেই জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদ সহ চারজন এমপি আনারকে ওই আবাসনে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বলে অভিযোগ।
 
এই ঘটনায় সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হওয়া অন্যতম অভিযুক্ত বাংলাদেশি নাগরিক সিয়াম হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, এমপি আনারকে খুন ও খণ্ড-বিখণ্ড লাশ লোপাটের কাজে যুক্ত ছিল সে। নিউটাউনের অভিজাত ওই সঞ্জীভা গার্ডেনের যে সিসিটিভি ফুটেজ সামনে আসে তাতেও সিয়ামকে দেখা যায়।
 
সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হওয়া আরেক অভিযুক্ত কসাই জিহাদ খুনের পরই ধারালো অস্ত্র দিয়ে এমপি আনারের শরীর থেকে মাংস আলাদা করে সেগুলোকে ক্যারিব্যাগে ভরে রাখে।
 
পরে সেই লাশের টুকরো গুলোকে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলার ভাঙ্গড় ব্লকের কৃষ্ণমাটি খাল এলাকায় ফেলা হয়। জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমনটাই জানতে পারে তদন্তকারী কর্মকর্তারা। পরবর্তীতে ওই খাল সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু হাড় উদ্ধার করে সিআইডির কর্মকর্তারা। অন্যদিকে আবাসনের সেকটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয় কিমা করা ৪ কেজি মাংস। যা পরীক্ষা করে সিআইডি কর্মকর্তা ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী সেগুলো সেগুলো পুরুষ মানুষের হাড় ও মাংস।
 
ওই মামলার তদন্ত করতে কলকাতা এসেছিল তৎকালীন ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল। সঞ্জীবা গার্ডেন, বাগজোলা খালসহ বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শনের পাশাপাশি দফায় দফায় সিআইডি কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেন ডিবি প্রধান।
 
এদিকে, গত ২৩ মে জিহাদ হাওলাদার এবং ৭ জুন সিয়াম হোসেনকে গ্রেফতারের পর আগস্ট মাসে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাত জেলা আদালতে প্রায় ১২০০ পাতার চার্জশিট জমা পড়ে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ), ৩০২ (অপরাধমূলক নরহত্যা), ২০১ (তথ্য প্রমাণ লোপাট) এবং ৩৪ (সংঘবদ্ধ ভাবে অপরাধমূলক কাজ সংঘটিত করা) এবং ১৪ ফরেনার্স আইনে মামলা দেওয়া হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.