বদলে যাচ্ছে পুলিশের ইউনিফর্ম–লোগো, কর্মবিরতি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত

0
50
অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বৈঠকের পর তাঁকে জড়িয়ে ধরেন আন্দোলনকারী পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ক কনস্টেবল শোয়েবুর রহমান

অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে বৈঠকের পর কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যরা। ওই বৈঠকে পুলিশের ইউনিফর্ম ও লোগোয় পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আজ রোববার বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যদের একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব মশিউর রহমান, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম, বিজিবির মহাপরিচালক, পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে পুলিশের ১১ দফা দাবির কয়েকটি অল্প সময়ের মধ্যে পূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। অন্য দাবিগুলো পূরণ করা হবে দীর্ঘমেয়াদে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে পুলিশের ওপর কোনো ধরনের হামলা চালানো যাবে না। পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাতে হবে।

পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে বসার আগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। গত কয়েক দিনের ঘটনায় পুলিশের মনোবল ভেঙে গেছে বলে বৈঠক শেষে জানান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, ‘তারা যে দাবি-দাওয়া পেশ করেছে, সেগুলো যৌক্তিক। তাই আমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছি যে, আমরা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে তাদের দাবিগুলো মেনে নেব। কিছু দাবি আমরা এখনই মেনে নেব।’

রাজনৈতিক সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘পুলিশের যতখানি না দোষ, তার চেয়ে বেশি দোষ তাদের যারা কমান্ড করেছে। তাদের দিয়ে অনেক রাজনৈতিক কাজ করানো হয়েছে। এসব বিষয়ে আমরা বিস্তারিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা করবো। পুলিশ সদস্যেরা আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, এখন থেকে তারা ঠিকমতো কাজ করবেন। এর আগে বিকেলে আমি ছাত্রদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। ছাত্ররা আমাকে বলেছে, পুলিশের সঙ্গে তাদের কোনো বিরোধ নেই। পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যদের বৈঠক
অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও আন্দোলনরত পুলিশ সদস্যদের বৈঠক, ছবি: সংগৃহীত

পুলিশ সদস্যদের জন্য স্বাধীন একটি কমিশন গড়ে তোলার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন জানিয়ে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘পুলিশ কমিশন হওয়া উচিত। সেই কমিশনের অধীনে পুলিশ পরিচালিত হবে। তারা কোনো রাজনৈতিক দলের অধীনে থাকবে না। পুলিশকে যেন রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার না করা হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, যাঁরা ঢাকায় থাকার পরও ভয়ে কাজে যোগ দিচ্ছেন না, তাঁদের ব্যপারে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে জানতে চাইলে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘সবাই তাঁর নিজের কাজের জায়গায় যাবেন। তাঁরা নিজেদের কাজ করবেন। তাঁদের মধ্যে কেউ যদি অন্যায় করে থাকেন, তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত হবে এবং শাস্তি হবে। সরকার তাঁদের কথা শুনবে। এরপর ব্যবস্থা নেবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে সাখাওয়াত হোসেন তাঁর বসার চেয়ার দেখিয়ে বলেন, ‘এই চেয়ারে তো একজন হাই কমান্ড (শীর্ষ কর্মকর্তা) ছিলেন। তিনি  কী করেছেন? তাঁর উপরেও হাই কমান্ড ছিল। এখন আমি যদি বলি, এই কাজ না করলে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দেব, তখন কী করবেন? অনেকেই তো হুকুম পালন করেছেন। একজনের ওপরে একজন হাই কমান্ড ছিলেন। সবই তদন্ত করা হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, পুলিশের ইউনিফর্ম, লোগো সব পরিবর্তন করা হবে। পুলিশের অনেকের মন ভেঙে গেছে। এই ইউনিফর্ম পরে পুলিশ আর কাজ করতে চাইছে না। খুব দ্রুতই তা পরিবর্তন করা হবে। এসব বিষয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনা হবে। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বৈঠক শেষে পুলিশের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারী পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ক পরিদর্শক জাহিদুল ইসলাম ও কনস্টেবল শোয়েবুর রহমান। তাঁরা বলেন, আমরা সরকারের কাছে যেসব দাবি জানিয়েছিলাম তার বেশিরভাগই মেনে নেওয়ার আশ্বাসে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিচ্ছি। আশা করি, সবাই সুন্দরভাবে নিজ নিজ দায়িত্বে ফিরবেন।

পুলিশের এই দুই কর্মকর্তা বলেন, খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। পুলিশের দাবিগুলো বেশিরভাগই মেনে নেওয়া হয়েছে। দ্রুত পুলিশের পোশাক পরিবর্তন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। পুলিশ নিয়ে স্বাধীন একটি কমিশন হওয়ার ব্যাপারেও ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

ঢাকা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.