আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবা ও সুরক্ষা প্রত্যেক শ্রমিকের আইনগত অধিকার। এ অধিকার বাস্তবায়নে নিরাপদ ও শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণের কোনো বিকল্প নেই।
শুক্রবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি দিবস’ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘নিশ্চিত করি শোভন কর্মপরিবেশ, গড়ে তুলি স্মার্ট বাংলাদেশ।’
আইনমন্ত্রী বলেন, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী সাম্প্রতিক সময়ে কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষাবিধি পালন, শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণ অত্যন্ত গরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কারখানা ও প্রতিষ্ঠানে পেশাগত সুরক্ষা নিশ্চিত করা বর্তমানে কেবল সরকার বা কারখানার মালিকপক্ষের ইচ্ছের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণকে কেবল মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ নেই। এটি এখন কারখানা মালিকপক্ষের জন্য দায়বদ্ধতায় পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ শ্রম আইন ও বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালার ভিত্তিতে কর্মক্ষেত্র শ্রমিক ভাই-বোনদের জন্য নিরাপদ ও শোভন রাখতে হবে, এটি এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। বাংলাদেশ যেভাবে উন্নত বিশ্বের অভিমুখে যাত্রা করেছে, সেখানে পেশাগত সুরক্ষার বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। বর্তমানে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা পালনকে জাতীয় সংস্কৃতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের কলকারখানাসমূহ জাতীয়করণের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আনিসুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধুর নীতি ও আদর্শকে অনুসরণ করেই বর্তমান সরকার দেশের সকল খাতের শ্রমজীবী মানুষের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নানাবিধ কল্যাণমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ সালের মধ্যে অর্জন এবং ২০৪১ সালে স্মার্ট ও উন্নত দেশের কাতারে সামিল হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে সরকার ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে দেশের মেহনতি ও শ্রমজীবী মানুষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এজন্য শ্রমিক ভাই-বোনদের জন্য শোভন কর্মপরিবেশে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি করার বিষয়টি সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিতে হবে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তর ও সংস্থাকে বাংলাদেশে শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, শ্রমিকদের সার্বজনীন পেনশন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ কে যুগোপযোগী করে ২০২২ সালে সংশোধন করেছি। বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০১৩ এবং ২০১৮ সালে সংশোধন করেছি। শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশ শ্রম আইন আবারো সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছি। সংশোধিত এই শ্রম আইন অর্থনৈতিক অঞ্চলেও কার্যকর হবে। ইপিজেড এলাকায় শ্রমিকদের জন্য শ্রম বিধিমালা কার্যকর করা হয়েছে, হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে এবং এ এলাকায় শ্রম পরিদর্শনের মান বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইপিজেড এলাকায় আমাদের শ্রম পরিদর্শকগণ পরিদর্শন করছেন। আমাদের এসকল কার্যক্রমের মাধ্যমে শ্রমজীবী মানুষের জন্য পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি নিশ্চিত হবে বলে আমি আশাবাদী।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এহছানে এলাহীর সভাপতিত্বে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক মো. নাসির উদ্দীন আহমেদ, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী, কানাডিয়ান হাইকমিশনের হেড অব কো-অপারেশন জো গুডিংস, আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর তোমো পুটিআইনেন, বাংলাদেশ এমপ্লোয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি আরদাশির কবির, বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি খসরু চৌধুরী, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মানসুর আহমেদ, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি নুর কুতুব আলম মান্নান প্রমুখ বক্তব্য দেন।