করোনার মতো আরেকটি মহামারির আতঙ্ক ছড়াচ্ছে এইচএমপিভি

0
8
হিউম্যান মেটা নিউমো ভাইরাস (এইচএমপিভি)
করোনাকাল পার হয়েছে, পাঁচ বছর। এখনও বিশ্ববাসীর মনে দাগ কেটে আছে মহাদুর্যোগের সেই সময়কাল। এবার তেমনই আরেকটি মহাপ্রাদুর্ভাবের আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে এইচএমপিভি নামে এক ভাইরাস। দুই যুগ আগে ভাইরাসটির অস্তিত্বের প্রমাণ মিললেও এখন পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে তৈরি হয়নি কার্যকর কোনও প্রতিষেধক। এমন পরিস্থিতিতে চীন ও জাপানে যেভাবে রোগটির প্রকোপ বেড়েছে, স্বভাবতই তা দুশ্চিন্তার গাঢ় ভাঁজ ফেলছে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের কপালে। অনেকেরই শঙ্কা, ২০২৫ সালে ফের করোনার মতো নতুন কোনো মহামারির উদ্ভব হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র গবেষক ড. মাইকেল হেড বলেছেন, আরও একটি মহামারির শঙ্কা করা হচ্ছে, তবে কোন রোগটি মহামারি আকার ধারণ করবে; সেটি এখনও নিশ্চিত নয় বলে আগাম মহামারির নাম দেওয়া হয়েছে ডিজিস-এক্স।
সম্ভাব্য মহামারির তালিকায় রাখা হয়েছে হাম, কলেরা, বার্ড-ফ্লু এবং স্ক্যাবিসের মতো প্রায় ১১টি রোগকে। এর মধ্যে হিউম্যান মেটা নিউমো ভাইরাসের (এইচএমপিভি) সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাব বিশেষভাবে ভাবাচ্ছে চিকিৎসকদের।
সম্প্রতি চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, করোনার সময়ে হাসপাতালগুলোতে যেভাবে ভিড় তৈরি হয়েছিল, একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাবেও।
একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে জাপানেও। দেশটির সংবাদমাধ্যম বলছে, চলতি মৌসুমে দেশটিতে ঠান্ডাজনিত এ সংক্রমণ ছাড়িয়েছে ৭ লাখেরও বেশি।
গবেষক ড. মাইকেল হেডের সতর্কবার্তা অনুযায়ী, আগামীর মহামারির প্রধান বৈশিষ্ট্য হবে মারাত্মক ছোঁয়াচে এবং মানুষের মৃত্যুহার হবে সর্বোচ্চ।
এদিকে চীনে প্রতিনিয়ত এইচএমপিভি প্রকট আকার ধারণ করলেও এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বা দেশটির সরকার সতর্কতা জারি করেনি। তবে, যেভাবে ভাইরাসটি ছড়াচ্ছে, তাতে যেকোনো সময়ে চীন সরকার জরুরি অবস্থা জারি করতে পারে বলে দাবি দেশটির বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের।
এইচএমপিভিতে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে শিশু এবং বৃদ্ধরা। বিশেষ করে আগে যাদের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ছিল, তারা এই ভাইরাসের আক্রমণে নাজুক অবস্থায় আছেন। মূলত জ্বর, নাকবন্ধ, কাশি বা শ্বাসকষ্টের মতো সাধারণ ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা দিয়ে শুরু হলেও এই ভাইরাসের তীব্রতায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। অনেক সময় রোগের তীব্রতা ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা বা কানে ইনফেকশনের মতো সমস্যা সৃষ্টি করতে সক্ষম বলে অভিমত চিকিৎসকদের। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হওয়ার তিন থেকে ছয় দিনের মধ্যে উপসর্গগুলো তীব্রতর রূপ নেয় বলে জানিয়েছেন তারা।
এদিকে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, চীনের যেসব এলকায় দীর্ঘদিন করোনার বিধিনিষেধ জারি ছিল, সেসব এলাকাতেই রোগটির বিস্তার ঘটেছে বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ লকডাউনের কারণে করোনা ও অন্যান্য ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার হার নিয়ন্ত্রণ করা গেছে ঠিকই, কিন্তু অন্যদিকে এটি মানুষের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এ কারণেই এইচএমপিভিতে আক্রান্তদের মধ্যে গুরুতর শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ প্রতিরোধ ও গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এইচএমপিভি ভাইরাসটিকে প্রথমবার শনাক্ত করা হয়েছিল ২০০১ সালে। এটি মূলত ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ঘটায় এবং সব বয়সী লোকজনকেই আক্রান্ত করে। তবে শিশু, বয়স্ক এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
উল্লেখ্য, এইচএমপিভি একটি সংক্রামক রোগ এবং যেভাবে এটি ছড়ায়, তার সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে কোভিডের। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোভিডের মতোই হাঁচি, কাশি, আক্রান্ত রোগীর কাছাকাছি অবস্থান, করমর্দন এবং স্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায় এ রোগটি।
এইচএমপিভি ভাইরাসের কোনো ওষুধ বা টিকা নেই। চীনের যেসব হাসপাতালে এইচএমপিভি রোগীরা ভর্তি হয়েছেন, তাদের চিকিৎসায় নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ ব্যবহার না করে প্রচলিত ওষুধই দেওয়া হচ্ছে।
তবে, রোগটিকে প্রতিরোধ করা সম্ভব এবং এর প্রতিরোধের সঙ্গে করোনা বা কোভিডের প্রতিরোধ ব্যবস্থার সাদৃশ্যও রয়েছে। রোগটি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা যেসব পরামর্শ দিয়েছেন, সেগুলো হলো— নিয়মিত দিনে কয়েকবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, আক্রান্ত রোগীর কাছ থেকে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং কোনো কিছু স্পর্শ করার পর হাত ভালোভাবে ধোয়া এবং শারীরিক অসুস্থতা বোধ করলে বাড়িতে অবস্থান করা।
এদিকে করোনার মতো করে এইচএমপিভি ভাইরাস যেন চীন থেকে ভারতেও ছড়িয়ে না পরে, সেজন্য আগে থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করেছে দেশটি। ভারতের স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক ড. অতুল গয়াল জানিয়েছেন, শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত কোনো সমস্যা এখন থেকে ছোট করে দেখার কোনও উপায় নেই। এ ধরনের জটিলতা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
গয়াল বলেন, আপাতত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। প্রাথমিকভাবে এটিকে সাধারণ ফ্লু ভাইরাস বলেই মনে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত শঙ্কাজনক কোনো বার্তা আমাদের কাছে আসেনি। তবে, যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নির্দেশ দেওয়া আছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.