মেসিকে দেখে ড্রিবলিং শিখে ম্যারাডোনাকে মনে করালেন এই ১৬ বছর বয়সী

0
120
ম্যাচ শেষে ময়জেস কাইসেদোর সঙ্গে কেন্দ্রি পায়েজ (বাঁয়ে), ছবি: এএফপি

ম্যাচের শুরু থেকে মাঠে ছিলেন প্রায় ৭০ মিনিট। ৩৬টি পাস খেলেছেন, এর মধ্যে ৮৬ শতাংশ পাসই ছিল নিখুঁত। একটি গোল করিয়েছেন, গোল করার মতো আরও একটি পাস দিয়েছিলেন, সে যাত্রায় অবশ্য গোল হয়নি।

বাতাসে ভাসিয়ে দূরপাল্লার নিখুঁত পাস দিয়েছেন আরও ৭টি। সফল ড্রিবলিং ৫ বার—পরিসংখ্যান ও ‘আপনি’ সম্বোধন দেখে মনে হতে পারে অভিজ্ঞ কোনো মিডফিল্ডারের পারফরম্যান্স। আসলে মোটেও তা নয়। ২০২৬ বিশ্বকাপ দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বে ইকুয়েডরের হয়ে গতকাল এমন খেলেছেন কেন্দ্রি পায়েজ। ছেলেটির বয়স মাত্র ১৬ বছর!

‘কোচদের কোচ’ নামে খ্যাত মার্সেলো বিয়েলসার উরুগুয়েকে ২-১ গোলে হারিয়ে চমকে দিয়েছে দক্ষিণ আমেরিকান ফুটবলে তুলনামূলক কম শক্তিশালী দল ইকুয়েডর। এ জয়ে ৬০ মিনিটে ফেলিক্স তোরেসকে দিয়ে ইকুয়েডরের দ্বিতীয় গোলটি করিয়েছেন পায়েজ। প্রথমার্ধে যোগ করা সময়ে ইকুয়েডরের প্রথম গোলটিও তোরেসের। তবে তাঁকে দিয়ে দ্বিতীয় গোলটি করিয়ে দারুণ এক রেকর্ডই গড়েছেন ২০২৫ সালে চেলসিতে যোগ দিতে যাওয়া ইকুয়েডরের ভবিষ্যৎ তারকা কেন্দ্রি পায়েজ।

ফুটবলের পরিসংখ্যানভিত্তিক টুইটার অ্যাকাউন্ট ‘মিস্টারচিপ’ জানিয়েছে, উরুগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচটি দিয়ে ১৬ বছর ১৩১ দিন বয়সে ইকুয়েডরের জার্সিতে অভিষিক্ত হলেন পায়েজ। আর অভিষিক্ত ম্যাচেই গোল করিয়ে রেকর্ড বই ওলট-পালট করেছেন। দক্ষিণ আমেরিকার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে গোল করানোর রেকর্ড গড়েছেন পায়েজ।

ড্রিবলিংয়ের প্রতি দুর্বলতা আছে পায়েজের। অল্প বয়সেই ড্রিবলিংয়ে দক্ষ হয়ে ওঠা পায়েজের এই কাজে আদর্শ লিওনেল মেসি। ইকুয়েডর সতীর্থ ও উইঙ্গার গনহালো প্লাতাকেও শৈশব থেকে দেখেছেন। তাঁদের ড্রিবলিং দেখে দেখেই নিজের ড্রিবলিংয়ের ধার বাড়িয়েছেন পায়েজ। আর কে না জানে, দক্ষিণ আমেরিকান তরুণ ফুটবল প্রতিভার প্রতি ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর সব সময়ই নজর থাকে। পায়েজ ইকুয়েডরিয়ান সিরি আ-র দল ইন্দিপেন্দিয়েন্তেতে খেললেও তাঁকে আগেভাগেই সই করিয়ে রেখেছে চেলসি।

১৮ বছর বয়স হলে তারপর তাঁকে স্টামফোর্ড ব্রিজে উড়িয়ে আনবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবটি। দামটা আনুমানিক ১ কোটি ৭০ লাখ পাউন্ড বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘মেইল অনলাইন।’ মজার ব্যাপার, ইন্দিপেন্দিয়েন্তেতে পায়েজকে তাঁর সতীর্থরা কিন্তু ‘দি মারিয়া’ বলে ডাকেন। কেন? আর্জেন্টাইন উইঙ্গারের মতো পায়েজও বাঁ পায়ের খেলোয়াড় এবং তাঁর মতোই একহারা লিকলিকে গড়ন।

তবে এই লিকলিকে শরীর নিয়েই ভারী সব রেকর্ড গড়ছেন কেন্দ্রি পায়েজ। গত ফেব্রুয়ারিতে ইকুয়েডরের শীর্ষ লিগে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে অভিষিক্ত ও গোল করার রেকর্ড গড়েছেন তিনি, মাত্র ১৫ বছর বয়সে!

আর গত মে মাসে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপের ইতিহাসেও সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে গোল করার রেকর্ড নিজের করে নেন পায়েজ। তখন তাঁর বয়স ১৬ বছর ২২ দিন। আর গতকাল রাতে উরুগুয়ের বিপক্ষে তাঁর অভিষেক ঘটেছে ইকুয়েডর জাতীয় দলের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে। গোল করানোর রেকর্ডটি তো আগেই বলা হলো। তবে একটুর জন্য ধরতে পারেননি ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে!

দক্ষিণ আমেরিকান খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সে জাতীয় দলের একাদশের হয়ে মাঠে নামার রেকর্ডটি এখনো আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির দখলে। সিবিএস স্পোর্টস জানিয়েছে, ১৯৭৭ সালে ১৬ বছর ৩ মাস বয়সে এই রেকর্ড গড়েছিলেন ম্যারাডোনা। ১৬ বছর ৪ মাস বয়সী পায়েজ দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে ম্যারাডোনার ঠিক পরই।

রেকর্ড বইয়ে আরেকটি পাতায় ম্যারাডোনার পরই অবস্থান পায়েজের। স্কাই স্পোর্টসের এক প্রতিবেদক টুইটে জানিয়েছেন, দক্ষিণ আমেরিকার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে অভিষেক ঘটল ১৬ বছর ৪ মাস ৮ দিন বয়সী পায়েজের। রেকর্ডটি ম্যারাডোনার দখলে, কারণ, আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি এই টুর্নামেন্টে অভিষিক্ত হয়েছিলেন ১৬ বছর ৪ মাস ৭ দিন বয়সে!

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.