কমেডি থ্রিলার গল্পের ‘ওমর’ কেমন?

0
99
‘ওমর’ সিনেমার ফার্স্টলুক পোস্টার ও অভিনয়শিল্পীরা।

একটি কমেডি থ্রিলার সিনেমায় যা যা থাকা দরকার, তা কি আছে ওমর সিনেমায়? প্রথমত চোখ যায় এই সিনেমার অভিনয় শিল্পীদের সমৃদ্ধ তালিকার দিকে। শহীদুজ্জামান সেলিম, ফজলুর রহমান বাবু, নাসিরউদ্দীন খান, রোজি সিদ্দিকী, আবু হুরায়রা তানভীর ও শরিফুল রাজ। প্রত্যেকে সবার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।  অথবা বলা যায়, প্রত্যেকের সেরাটা আদায় করে নিয়েছেন নির্মাতা মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ। কী আছে সিনেমায়? গল্পটা কী?

থ্রিলার সিনেমা গড়ে ওঠে প্রধানত খুন অথবা অসাধারণ কোনো চুরির ঘটনার অনুসন্ধান নিয়ে। খুনের গল্পে দেখা যায়, পুলিশ যখন খুনের কূলকিনারা পায় না, তখন গল্পে হাজির হয় এক দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা অফিসার, যে অফিসার বদরাগী অথবা বরখাস্ত। এই জাঁদরেল অফিসার এসে খুনের রহস্য উন্মোচন করে। এটা ওমর সিনেমার গল্প না। গল্পের চেনা গলিতে হাঁটেননি নিমার্তা। হেঁটেছেন ভিন্ন পথে।

শহরের প্রভাবশালী পরিবার মির্জা সাহেব (শহীদুজ্জামান সেলিম)। তার বখাটে ও লম্পট ছেলে ছোট মির্জা (তানভীর)। ঘটনাক্রমে তানভীর খুন হয়। যখন খুন হয় তখন সেখানে উপস্থিত ছিল তারই ম্যানেজার নাসিরউদ্দিন খান ও একজন আগন্তুক শরিফুল রাজ। তারা পালিয়ে না গিয়ে মির্জার বাসায় ওঠে। গল্পে বাঁধে প্যাঁচ। একদিকে টেনশন, অন্যদিকে দুইজনের মজার মজার খুনসুটি। মনে হবে, এই বুঝি তারা ধরা পড়ল। গল্প এগিয়ে যায় দুই রকম স্বাদে। একদিকে কমেডি, অন্যদিকে সাসপেন্স। নাসির আর রাজের কর্মকাণ্ড ও সংলাপ একদিকে ভরপুর বিনোদন দেবে অন্যদিকে টেনশনে রাখবে। কমেডি ও টেনশন সমান তালে এগিয়েছে সিনেমার শেষ পর্যন্ত, এটাই সিনেমার বড় শক্তি।

চিত্রনাট্য ঝরঝরে, যখন যা প্রয়োজন, তখন ঠিক তাই ছিল। তবে এটা ঠিক, কমেডি নির্ভর করে অভিনয়শিল্পীর কমিক টাইমিংয়ের ওপর। সবাই প্রতিষ্ঠিত অভিনয় শিল্পী হওয়ায় কমিক টাইমিং ছিল দুর্দান্ত। যে কারণে দৃশ্য ও সংলাপ বেশ উপভোগ্য হয়েছে। সংলাপে প্রচুর গালাগালি আছে কিন্তু সেগুলোর কমিক টাইমিং নিখুঁত থাকার কারণে অশ্লীল মনে হয়নি।

দারুণ লোকেশনে চিত্রায়িত এই চলচ্চিত্রের সিনেমাটোগ্রাফি ছিল মনোরম। সাগরপাড়ের সোজা মসৃণ পথে গাড়ি ছুটে চলার দৃশ্য চোখে আরাম দিয়েছে। রাজু রাজের ক্যামেরা মুভমেন্ট দৃশ্যকে ফুটিয়ে তুলতে সহায়তা করেছে। অন্যদিকে লাইট, সেট, মিউজিক ভালো লেগেছে। বিশেষ করে উল্লেখ করতে হয় ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের কথা। কমেডি ও টেনশন একই সাথে সমন্বয় করেছে, ফলে দৃশ্য হয়ে উঠেছে উপভোগ্য। রাজের বোনের সাথে ইমোশনাল গানটি দর্শকের হৃদয় ছুঁয়েছে। তবে সিনেমার শুরুতে আইটেম গানটি জমজমাট হলেও কোরিওগ্রাফি আরও ভালো হতে পারত।

খামতির মধ্যে রয়েছে, লোকেশনের ভিন্নতা কম। একটি দৃশ্য খুব পলকা লেগেছে। যখন মির্জার প্রবল প্রতিপক্ষকে কিডন্যাপ করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়- এমন একজন ক্ষমতাধর মানুষ, যে মির্জাকে সরাসরি হুমকি দিতে পারে, সে কখনো বনের কাছে একা থাকবে না। আবার কিডন্যাপ করে তাকে মির্জার বাড়িতে নিয়ে যায় কথা বলার জন্য। এটাও দুর্বল যুক্তি। কারণ, মির্জাদের মতো প্রভাবশালী হিংস্র লোক কখনো নিজের বসতবাড়িতে ঝামেলা টেনে আনবে না। তাদের থাকে অনেকগুলো গোপন বাড়ি বা বাংলো। যেখানে চলে যৌনতা আর ক্ষমতার চর্চা। এমন একটা বাংলো মির্জার থাকতেই পারত। সব মিলিয়ে ‘ওমর’ একটি উপভোগ্য সিনেমা।

  • মোস্তফা মনন: লেখক ও চলচ্চিত্র সমালোচক

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.