কমলো জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়

0
8

দীর্ঘদিন বাড়িয়ে দেখানোর পর দেশের পণ্য রপ্তানি আয় সংশোধন করা হয় গত বছরের এপ্রিলে। সংশোধনীতে গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি আয় কমেছে ১৪ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যা ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার মতো। এত বড় অঙ্কের অর্থ কমে যাওয়ার প্রভাব মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি এবং মাথাপিছু আয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। বিবিএসের চূড়ান্ত হিসাবে, গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৪ দশমিক ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। মাথাপিছু আয় কমে হয়েছে ২ হাজার ৭৩৮ ডলার।
গতকাল সোমবার সামষ্টিক অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এ নির্দেশকগুলোর চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করা হয়। তাতে দেখা যায়, বিবিএসের সাময়িক হিসাব এবং চূড়ান্ত হিসাবের মধ্যে ব্যবধানটা বেশ বড়। যেমন– চূড়ান্ত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির সাময়িক হিসাবের চেয়ে ১ দশমিক ৬০ শতাংশীয় পয়েন্ট কম। গত বছরের মে মাসে বিবিএস জানায়, সাময়িক হিসাবে গত অর্থবছরে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
এদিকে চূড়ান্ত হিসাবে গত অর্থবছরে যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা গত তিন অর্থবছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয় ৭ দশমিক ১০ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

বিবিএসের তথ্যে দেখা যায়, গত অর্থবছর সাময়িক হিসাবের চেয়ে চূড়ান্ত হিসাবে রপ্তানির পরিমাণ কম এসেছে ২১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছরও চূড়ান্ত হিসাবে রপ্তানি সাময়িক হিসাবের চেয়ে  ১৫ দশমিক ২৯ শতাংশ কম হয়। তবে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. কে এ এস মুর্শিদ মনে করেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি এতােটা কমে যাওয়ার পেছনে রপ্তানিই একমাত্র কারণ নয়। এর সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। যেমন– বিনিয়োগ তো কমছেই। একাধারে বিনিয়োগ কমতে থাকলে অর্থনীতিতে তার নেতিবাচক প্রভাব থাকে। আগামীতে বিনিয়োগ বাড়াতে যা যা করণীয় তাই করতে হবে। করণীয় কী, তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভালো করেই জানে।
জিডিপি ও রপ্তানির সম্পর্কের বিষয়টি ব্যাখ্যায় বিবিএস বলেছে, জিডিপির হিসাব প্রাক্কলনের ক্ষেত্রে রপ্তানি আয়ের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল  ১২ দশমিক ২১ শতাংশ। এ বিবেচনা থেকে গত অর্থবছরের সাময়িক হিসাব প্রাক্কলন করা হয়। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রপ্তানির সংশোধিত হিসাব সাময়িক প্রাক্কলিত হিসাবের তুলনায় ২১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ কম হয়েছে।
রপ্তানিতে সাময়িক ও চূড়ান্ত হিসাবের মধ্যে বড় ব্যবধান থাকলেও কৃষিতে প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে। সাময়িক হিসাবে কৃষির প্রবৃদ্ধি ধরা হয় ৩ দশমিক ২১ শতাংশ, যা চূড়ান্ত হিসাবে বেড়ে হয়েছে ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি কাছাকাছিই রয়েছে। এ খাতে সাময়িক হিসাবে প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। চূড়ান্ত হিসাবে যা দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। অবশ্য শিল্পের প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৬৬ থেকে কমে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশে নেমে এসেছে। শিল্প খাতে দুই হিসাবের মধ্যে বড় ব্যবধানের কারণও রপ্তানি খাত। বিবিএসের প্রতিবেদন বলছে, গত অর্থবছরে চলতি মূল্যে জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ৫০ লাখ ২ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা, যা সাময়িক হিসাবে ছিল ৫০ লাখ ৪৮ হাজার ২৭ কোটি টাকা।
মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৩৮ ডলার

বিবিএসের চূড়ান্ত হিসাব বলছে, দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৩৮ ডলার, যা সাময়িক হিসাবের চেয়ে ৪৬ ডলার কম। সাময়িক হিসাবে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৭৮৪ ডলার। বিবিএসের  প্রতিবেদেন বিশ্লেষণে দেখা যায়, তিন বছর ধরে মাথাপিছু আয় কমেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৭৯৩ ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ২ হাজার ৭৪৯ ডলার।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.