কক্সবাজারে আধা পাকা ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় কৃষক

0
148
মাঠের বেশ কিছু বোরো ধান এখনো অপরিপক্ব। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নে খরুলিয়াতে

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা ইতিমধ্যে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, দেশে ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব কক্সবাজারের উপকূল এলাকায় সবচেয়ে বেশি পড়তে পারে। এ অবস্থায় ফসলের মাঠে থাকা আধা পাকা বোরো ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কক্সবাজার সদর, রামু, ঈদগাহ, টেকনাফ, উখিয়া, চকরিয়া উপজেলার অন্তত ৪১ হাজার কৃষক।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামীকাল শনিবার সন্ধ্যা কিংবা রোববার ভোররাতের দিকে ঘূর্ণিঝড় মোখা কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তবে কৃষকেরা বলছেন, এই সময়ের মধ্যে মাঠের সব ধান কেটে ফেলা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, মাঠের বেশ কিছু ধান এখনো অপরিপক্ব। ঝড়–বৃষ্টি হলে এসব ধান মাঠেই নষ্ট হয়ে যাবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলার নয়টি উপজেলায় ৫৪ হাজার ৫৭৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ইতিমধ্যে ৮০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। রোববারে মধ্যে আরও ৫ শতাংশ জমির ধান কাটা সম্ভব হতে পারে। এর পরও অবশিষ্ট ১৫ শতাংশ জমিন ধান গোলায় তোলা সম্ভব হবেনা। অপরিপক্ব আধা পাকা এই ধান পাকতে আরও ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগতে পারে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশিষ কুমার দে বলেন, এবার ৫৪ হাজার ৫৭৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন ২ লাখ ৭২ হাজার কৃষক। এর মধ্যে ২ লাখ ১৮ হাজার ৩০০ কৃষকের (৮০ শতাংশ জমির) ধান কাটা হয়েছে। অবশিষ্ট ২০ শতাংশ জমিতে ৫৪ হাজার ৫৭৭ জন কৃষকের ধান রয়ে গেছে। আজ শুক্রবার থেকে আগামীকাল পর্যন্ত দুই দিনে ঝড়–বৃষ্টি না হলে আরও ১৪ হাজার কৃষকের ধান কাটা সম্ভব হবে। কিন্তু আধা পাকা অবস্থায় থাকায় অবশিষ্ট ৪১ হাজার কৃষকের ধান কোনোভাবে কাটা সম্ভব হবে না।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়া ও বড়ুয়াপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকের পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় কৃষক আবদুল মাজেদ বলেন, রোগবালাই বা পোকামাকড়ের আক্রমণ না থাকায় এবার ভালো ফলন হলেও ঘূর্ণিঝড় বহু কৃষকের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে। শনিবার কিংবা রোববার ঘূর্ণিঝড় হলে হাজার হাজার কৃষকের ধান ঘরে তোলা হবে না। অধিকাংশ কৃষক দাদন নিয়ে ধান চাষে নেমেছেন।

ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্কে কক্সবাজারের  কৃষকেরা পাকা ধান কাাটয় ব্যস্ত সময় পার করছেন। গতকাল বিকেলে সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের সিকদারপাড়ায়
ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্কে কক্সবাজারের কৃষকেরা পাকা ধান কাাটয় ব্যস্ত সময় পার করছেন। গতকাল বিকেলে সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের সিকদারপাড়ায়

এদিকে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে আছেন টেকনাফের কৃষকেরা। এই উপজেলায় এবার ১ হাজার ৬৭০ হেক্টরে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে হোয়াইক্যং ইউনিয়নে ১ হাজার ৫৬৫ হেক্টর, হ্নীলাতে ৬০ হেক্টর এবং বাহারছড়াতে ৩০ হেক্টর রয়েছে।

হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, সে রকম পরিস্থিতি হলে ৫০০ একরের বেশি জমির ধান রক্ষা করা কঠিন হবে। এ নিয়ে চাষিরা দুশ্চিন্তায় আছেন। আধা পাকা অবস্থায় থাকায় অনেকে আগেভাগে ধান কেটেও ফেলতে পারছেন না।

এদিকে কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রামুতে এবার ৬ হাজার ৬১০ হেক্টরে বোরো চাষ হয়েছে। ইতিমধ্যে ৭৫ শতাংশ জমির ধান কাটা হলেও অবশিষ্ট ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় ১৪ হাজারে বেশি কৃষক। রামুর ফতেখাঁরকুলের কৃষক আবদুল জলিল (৫৫) বলেন, আজ দুপুর পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখা গেলেও ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আতঙ্কে আছেন তিনি। ঝড়–বৃষ্টিতে মাঠের ধান নষ্ট হলে পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়বেন তিনি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.