ওষুধ ও প্রসাধনী একই আইনের আওতায় এলে জটিলতা বাড়বে

0
158
‘প্রস্তাবিত ওষুধ ও কসমেটিক্স আইন-২০২৩: বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ প্রভাব’ শীর্ষক সেমিনার

চাহিদা ও ব্যবহারের দিক থেকে ওষুধ এবং প্রসাধনী সম্পূর্ণ আলাদা দুটি পণ্য। তাই পণ্য দুটিকে একই আইনের আওতায় না এনে আলাদা আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন। তা না হলে এ নিয়ে জটিলতা বাড়তে পারে। বাধাগ্রস্ত হতে পারে শিল্পের উন্নয়ন।

রোববার রাজধানীতে এক সেমিনারে এসব কথা বলেন প্রসাধনী খাতের ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা। মতিঝিলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই কার্যালয়ে ‘প্রস্তাবিত ওষুধ ও কসমেটিক্স আইন-২০২৩: বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ প্রভাব’ শীর্ষক এ সেমিনারটির আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বর্তমানে প্রসাধনী পণ্যের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে বিষয়টি দেখভাল করে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই)। প্রস্তাবিত আইনটি পাস হলে প্রসাধনী পণ্যের নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে ওষুধ প্রশাসনের হাতে। এ নিয়ে প্রসাধনী পণ্যের উৎপাদন ও বাজারজাতকারীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. নুরনবী। এতে তিনি বলেন, প্রসাধনী ও ওষুধ পুরোপুরি আলাদা পণ্য। একটি ব্যবহার হয় শরীরে সৌন্দর্য্য বাড়াতে। অন্যটি জীবন রক্ষার্থে। একটি প্রসাধনী পণ্য বিক্রিতে ফার্মাসিস্টের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু ফার্মাসিস্ট ছাড়া ওষুধ বিক্রি করা যায় না। উন্নত দেশগুলোতে প্রসাধনী ও ওষুধের জন্য আলাদা আইন রয়েছে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ হচ্ছে মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিষয়গুলোকে রোধ করা। অর্থাৎ নাগরিকদের মঙ্গলের জন্য আইন প্রণয়ন করা। তবে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয় এমন কোনো আইন করা হবে না।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত ওষুধ ও কসমেটিকস আইনটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে আছে। এটি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তবে প্রসাধনী ব্যবসায়ীদের এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। সংসদীয় কমিটির বৈঠকে অংশীজনদের মতামত নেওয়া হবে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সেমিনারের স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ওষুধ ও প্রসাধনী দুটো পণ্যই মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পণ্য দুটির উৎপাদন, চাহিদা এবং ব্যবহারের প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। দুটি খাতের জন্য যুগোপযোগী আলাদা আইন প্রণয়ন জরুরি। একই আইনের আওতায় এনে ওষুধ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রসাধনী সামগ্রীর কার্যক্রম পরিচালিত হলে ব্যবসায়ীরা প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হবেন।

তিনি বলেন, কসমেটিকস এবং ওষুধের জন্য একই আইন ও এর প্রয়োগ ওষুধ প্রশাসনের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ার সম্ভাব্য সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা দরকার ছিল। আইন অবশ্যই ব্যবসাবান্ধব হতে হবে, অন্যথায় শিল্পের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, প্রস্তাবিত আইনটির বেশ কিছু ভালো দিক রয়েছে। এতদিন যে যার মত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে পারলেও নতুন আইনে তা  পারবে না।

বিএসটিআইর মহাপরিচালক আবদুস সাত্তার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিএসটিআই কসমেটিকস পণ্য দেখভাল করে আসছে। এ বিষয়ে বিএসটিআইর কর্মকর্তাদের বিশদ ধারণা আছে। এ খাত নিয়ন্ত্রণে বিএসটিআইর অভিজ্ঞতার জায়গায় পৌঁছতে গেলে ওষুধ প্রসাশনের অন্তত ১০ বছর লাগবে।

প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন ইউনিলিভার বাংলাদেশের সিইও এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আখতার, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের সিইও মো. হালিমুজ্জামান, বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. এম এ মুবিন খান, মিল্লাত কেমিক্যাল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহফুজ জামান।

বক্তারা বলেন, প্রস্তাবিত আইনে কসমেটিকস উৎপাদন, বিতরণ, আমদানি-রপ্তানির জন্যে এবং এ কাজে নিয়োজিত কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা দোকান মালিককে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে নিবন্ধন ও লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছে। অথচ এই বিষয়গুলো অনুসরণ করে আইন অনুসারে কসমেটিকসের প্রয়োজনীয় সব লাইসেন্স দিচ্ছে বিএসটিআই। একই বিষয়ে নতুন একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা আরেকটি স্তর তৈরি করবে। ব্যবসা করার খরচ ও জটিলতা বাড়াবে।

তারা বলেন, প্রস্তাবিত আইন কেবল কসমেটিকস শিল্পের উৎকর্ষই বাধাগ্রস্ত হবে না, এই শিল্পের ব্যয়ও বাড়াবে। ফলে দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাবে। পণ্যের দামও বেড়ে যাবে।

সমাপনী বক্তব্যে এফবিসিসিআইর সহ-সভাপতি এম এ মোমেন প্রস্তাবিত আইনটি পুনর্বিবেচনা করে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.