ওমেন্স সুপার লিগেও স্মলির খবরদারি

সাখাওয়াত হোসেন জয়

0
122
কাজী সালাউদ্দিন।

আবারও সেই পল স্মলি, আবারও তাঁর আশ্বাসেই এগোচ্ছেন কাজী সালাউদ্দিন। তাঁর ওপর ভরসা করেই ঘোষণা দিয়েছেন, ১০ জুন থেকে চার দল নিয়ে নারী ফুটবলে প্রথমবারের মতো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ ‘ওমেন্স সুপার লিগ’ মাঠে গড়াবে। কিন্তু রোববার পর্যন্ত টুর্নামেন্টের কোনো অগ্রগতি জানাতে পারেননি বাফুফে নারী ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ। মেয়েদের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের চার দল এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত করতে পারেনি ফেডারেশন। তাতে অবশ্য থেমে নেই পল স্মলির খবরদারি। বিদেশি কোচ এবং খেলোয়াড় আনার প্রক্রিয়াগুলো একাই করছেন তিনি। রোববার সমকালকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কিরণ, ‘চার দল চূড়ান্ত হয়েছে আবার হয়ওনি। দু-এক দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে আপনাদের সবকিছু নিশ্চিত করতে পারব। এর বাইরে আমি আর বেশি কিছু বলতে পারব না। আর আমাদের বিদেশি কোচ এবং খেলোয়াড় আনার বিষয়গুলো পল করছেন।’

ইংল্যান্ডের  ফুটবল কোচ পল স্মলির বাফুফেতে পদবি টেকনিক্যাল ডিরেক্টর। বাফুফে এলিট একাডেমির সঙ্গে নারী দলের অনুশীলনও করান তিনি। কিন্তু ছুটি কাটিয়ে দু’সপ্তাহ ধরে ঢাকাতে ফিরলেও অনুশীলনে আসছেন না স্মলি, এলিট একাডেমিতে কোচিং করাচ্ছেন পাপ্পু। আর নারী দলের অনুশীলনে আছেন মাহবুবুর রহমান লিটু। তবে বাফুফেতে এসে নিজে জিম করার পাশাপাশি কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করছেন। আসলে পল স্মলি এখন ব্যস্ত ওমেন্স সুপার লিগের খবরদারিতে। বিদেশি কোচিং স্টাফ আর খেলোয়াড় জোগাড় করার দায়িত্ব নিজে থেকেই নিয়েছেন তিনি।

বরাবরই কোচিং দায়িত্বের বাইরে গিয়ে অতীতে কোচ নিয়োগ থেকে শুরু করে ফিফা-এএফসির ফান্ড বণ্টনে জোরালো ভূমিকা রাখেন এই পল স্মলি। সোহাগঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এই পলের ওপর কাজী সালাউদ্দিনের আস্থা এতই বেশি, সেদিনও এক গণমাধ্যমে তিনি বলেছেন, ‘ছোটন পরিবর্তনযোগ্য, পল নয়।’ এই পলের মোহ এতটাই, ‘চাকরি ছেড়ে দেব’ বলে বেতন বাড়িয়ে নিয়েছেন। ওমেন্স সুপার লিগের স্বত্বাধিকারী কে-স্পোর্টস হলেও তারা শুধু আয়োজনে ব্যস্ত। পলের কাঁধে সবকিছুর দায়িত্ব দিয়েছেন সালাউদ্দিন।

বাফুফে স্টাফদের মধ্য থেকেই অভিযোগ আছে, কোচ নিয়োগ, কোচিং লাইসেন্স বাণিজ্য, কোচদের ওপর খবরদারি– সব নেতিবাচক বিষয়ই পল স্মলির মধ্যে আছে। অনুযোগ আছে, এই পল স্মলির মানসিক যন্ত্রণার কারণেই চাকরি ছেড়েছেন গোলাম রব্বানী ছোটন। যাঁর জন্য কোচের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন ছোটন, সেই পল স্মলিকে আরও ক্ষমতা দিয়েছে দেশের ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বিতর্কিত এ টেকনিক্যাল ডিরেক্টর নাকি ছোটন-পরবর্তী নারী ফুটবলে ঝড় সামলানোর দায়িত্ব নিয়েছেন। টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হলেও পল শুধু মেয়েদের ফুটবল নিয়েই কাজ করছেন। অথচ ছেলেদের ফুটবল নিয়ে তাঁকে খুব একটা কাজ করতে দেখা যায় না। তবে কোচ নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি থাকেন সামনের সারিতে। কমিশন নিয়ে অযোগ্য ব্যক্তিকে কোচিং লাইসেন্স দেওয়ার অভিযোগও আছে স্মলির বিরুদ্ধে। এত সমালোচনার পরও স্মলির ক্ষমতাও যেন বেড়ে যাচ্ছে। তার জ্বলন্ত উদাহরণ ওমেন্স সুপার লিগ। ৫ দিনের মতো বাকি নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ শুরু হতে। ফুটবল-সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করছেন, এই প্রতিযোগিতার জন্য বিদেশি কোচ এবং ফুটবলার আনার দায়িত্ব স্মলির কাঁধে দিয়ে দেওয়ার অন্যতম কারণ কমিশন বাণিজ্য। যদিও বাফুফে কর্তারা এসব বিষয় সব সময় অস্বীকার করে আসছেন। এর পরও বারবার প্রশ্ন উঠছে, স্মলি কেন সব কাজে মাথা ঘামাবেন।

ওমেন্স সুপার লিগ নিয়ে এত আলোচনা, কিন্তু যাঁদের জন্য আয়োজন সেই মেয়েরা টুর্নামেন্ট নিয়ে এখনও অন্ধকারে। ফেডারেশন থেকে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পাননি বলে গতকাল জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী ফুটবলার। কোন চারটি দল অংশ নেবে, কিংবা কীভাবে দল গঠন হবে তাও অজানা মেয়েদের কাছে। প্রিয় কোচ ছোটনের পদত্যাগে মন ভেঙে গেছে মেয়েদের। তাঁরা এসব নিয়ে ভাবছেন না। বরং নারী ফুটবল দল করা নিয়ে যাঁদের নাম ফুটবলাঙ্গনে চলছে বেশি, সেই ফর্টিস এফসি এবং আতাউর রহমান ভূঁইয়া স্পোর্টিং ক্লাবের কর্তারাই কিছু জানেন না। দু’দলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ওমেন্স সুপার লিগে না থাকার বিষয়টি সমকালের কাছে পরিষ্কার করেছেন। তাহলে কারা মেয়েদের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে দল কিনছে? সেটা জানতে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি কে-স্পোর্টসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহাদ করিম।’

তবে কিরণের কথাতেই স্পষ্ট, নারী লিগ নিয়ে যে শঙ্কার মেঘ জমেছে, তা কাটেনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.