ওএমএসের চাল গরিবদের মাঝে বিক্রি করতে না দিয়ে রেখে দিলেন কাউন্সিলর

0
131
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল করিম

খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মূলত নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় খোলাবাজারে (ওএমএস) চাল বিক্রি করা হয়। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় ২৭টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ে সপ্তাহে দুই টন (দুই হাজার কেজি) করে চাল বরাদ্দ হয়। নিয়ম অনুযায়ী খোলাবাজারে বিক্রি হওয়া এসব চাল ৩০ টাকা দরে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৫ কেজি কিনতে পারেন। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের একজন প্রতিনিধির উপস্থিতিতে নির্দিষ্ট একজন ডিলার ওই সব চাল বিক্রি করেন। স্থানীয় কাউন্সিলর পুরো বিষয়টি তদারক করেন।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের তথ্য বলছে, ২১ মার্চ সাদ্দাম হোসেন নামের একজন ডিলার ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ের সামনে চাল বিক্রি করেছেন। কিন্তু ২২ ও ২৩ মার্চ সরেজমিনে স্থানীয় অন্তত ২০ জনের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৭ জনের বসবাস কাউন্সিলর কার্যালয়ের ১০০ গজের মধ্যে। তাঁরা ওএমএসের চালের নিয়মিত ক্রেতা। মঙ্গলবার ওই এলাকায় ওএমএসের কোনো চাল বিক্রি হয়নি বলে প্রত্যেকেই জানিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ওএমএসের চাল বিক্রির আগে পাইকপাড়া জামে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই দিন মাইকেও কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। এমনকি তাঁরা চালের জন্য কাউন্সিলর কার্যালয়ে এসে ফেরত গেছেন। পাইকপাড়া জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. শাহীন মাইকে ঘোষণা না দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের সূত্র জানায়, পরিবেশক সাদ্দাম হোসেনের নামে বরাদ্দ দুই টন চাল মঙ্গলবার সকালে একটি ট্রাকে করে কাউন্সিলর কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কাউন্সিলরের লোকজন তখন চালের বস্তাগুলো ট্রাক থেকে নামিয়ে স্থানীয় আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের দুটি কক্ষে নিয়ে রাখেন।

‘যারা কিনতে পারে না, তাদের আমি নিজের টাকায় চাল কিনে দিই। আমি কেন সরকারি চাল রেখে দেব? আমি কি এই চাল বিক্রি করে খাওয়া লোক?’

সরকারিভাবে পরিবেশকের তালিকায় সাদ্দাম হোসেনের নাম থাকলেও সবকিছু দেখাশোনা করেন তাঁর বাবা আক্তার হোসেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে দুজন কর্মকর্তার সামনে তিনি বলেন, ২১ মার্চ ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ের সামনে চাল বিক্রি করতে গেলে কাউন্সিলর খোলাবাজারে চাল বিক্রি করতে দেননি। পরে কাউন্সিলরের লোকজন চালগুলো নিয়ে পাশের আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ভেতরে রেখে বস্তাগুলো ফেরত দিয়ে দেন। আক্তার হোসেন বলেন, ‘কাউন্সিলরের তত্ত্বাবধানে চাল বিক্রি করি। তিনি নিজে যদি বলেন চালগুলো তাঁকে দিয়ে দিতে, সে ক্ষেত্রে কিছু করার থাকে না।’

এদিকে গতকাল দুপুরে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, ছয়জন মিস্ত্রি বিদ্যালয়টির দেয়ালে রঙের কাজ করছেন। দুই সপ্তাহ ধরে কাজ চলছে উল্লেখ করে একজন রংমিস্ত্রি জানালেন, মঙ্গবার ট্রাকভর্তি চাল নামানো হয়েছে। বস্তাগুলা ১০১ ও ১০২ নম্বর কক্ষে রাখা হয়েছে। ওই কক্ষ দুটি তখন তালাবদ্ধ পাওয়া যায়।

বিদ্যালয়টির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি স্থানীয় কাউন্সিলর আবদুল করিম। মুঠোফোনে আদর্শ বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রতিবছরই রোজার সময় কাউন্সিলর সাহেব এখানে চাল রেখে তা প্যাকেটিং করেন। পরে তা ঈদ উপলক্ষে এলাকার লোকজনের মাঝে বিতরণ করেন।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর আবদুল করিম বলেন, ২১ মার্চ সকাল ১০টা থেকে সোয়া ১২টা পর্যন্ত তাঁর লোকজন দিয়ে ওএমএসের সব চাল বিক্রি করেছেন। অন্য সপ্তাহগুলোতেও একইভাবে তিনি চালগুলো বিক্রি করেছেন। কাউন্সিলর বলেন, ‘যারা কিনতে পারে না, তাদের আমি নিজের টাকায় চাল কিনে দিই। আমি কেন সরকারি চাল রেখে দেব? আমি কি এই চাল বিক্রি করে খাওয়া লোক?’

বিষয়টি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এমন একটি খবর শুনেছি। ব্যাপারটি খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সরাসরি তদারকের কথা। বিষয়টি যাচাই করব। প্রমাণ পেলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আসমা উল হোসনা বলেন, ‘কাউন্সিলর যদি সব চাল রেখে দেন, তাহলে তা অপরাধমূলক কাজ। আমরা বিষয়টি তদন্তে একটি কমিটি করব। তারপর নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজও ঘটনার সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.