বহুতল ভবনে আগুন লাগা কিংবা এসি বিস্ফোরণের ঘটনা আমরা প্রায়ই দেখি। ঘরের বা কর্মক্ষেত্রের যে যন্ত্রটি গরমে আমাদের আরামের কারণ হয়, তীব্র দাবদাহে স্বস্তি দেয়, মুহূর্তেই তা হয়ে উঠতে পারে জীবননাশের কারণ। এসির বিস্ফোরণ বা নানা দুর্ঘটনা মূলত মানুষের একটু সচেতনতার অভাবেই হয়। সচেতন থাকলে সুরক্ষিত রাখা যায় নিজেদের।
এসির বিস্ফোরণ বা দুর্ঘটনা এড়াতে এটি ব্যবহারে থাকতে হবে সতর্ক। এ ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন ওয়ালটন এয়ারকন্ডিশনারের ব্র্যান্ড ম্যানেজার খলিলুর রাহমান।
এসি বিস্ফোরণ কেন হয়?
শীতের সময়টা আমরা এসি বন্ধ করে রাখি। ফলে দীর্ঘদিন অচল থাকার পর গরমের শুরুতে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ না করে এসি চালানোর কারণেই বিস্ফোরণের ঘটনাগুলো ঘটে। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে বছরে অন্তত তিনবার এবং বিশেষভাবে শীতকালের শেষে এসির সার্ভিসিং করানো জরুরি। সার্ভিসিং নিয়মিত করা না হলে এসির পাইপলাইন এবং গ্যাস সিলিন্ডারে ব্লক তৈরি হয়। এ কারণে গ্যাসপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়, বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
এ ছাড়া দু-তিন মাস এসি না চালানোর কারণে এসির তরল বাষ্প হয়ে যায়। সেই অবস্থায় যন্ত্রটি চালালে কমপ্রেসরে বেশি চাপ পড়ে। এর ফলেও বিস্ফোরণের ঘটনাগুলো ঘটে। এ ছাড়াও একেকটি এসি স্থাপন করতে ভবনের বাইরে যে পরিমাণ জায়গা দরকার, সেই পরিমাণ জায়গায় এসিটি বসানো হয় না। একটা মেশিনের গরম আরেকটা মেশিনে ছড়িয়ে যায়, ঘটে বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটে। একেকটি এক টন এসি ১৫০ স্কয়ারফিটের বেশি জায়গায় যেন চালানো না হয় এই বিষয়টার দিকেও সচেতন হতে হবে।
জেনে নিই, এসির বিস্ফোরণের কারণ এবং কী করলে এমন দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
এসি বিস্ফোরণের কারণ
- এসির কনডেনসারে ময়লা থাকলে কমপ্রেসরে উচ্চ তাপমাত্রা ও উচ্চচাপ তৈরি হয়ে বিস্ফোরণ ঘটে।
- এসির ভেতরের পাইপের কোথাও ব্লকেজ হলে এসির ভেতরে উচ্চচাপ তৈরি হয়। ফলে কমপ্রেসর বিস্ফোরিত হতে পারে।
- কমপ্রেসরে নির্দিষ্ট সীমার চেয়ে বেশি রেফ্রিজারেন্ট চার্জ করলে উচ্চচাপ তৈরি হয়ে। বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
- কমপ্রেসরে প্রয়োজনীয় পরিমাণ রেফ্রিজারেন্ট না থাকলে ভেতরের তাপমাত্রা নির্দিষ্ট সীমার চেয়ে যখন বেড়ে যায় তখন দুর্ঘটনা ঘটে।
- এসির ভ্যাকুয়াম সঠিকভাবে না করলে
- সঠিক রেটিংয়ের সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার না করলে।
- কমপ্রেসরে সঠিক পদ্ধতিতে রেফ্রিজারেন্ট চার্জ না করলে কমপ্রেসরে হাই প্রেশার তৈরি হয়ে বিস্ফোরণ ঘটে।
দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে
- উন্নতমানের এবং সঠিক স্পেকের পাওয়ার কেবল ব্যবহার করতে হবে।
- ব্যবহৃত এসির কনডেনসার নিয়মিত পরিষ্কার রাখা।
- কমপ্রেসরে উচ্চতাপ ও উচ্চচাপ নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে।
- কমপ্রেসরে প্রয়োজনীয় রেফ্রিজারেন্ট আছে কি না, তা অভিজ্ঞ ও বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠানের টেকনিশিয়ান দ্বারা পরীক্ষা করা।
- এসির ভেতরের পাইপের কোথাও ব্লকেজ আছে কি না, পরীক্ষা করা।
- কমপ্রেসরে নির্দিষ্ট সীমার চেয়ে বেশি রেফ্রিজারেন্ট চার্জ না করা।
- সঠিক রেটিংয়ের সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা।
- সঠিকভাবে এসির ভ্যাকুয়াম করা।
- বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ডের এসি, কমপ্রেসর এবং রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার করা।
- ভালো ব্র্যান্ডের এসি এবং কমপ্রেসর কেনা। মানহীন যন্ত্রসামগ্রী ব্যবহার থেকে বিরত থাকা।