আকবর আলী বলটা ব্যাটে নিতে পারলেন না। লেগ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে বল তাঁর ব্যাটের পাশ দিয়ে চলে গেল পেছনে উইকেটকিপারের হাতে। আম্পায়ার মেললেন দুই হাত—ওয়াইড।
এই এক ওয়াইডে যেন কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন আকবর। তাঁর শিশুতোষ এক ভুলে জেতা ম্যাচ হারতে বসেছিল বাংলাদেশ ‘এ’ দল। সেখান থেকে সুপার ওভারে সুয়াশ শর্মার ওয়াইডেই নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের জয়। যে জয় বাংলাদেশকে তুলে দিয়েছে রাইজিং স্টারস এশিয়া কাপের ফাইনালে।
নাটকীয় সমাপ্তির এই জয়ে বাংলাদেশের নায়ক ডানহাতি পেসার রিপন মণ্ডল। সুপার ওভারে প্রথম দুই বলেই ভারত ‘এ’ দলের দুই উইকেট তুলে নিয়েছেন রিপন। এরপর ১ রানের লক্ষ্যে নামা বাংলাদেশ প্রথম বলে উইকেট হারানোর পর ওই ওয়াইডের রানেই পেয়েছে জয়ের দেখা।
সুপার ওভারের আগে চরম নাটকীয়তা ছিল ২০ ওভারের মূল খেলায়। কাতারের দোহায় প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ ‘এ’ দল করে ৬ উইকেটে ১৯৪। তাড়া করতে নামা ভারত ‘এ’ দলের শেষ দুই ওভারে দরকার ছিল ২১ রান, হাতে ছিল ৫ উইকেট।
ওই মুহূর্তে বল হাতে নিয়ে ৬ বলে মাত্র ৫ রান দেন রিপন, তুলে নেন ১টি উইকেটও। শেষ ওভারে বোলিংয়ে গিয়ে রাকিবুল হাসান প্রথম ৫ বলে দেন ১২ রান। ভারতের দরকার পড়ে ১ বলে ৪ রান। নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় শেষ বলেই।

বাউন্ডারির চেষ্টা করলেও ব্যাটসম্যান হার্শ দুবের শট চলে যায় সোজা লং অন ফিল্ডারের কাছে। হতাশায় আচ্ছন্ন দুবে অনেকটা অনিচ্ছাতেই দ্বিতীয় রানের জন্য দৌড়ান। এ দিকে উইকেটকিপার আকবর বল হাতে পেয়ে স্টাম্প ভাঙার চেষ্টা করেন। ভেবেছিলেন দুবে রানআউট হবেন, কিন্তু স্টাম্প তো ভাঙেইনি, কোনো ফিল্ডারও ছিলেন না কাছাকাছি। ফলাফল: ভারতের দুই ব্যাটসম্যানই সুযোগ পেয়ে তৃতীয় রান নিয়ে নেন। ম্যাচ হয়ে যায় টাই।

এরপর সুপার ওভারে আবারও জ্বলে ওঠেন সেই রিপনই। তাঁর প্রথম বল ছিল ইয়র্কার, স্ট্রাইকে থাকা ভারত অধিনায়ক জিতেশ শর্মা রিভার্স–শট খেলতে গিয়ে বোল্ড। পরের বল তুলে মারতে গিয়ে কাভারে ক্যাচ দেন আশুতোষ শর্মা।
ভারত ০ রানে গুটিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের দরকার পড়ে ১ রান। কিন্তু শুরুতে স্ট্রাইক নেওয়া ইয়াসির আলী প্রথম বলেই লং অনে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। বাংলাদেশের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আকবর ব্যাট করতে নামার পর সুয়াশ দেন ওয়াইড, ‘প্রায়শ্চিত্ত’ হয়ে যাওয়ায় দুই হাতে জড়ো করে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গি করেন বাংলাদেশ ‘এ’ দলের অধিনায়ক।
এর আগে ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে এই আকবরই নেহাল ওয়াদেরার সহজ ক্যাচ গ্লাভস থেকে ফেলে দেন। অবশ্য ক্যাচ–মিসে দলকে আরও বড় বিপদে ফেলেছিলেন জিশান আলম। ভারতের যখন শেষ ৩ বলে ৮ রান দরকার, তখন বাউন্ডারিতে সহজ ক্যাচ ফেলেন জিশান, এমনকি মিসের পর বাউন্ডারিও ঠেকাতে পারেননি। সমীকরণ নেমে আসে ২ বলে ৪ রানে। রাকিবুল পঞ্চম বলে উইকেট নিলে শেষ বলেও একই সমীকরণ থেকে যাওয়ার পরই আকবরের ওই ভুল আর ম্যাচ টাই হয়ে গড়ায় সুপার ওভারে।

হাবিবুরের পর মেহরব
বাংলাদেশের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ১৯৪ রানের পেছনে মূল অবদান হাবিবুর রহমান ও এস এম মেহরবের। ওপেনিংয়ে নামা হাবিবুর ৩ চার ৫ ছক্কায় ৪৬ বলে করেন ৬৫ রান। আর শেষ দিকে মেহরব মাত্র ১৮ বলের ইনিংসে ৬ ছক্কা ১ চারে অপরাজিত থাকেন ৪৮ রানে।
বাংলাদেশ ‘এ’ দল ১৯তম ওভারে ২৮ আর ২০তম ওভারে ২২ রান নিয়ে সংগ্রহটা দুই শর কাছাকাছি নিয়ে যায়, যা বৈভব সূর্যবংশী (১৫ বলে ৩৩) ও প্রিয়াংশ আর্যের (২৩ বলে ৪৪) ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে তাড়া করার পথেই ছিল ভারত। তবে শেষের উত্থান–পতন আর নানা নাটকীয়তার পর হেসেছে বাংলাদেশই।
আগামী রোববারের ফাইনালে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান–শ্রীলঙ্কার মধ্যকার জয়ী দল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ‘এ’ দল: ২০ ওভারে ১৯৪/৬ (হাবিবুর ৬৫, মেহরব ৪৮*, জিশান ২৬; গুরজাপনীত ২/৩৯)।
ভারত ‘এ’ দল: ২০ ওভারে ১৯৪/৬ (প্রিয়াংশ ৪৪, সূর্যবংশী ৩৮, জিতেশ ৩৩; রাকিবুল ২/৩৯, আবু হায়দার ২/৪৪)।
ফল: বাংলাদেশ সুপার ওভারে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: রিপন মন্ডল।

















