এবার ৩৩ হাজার রাজনৈতিক কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেবে ইসি

0
137

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ও ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলের প্রায় ৩৩ হাজার নেতাকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরমধ্যে সংসদ নির্বাচনে ১০ হাজার ৫০০ জন এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ২২ হাজার ২৭৫ জন রয়েছেন। মাস্টার ট্রেইনার হিসাবে প্রত্যেককে দিনব্যাপী এ প্রশিক্ষণ দেবে ইসি। নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে থেকে এ প্রশিক্ষণ শুরু হবে।

এর লক্ষ্য হিসাবে বলা হচ্ছে-প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নেতাকর্মীরা নিজ দলের পোলিং এজেন্টদের নির্বাচনি আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী দায়িত্ব, কর্তব্য ও করণীয় প্রশিক্ষণ দেবেন। এতে ভোটগ্রহণের দিন পোলিং এজেন্টরা সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হন। নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (ইটিআই) ‘প্রশিক্ষণ বর্ষপঞ্জি’তে এবারই প্রথম এ ধরনের প্রশিক্ষণকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি এটি অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র আরও জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ২২ ধরনের প্রশিক্ষণের আয়োজন করবে ইটিআই। এর আওতায় বিভিন্ন পর্যায়ের অন্তত ৯ লাখ ৮৮ হাজার ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এরমধ্যে রয়েছেন সাংবাদিক ও দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরাও। তাদেরও দিনব্যাপী নির্বাচনি প্রশিক্ষণ দেবে কমিশন। যদিও ওই প্রশিক্ষণের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ওরিয়েন্টেশন বা ব্রিফিং’। কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ে পৃথকভাবে এসব প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে।

ইটিআই’র একাধিক কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এবারই প্রথম রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওইসব প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য সম্মানী হিসাবে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। তারা আরও জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ আগামীকাল ২ সেপ্টেম্বর শনিবার শুরু হবে। এরপরই ধারাবাহিকভাবে প্রশিক্ষণ চলতে থাকবে।

রাজনৈতিক কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম বলেন, এখন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষকদের (টিওটি) ট্রেনিং শুরু হবে। এরপর রাজনৈতিক দলের মনোনীত ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ওই প্রশিক্ষণ শুরু হতে এখনো অনেক সময় বাকি আছে। তিনি বলেন, নির্বাচনে ভোটকক্ষে পোলিং এজেন্ট হিসাবে নিজ দায়িত্ব কী কী তা যাতে জানতে পারেন সেজন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের বিষয়েও সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কারণ আগামী নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি উৎসাহিত করা হবে।

নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক না হলে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ কাজে আসবে না বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক না হলে সেটি নির্বাচন বলেই গণ্য হবে না। নির্বাচনও গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই কমিশনের উচিত, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া। নইলে এ প্রশিক্ষণ কোনো কাজে আসবে না। উল্টো রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় হবে।

প্রসঙ্গত, আগামী ডিসেম্বর মাসের শেষ বা জানুয়ারির শুরুতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তফশিল ঘোষণা করা হবে নভেম্বরে। সংসদ নির্বাচনের পরপরই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

জানা গেছে, গত ২১ আগস্ট অনুষ্ঠিত নির্বাচন কমিশনের সভায় নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষণ বর্ষপঞ্জি অনুমোদন দেওয়া হয়। আগামী সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দিতে ১০ হাজার ৫০০ জন মাস্টার ট্রেইনারকে নির্বাচন কমিশনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা উল্লেখ করেছে ওই বর্ষপঞ্জিতে। এতে বলা আছে, প্রতি ব্যাচে ৩০ জন করে মোট ৩৫০টি ব্যাচে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ প্রশিক্ষণের জন্য প্রার্থীরা তাদের মাস্টার ট্রেইনার নির্ধারণ করে দেবেন। সংশ্লিষ্ট জেলা বা উপজেলায় মাস্টার ট্রেইনারদের এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

প্রশিক্ষণে সংবিধান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও) ও নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত জরুরি কার্যপ্রণালীর বিষয়ে ধারণা দেওয়া হবে। পোলিং এজেন্টদের নিজ ভূমিকা সম্পর্কে সচেতন করে তোলা হবে। অপরদিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলের ২২ হাজার ২৭৫ জনকে একই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ৭৪৩টি ব্যাচে তাদের এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

এছাড়া জাতীয় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর সুবিধাজনক সময়ে কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় ২০০ জন সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষককে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। মাঠ পর্যায়ের সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হবে সংশ্লিষ্ট এলাকায়। সেখানেও ৬৪০০ জন সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষককে একই ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের কেন্দ্রীয়ভাবে একদিনের ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হবে।

কোন নির্বাচনে কতজন প্রশিক্ষণ পাবেন : সংসদ নির্বাচনে প্রায় ৯ লাখ ৮৮ হাজার ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রথমে শুরু হবে উপজেলা ও থানা ভিত্তিক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ। বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী আগামী ২ সেপ্টেম্বর চার ব্যাচে ১০০ জন কর্মকর্তার এ প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে। এ ধাপে ঢাকা, পটুয়াখালী ও বরগুনার কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তারা সবাই সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের উপজেলা বা থানা পর্যায়ের কর্মকর্তা। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ১২৮টি ব্যাচে প্রায় তিন হাজার ২০০ জন কর্মকর্তাকে ধাপে ধাপে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আগামী ৭ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ৯টি ব্যাচে ২২৬ জন বিভাগীয় কমিশনার, উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক, পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত এক মাস চলবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা বা থানা নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ। ৪১টি ব্যাচে এক হাজার কর্মকর্তাকে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ৯ লাখ ১১ হাজার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্রশিক্ষণ শুরু হবে নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে থেকে। ২৬ হাজার ৫০টি ব্যাচে উপজেলা ও থানা পর্যায়ে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ নির্বাচনে ৪২ হাজার ৫০০ জন প্রিজাইডিং, দুই লাখ ৬২ হাজার সহকারি প্রিজাইডিং এবং ৫ লাখ ২৪ হাজার পোলিং কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

তফশিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের একদিনের প্রশিক্ষণ দেবে ইসি। ওই প্রশিক্ষণে আইজি, বিভাগীয় কমিশনার, উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক, পুলিশ কমিশনারসহ ১০০-১২০ জন কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন। অপরদিকে আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রশিক্ষণ শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। ওই মাসে ৬৫০ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত চলবে উপজেলা পর্যায়ের প্রশিক্ষণ। সেখানেও বিভিন্ন পর্যায়ের নয় লাখের বেশি ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.