এবার পদ্মা সেতু রক্ষা প্রকল্প বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন, আতঙ্ক

0
29
শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন শুরু

বর্ষা মৌসুম শুরু হতেই শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের রক্ষা বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বসতঘর, দোকানপাটসহ ২৬টি স্থাপনা। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে অন্তত ৬০০ পরিবারের।

বুধবার (৯ জুলাই) দুপুর পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধের ওই অংশে ১৩০ মিটার নদীতে বিলীন হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে বিপদে পড়বে হাটবাজার, ঘরবাড়ি, গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও পুরো জনপদ। আতঙ্কে অনেকেই ইতোমধ্যে নদীর পাড় থেকে ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছেন। উপজেলার আলম খার কান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সি কান্দি ও ওছিম উদ্দিন মুন্সি কান্দি গ্রামের অন্তত ৬০০ পরিবার এখন ভাঙনের ঝুঁকিতে আছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে নদীর তীরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রায় এক হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পূর্ব সতর্কতায় ঘর সরিয়ে নেওয়া পরিবারগুলোকে দেওয়া হবে প্রয়োজনীয় সহায়তা।

২০১০-২০১১ অর্থবছরে পদ্মা সেতু থেকে মাঝিরঘাট হয়ে পূর্ব নাওডোবা আলমখার কান্দি জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ২ কিলোমিটার পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। এতে ব্যয় হয় ১১০ কোটি টাকা। গত বছরের ৩ নভেম্বর থেকে বাঁধের নাওডোবা ইউনিয়নের মাঝিরঘাট এলাকায় ধস শুরু হয়।

গত বছরের ১৬ নভেম্বর বিকেল পর্যন্ত বাঁধটির প্রায় ১০০ মিটার ধসে পড়ে নদীতে। এতে কংক্রিটের সিসি ব্লকগুলো নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া এলাকাটির আশপাশে দেখা দেয় ফাটল। পরে বাঁধটির সংস্কারে দায়িত্ব দেওয়া হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। গত বছর ওই বাঁধের যে ১০০ মিটার অংশ বিলীন হয়েছিল সেখানে ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বালু ভর্তি জিওব্যাগ ও সিসিব্লক ফেলার কাজ শুরু হয়।

গত সোমবার (৭ জুলাই) বিকেলে নতুন করে ভাঙন দেখা দেয়। মাত্র দুই ঘণ্টার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয় ১৬টি বাড়ি ও ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ভাঙনের আশঙ্কায় সরিয়ে নেওয়া হয় ১৫টি দোকান।

স্থানীয় বাসিন্দা সুমন হাওলাদার বলেন, নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে পাড়ের কাছে চলে আসায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত বছর থেকে এই এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা এলাকাবাসী আতঙ্কের মধ্যে আছি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে শত শত পরিবার উদ্বাস্তু হয়ে যাবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান বলেন, বাঁধের ১৩০ মিটার নদীতে বিলীন হয়েছে। আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ভাঙনের পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। ইতোমধ্যে কিছু বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে প্রায় ৯০ জন শ্রমিক নিয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও পদ্মার পাড়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রায় এক হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করেছি। ভাঙন রোধে দ্রুত সময়ের মধ্যেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায় বলেন, ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ পুনর্নির্মাণের চেষ্টা চলছে। বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়া ২৬টি পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। যাদের ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিলীন হয়েছে, তাদের মধ্যে দুই বান টিন ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করছে প্রশাসন।

অতীতের অভিজ্ঞতা ও বর্তমান বিপর্যয় বিবেচনায় স্থানীয়রা বলছেন, স্থায়ী সমাধান ছাড়া পদ্মার ভাঙন রোধ করা সম্ভব নয়। জরুরি ভিত্তিতে টেকসই বাঁধ নির্মাণ এবং পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনার দাবি জানাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.