গত মার্চ মাসে তিন দিনের ব্যবধানে বন্ধ হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ব্যাংক সিলিকন ভ্যালি ও সিগনেচার। তখনই ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংকের ওপর নজর রাখা হচ্ছিল এই আশঙ্কায় যে এরপর তাদেরও একই পরিণতি হতে পারে। বছরের প্রথম প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর সেই শঙ্কা আরও জোরদার হয়েছে।
সিএনএনের সংবাদে বিশ্লেষকদের বরাতে বলা হয়েছে, এই ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংকের ধস আসন্ন।
নিউইয়র্কভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান গর্ডন হ্যাসকেটের বাজার বিশ্লেষক ডন বিলসন বলেছেন, প্রতিদিনই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে, ফার্স্ট রিপাবলিক ভয়াবহ বিপদের মুখে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ফেডারেল ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স করপোরেশন (এফডিআইসি) সপ্তাহান্তে ব্যবস্থা নেয়, নাকি ছুটির মধ্যে; কারণ, তারা সাধারণত এই সময় ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।
গত সোমবার ফার্স্ট রিপাবলিক জানায়, বছরের প্রথম প্রান্তিকে তাদের আমানত ৪১ শতাংশ কমে গেছে। এ ঘটনার জেরে মঙ্গলবার তাদের শেয়ারের দর ৪৯ শতাংশ এবং বুধবার ৩০ শতাংশ পড়ে যায়।
শেয়ারের দর এভাবে পড়ে যাওয়ার কারণে মঙ্গল ও বুধবার নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জে ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংকের লেনদেন কয়েকবার বন্ধ হয়ে যায়।
এই বাস্তবতায় ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংক কৌশলগত অবস্থান নির্ধারণ করছে। তারা বলছে, ব্যাংক বাঁচাতে তারা স্থিতিপত্র পুনর্গঠন করছে।
ওয়েডবুশ সিকিউরিটিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেভিড চিয়াভেরিনি সিএনএনকে বলেন, এখন ফার্স্ট রিপাবলিকের সামনে তিনটি পথ খোলা।
সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক: মার্কিন ব্যাংকের ধসে বিশ্বজুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলো কারা
প্রথমত, ফার্স্ট রিপাবলিক যে পথে চলছে, সেই পথেই থাকবে। অর্থাৎ একক বা পৃথক সত্তা হিসেবে পরিকল্পনাহীনভাবে এগিয়ে যাওয়া। সে জন্য তাদের সিকিউরিটিস ও ঋণের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
চিয়াভেরিনি বলেন, এই পথ অনেক দীর্ঘ; কিন্তু তাদের হাতে যে পরিমাণ তারল্য আছে, তাতে তাদের পক্ষে সে পথে হাঁটা সম্ভব।
এদিকে ফার্স্ট রিপাবলিকের প্রধান নির্বাহী মাইকেল রফলার বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করেছেন, সেটা করার জন্য তাদের হাতে যথেষ্ট পরিমাণ তারল্য আছে। বিমাবিহীন আমানতের দ্বিগুণ পরিমাণ তারল্য তাদের হাতে আছে; বড় ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে পাওয়া ৩০ বিলিয়ন বা ৩ হাজার কোটি ডলার ছাড়াই।
দ্বিতীয়ত, চিয়াভেরিনি বলেন, ফার্স্ট রিপাবলিক তাদের কিছু ঋণ ও সিকিউরিটিস ক্রয়মূল্যে বিক্রি করার চেষ্টা করতে পারে। এর বিনিময়ে ক্রেতারা ফার্স্ট রিপাবলিকে পছন্দমতো ইকুইটি লাভ করতে পারেন।
কিন্তু বিষয়টি ফার্স্ট রিপাবলিকের জন্য কঠিন হয়ে যায়, কেননা ওসব সম্পদ বাজারমূল্যের চেয়ে খানিকটা বেশি দামেই বিক্রি হবে। ব্যাংকটির যেসব বন্ড ২০৪৬ সালে মেয়াদোত্তীর্ণ হবে, সেগুলো বর্তমানে কেবল ৪৩ সেন্টে লেনদেন হচ্ছে।
এদিকে বড় ব্যাংকগুলোও কঠিন পরিস্থিতিতে আছে। ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যর্থ হলে এফডিআইসি পদ্ধতিগত ঝুঁকি এড়াতে বিমাবিহীন আমানতেরও হয়তো বিমা দেবে।
এতে অনেক অর্থ প্রয়োজন। সেই অর্থের বেশির ভাগই আসবে বড় ব্যাংক থেকে। এতে তাদের শত শত কোটি ডলার প্রয়োজন হবে। গত মাসে জেপি মর্গান অ্যান্ড চেজ যে তাদের তিন হাজার কোটি ডলার দিয়েছে, তার বাইরে আরও অনেক অর্থ ব্যয় করতে হবে। এ ছাড়া মার্চ মাসের শুরুতে জে পি মরগ্যান ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংককে ৭ হাজার কোটি ডলার লাইন অব ক্রেডিট দিয়েছে।
বিষয়টি ব্যাংকগুলোর জন্য অনেকটা এ রকম হয়ে দাঁড়িয়েছে: এখন কয়েক শ কোটি ডলার ব্যয় করা অথবা পরবর্তীকালে আরও বেশি অর্থ ব্যয় করা।
তৃতীয়ত, সিলিকন ভ্যালি ও সিগনেচার ব্যাংকের মতো নিয়ন্ত্রক সংস্থার অধীনে চলে যাওয়া। সে ক্ষেত্রে যেটা হয় তা হলো, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা সরকারের কোনো সংস্থা ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়ে আমানতকারীদের সুরক্ষা দিতে ব্যাংকের সম্পদ বিক্রি করে দেয়। এই বন্দোবস্তে শেয়ারহোল্ডার, আমানতকারী, কর্মী—সবার ওপরই বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। সেই সঙ্গে আর্থিক খাতের ওপরও বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।