কেমন আছেন?
ভালো আছি। এখন বাবার বাড়ি রাজশাহীতে আছি। ঈদের বেড়ানো চলছে। কয়েক দিনের মধ্যে ঢাকায় ফিরব।
‘মহানগর ২’ দেখে মনে হয়েছে, মিতু চরিত্রে বুঝি আপনি ছাড়া বিকল্প কেউ ছিল না। এমনটা কি আর কেউ বলেছে?
আমি এখন সবার আপা হয়ে গেছি। ফেসবুক ইনবক্সে অপরিচিত অনেকে বলছেন, আপনাকে আমার আপার মতো লাগছে। তার মানে, মিতু চরিত্রটি সবার মনে ধরেছে।
সবাই যখন আপা বলে ডাকছে, আপনার কেমন লাগছে?
কোনো কাজ প্রচারের পর আমাদের অঙ্গনের মানুষেরা তো টুকটাক কথা বলে। কিন্তু বাইরের মানুষের কাছে শোনাটাই অথেনটিক মনে হয়। ভাই–বোনের চরিত্রটা তো ভীষণ আবেগের একটা জায়গা। কাজটি করতে গিয়ে আমি ভীষণ আবেগপ্রবণ হয়েছি। সবার কাছ থেকে এখন যেভাবে প্রশংসা পাচ্ছি, ভীষণ ভালো লাগছে।
মিতু চরিত্রটা হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াটা কেমন ছিল?
আমার জন্য ডিফিকাল্ট; কারণ, আমার তো আসলে কোনো ভাই–বোন নাই। বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে। এ ধরনের কোনো পরিস্থিতিতেও পড়িনি—আমার ভাই জেলে, তাকে বের করে আনতে হবে, জীবন-মরণ সমস্যা। তবে পরিচালক আশফাক নিপুণ ভাই হেল্প করেছেন। এক মুহূর্তের জন্য চরিত্র থেকে বের হতে দেননি। একটা ভালনারেবল মেয়ে, যে প্রচণ্ড স্ট্রং, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। তার একটাই চেষ্টা, পরিবারের কথা ভেবে ছোট ভাইকে জেল থেকে বের করতে হবে।
শুটিংয়ের আগে কোনো মহড়া হয়েছিল কি?
একদিন লুক টেস্ট হয়েছে। এরপর একদিন কথা হলো। তারপর সরাসরি শুটিং। কোনো মহড়াও হয়নি। এমন না যে আগে থেকে স্ক্রিপ্ট পড়েছি। আশফাক নিপুণ ভাইয়ের এখানে স্ক্রিপ্ট পেয়েছি শট দেওয়ার ঠিক আগে। আসলে আমি জিনিয়াস (হাসি)। এর আগে প্রমাণ করার সুযোগ হয়নি।
এর আগে প্রমাণের সুযোগ পাননি বুঝি?
জীবিকার তাগিদে আমাদের অনেক ধরনের কাজ করতে হয়। অনেক কাজই করেছি। কেন জানি মনে হয়, আমাদের অঙ্গনটা এখন একটা সিন্ডিকেটের মতো হয়ে গেছে, যারা নিজেদের ঘরানার লোকজন নিয়েই কাজ করে। ওই ঘরানার নায়িকা বা নায়ক যদি একের পর এক ফ্লপ প্রোডাকশনও দেয়, তারপরও তাদের নিয়ে কাজ করে। নিপুণ ভাই যে হুট করে ফোন করে আমাকে নিয়ে কাজ করবেন, এটা ভাবিই নাই। আমাকে নিয়ে কাজ করে যখন ভালো আউটপুট এসেছে, আমার মতো এ রকম অভিনেত্রী টেলিভিশনে অনেক আছে, তাদের নিয়ে কাজ করেও তাহলে বাংলাদেশে শিল্পীর অভাব হবে না। মেধাবী আর্টিস্ট অনেক আছে, ডিরেক্টর কম। আর ডিরেক্টররা তাদের পছন্দের তালিকা নিয়ে কাজ করে।
দীর্ঘদিন ধরে বিনোদন অঙ্গনে কাজ করছেন। কিন্তু গেল কয়েক বছরে আপনি অনিয়মিত।
আরও ১০ বছর আগে যদি এভাবে ডিরেক্টররা আমাকে নিয়ে ভাবতেন, তাহলে হয়তো বাংলাদেশের দর্শকেরা এ রকম আরও ভালো কাজ পেত। আমি শুধু আমার কথা বলছি না, আমার মতো আরও অনেকে আছে, যারা সত্যিকার অর্থে ভালো অভিনয় করে, তাদের বেশি বেশি সুযোগ করে দেওয়া উচিত। তাদের নিয়ে ভাবলেই চিত্রটা পাল্টে যেত। আজকে নিপুণ ভাই যদি মহানগর–এ আমাকে না ভাবত, এভাবে আলোচনায় আসতে পারতাম না। আমাকে নিয়ে কেউ হয়তো কথাও বলত না।
শিল্পীদের নিয়ে পরিচালকদের ভাবনা কতটা জরুরি?
অনেক বেশি জরুরি। শিল্পী তো কারও কাছে গিয়ে কাজ চাইবে না। চাইলেও কি দেবে? এখনকার অনেকের মাথায় তো একটা প্রি–কনসেপ্ট থাকে। শিল্পীর মিনিমাম আত্মমর্যাদা আছে, সে তো কারও কাছে যেচে কাজ চাইবে না। আমরা যারা এত বছর ধরে কাজ করছি, তাদের আত্মমর্যাদা একটু বেশি। আর ওটাই আমাদের একমাত্র সম্বল।
আচ্ছা আপনার মা-বাবা দেখেছেন কি? দেখলে কী বলেছেন?
তাঁরা দেখেছেন। দেখে বলেছেন, এত বড় হয়ে গেছিস কবে। (হাসি)। অনেকের মতো তাঁরাও বললেন, ভাই–বোনের কেমিস্ট্রি এত ভালো হলো কীভাবে। এখানে অবশ্য দিব্যর কথা না বললেই নয়। সে–ও আমাকে মিতু (হয়ে উঠতে) যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। আমাদের চোখের সামনে ওরা দুই ভাই (দিব্য ও সৌম্য) বড় হয়েছে। আমার সামনে যখন দাঁড়িয়েছে, এমনিতে ওর প্রতি মায়া কাজ করেছে।
অভিনয় ভালো হওয়ার ক্ষেত্রে সহশিল্পীও তো খুব গুরুত্বপূর্ণ?
মানুষ বলে না, ভালো অভিনেতা–অভিনেত্রীদের সঙ্গে কাজ করাটা চ্যালেঞ্জিং। আমি বলব, চ্যালেঞ্জ না—এটা হচ্ছে সবচেয়ে সহজ। বিপরীতে ভালো অভিনেতা–অভিনেত্রী থাকলে অভিনয়টা অনেক ভালো হয়ে যায়। আমি মহানগর ২–এ তা আবারও ভালোভাবে উপলব্ধি করেছি।