শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে ধানখেতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একটি হাতির মৃত্যু হয়। এরপর সেখানে চলে আসে একপাল হাতি। তারা মৃত সঙ্গীকে খোঁজে, চিৎকার করতে থাকে। খেত মাড়িয়ে ফসল নষ্ট করে। সড়কে সড়কে ছড়িয়ে পড়ে হাতির পাল। এ ঘটনায় আশপাশের গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ আর বাইরে বের হওয়ার সাহস করতে পারেননি, ঘরবন্দী হয়ে পড়ে।
পরিবেশবাদী সংগঠন ‘সেফ দ্য নেচার অব বাংলাদেশ’–এর নালিতাবাড়ী উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম মণ্ডল বলেন, ‘হাতির স্মৃতিশক্তি খুবই প্রখর। কেউ তাদের ক্ষতি করলে তারা প্রতিশোধ নেয়। এ কারণেই হয়তো হাতির পাল ক্ষুব্ধ হয়ে এমন কর্মকাণ্ড করেছে।’
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার পূর্ব সমশ্চুড়া গ্রামে পাহাড়ের ঢালে বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে একটি বন্য হাতি মারা যায়। পরের দিন শুক্রবার বুরুঙ্গা গ্রামে হাতিটিকে মাটিচাপা দেওয়া হয়। প্রথমে এক দল হাতি এদিকে চলে আসে। এরপর এদের সঙ্গে যুক্ত হয় আরও হাতির পাল। এরা মৃত হাতিটিকে খোঁজার চেষ্টা করে। না পেয়ে চিৎকার করতে থাকে। এ ঘটনায় আশপাশের গ্রামগুলোয় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

একপর্যায়ে মৃত হাতিটিকে যেখানে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে, সেই জায়গাটি খুঁজে পায় হাতির দল। তারা পা দিয়ে জায়গাটি মাড়িয়ে ফেলে। এতে মৃত হাতির একটি পা বের হয়ে আসে। এরপর হাতির পাল মধুটিলা ইকোপার্ক–সংলগ্ন সীমান্ত সড়কে অবস্থান নেয়। সড়ক দিয়ে মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ওই এলাকার পাহাড়ি জমিতে হাতির পাল কৃষকের ছয় থেকে সাত একর বোরো ধানের খেত মাড়িয়ে দেওয়ায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
হাতির মৃত্যুর ঘটনায় শেরপুর বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আল আমিন বাদী হয়ে মামলা করেছেন। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে নালিতাবাড়ী থানায় মামলাটি হয়। এ মামলায় কৃষক জিয়াউল হক ও অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ কৃষক জিয়াউল হককে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে শেরপুর জেলা কারাগারে পাঠায়। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে বলে নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহেল রানা জানিয়েছেন।

মধুটিলা সীমান্ত সড়কের পাশে যে গুচ্ছগ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্প, সেখান থেকে ২০০ মিটার দূরে পাহাড়ের ঢালে মৃত হাতিটিকে মাটিচাপা দেওয়া হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা আশুরা বেগম (৪৮) বলেন, ‘আত্তির মিত্তুর সুমু ১৮ থেকে ২০টা আত্তি আছিলো, তার লগে ২৫ থেকে ৩০টা যোগ হইছে। রাইতে এক লগে বেকডি চিক্কুর করে। দুই রাইত ধইরা ডরে সবাই জাইগা থাইকা রাইত পার করছি।’
ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী বলেন, দুই দিন ধরে হাতির পাল মৃত হাতিটিকে মাটিচাপা দেওয়ার স্থান থেকে ৫০০ থেকে ১ হাজার মিটার দূরে অবস্থান করছে। রাতে ওই স্থানে ফিরে এসে চিৎকার করছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বন বিভাগের সদস্যরা নিরবচ্ছিন্ন নজরদারি চালাচ্ছেন। স্থানীয় লোকজনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোহেল রানা জানান, কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা করার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।