রাস্তায় এক নারীর গলার হার ছিনিয়ে নিয়ে দৌড় দেয় ছিনতাইকারী। ভুক্তভোগী নারীর চিৎকার শুনে বাসা থেকে বেরিয়ে ছিনতাইকারীর পথ রোধ করে দাঁড়ান গৃহিণী নিপা রানী সাহা (২৮)। তাঁর সাহসিকতায় ধরা পড়ে ছিনতাইকারী, গয়না ফেরত পান ভুক্তভোগী নারী। যশোরের কেশবপুর উপজেলা শহরের সাহাপাড়ায় গত সোমবার এ ঘটনা ঘটে। নিপা রানী সাহার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দিলীপ মোদক।
প্রশ্নঃ ছিনতাইকারীর সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন, আপনার ভয় লাগেনি?
নিপা রানী সাহা: কিসের ভয়। কোনো ভয় লাগেনি।
প্রশ্নঃ ভয় লাগেনি কেন?
নিপা রানী সাহা: তখন কেন জানি মনে অনেক সাহস এসে গিয়েছিল। এ ছাড়া আমি বাইরে এসে দেখি, রাস্তায় আরও কয়েকজন আছেন। সে কারণে ভয় লাগেনি। আমাকে আঘাত করতে পারে, সেই চিন্তা তখন মাথায় আসেনি।
প্রশ্নঃ ঘটনার সময় আপনি কী করছিলেন?
নিপা রানী সাহা: তখন আমি রান্না করছিলাম।
প্রশ্নঃ আপনার বাসা তো ঘটনাস্থলের কাছেই।
নিপা রানী সাহা: হ্যাঁ।
প্রশ্নঃ কী হয়েছিল তখন?
নিপা রানী সাহা: শুরুতে ঘটনা কী ঘটেছিল, তা আমি দেখিনি। পরে শুনেছি আমাদের পাড়ার রিতা বউদি (রিতা নন্দন) বাসা থেকে বের হয়ে বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। তখন ছিনতাইকারী তাঁর গলার হার ছিনিয়ে নিয়ে দৌড় দেয়।
প্রশ্নঃ আপনি বাইরে এসেছিলেন কি চিৎকার শুনে?
নিপা রানী সাহা: হ্যাঁ। রিতা বৌদি ধর ধর বলে চিৎকার করছিলেন।
প্রশ্নঃ বেরিয়ে কী দেখলেন?
নিপা রানী সাহা: ছিনতাইকারী দৌড়াচ্ছে। আর রিতা বউদি চিৎকার করছেন। বলছিলেন তাঁর ‘হার নিয়ে গেল’, ‘হার নিয়ে গেল’। শুনে আমার মনে হলো, আবারও পাড়ার মধ্যে ছিনতাইকারী ঢুকেছে।
প্রশ্নঃ আপনি কী করলেন?
নিপা রানী সাহা: আমি ছিনতাইকারীর পথ রোধ করে দাঁড়ালাম। তখন রাস্তার অপর দিকে থেকে একটি মোটরসাইকেল আসছিল। ছিনতাইকারী ভয় পেয়ে পা ফসকে নালার মধ্যে পড়ে যায়। তখন আমিও নালার সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে থাকি।
প্রশ্নঃ এরপর কী হলো?
নিপা রানী সাহা: আমার চিৎকার শুনে পাড়ার মহিলারাসহ আরও অনেকে এগিয়ে আসেন। তখন ছিনতাইকারী ভয়ে হারটি ফেলে দেয়। আমিই হারটি তুলে নিই।
প্রশ্নঃ ছিনতাইকারী ধরা পড়ার পরে আপনার কেমন লেগেছিল?
নিপা রানী সাহা: ভালো লেগেছে। কারণ, একজন যেহেতু ধরা পড়েছে, সেহেতু ছিনতাই কমবে আশা করা যায়।
প্রশ্নঃ ছিনতাইকারীকে কী করা হয়েছিল?
নিপা রানী সাহা: তাঁকে পুলিশে দেওয়া হয়েছে।
প্রশ্নঃ সাহাপাড়ায় কি প্রায়ই ছিনতাই হয়?
নিপা রানী সাহা: হ্যাঁ। কখনো মোটরসাইকেলে এসে, কখনো চলতি পথে মহিলাদের গয়না ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। মানুষ অতিষ্ঠ।
প্রশ্নঃ আপনার পরিবারে কে কে আছেন?
নিপা রানী সাহা: আমার স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও সন্তান।
প্রশ্নঃ আর কখনো যদি আপনার সামনে ছিনতাইকারী পড়ে, তখন কী করবেন?
নিপা রানী সাহা: অবশ্যই ভুক্তভোগীর সহায়তায় এগিয়ে যাব। আমার সাহস আরও বেড়ে গেছে। আমাদের পাড়ার মহিলারাও বলেছেন, সুযোগ পেলে তাঁরাও প্রতিরোধ করবেন।