এক বছরেই বিসিএস শেষ করার পথনকশা জানালেন পিএসসি চেয়ারম্যান

0
14
‘বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের রূপান্তর: অর্জন, চ্যালেঞ্জ ও সামনে এগোনোর পথ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় অতিথিরা। রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে

সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম বলেছেন, তাঁদের চালু করা ‘সার্কুলার সিস্টেম’ নামে নতুন ব্যবস্থায় প্রতি এক বছরেই একটি বিসিএস শেষ করা সম্ভব। তবে এতে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো কমিশনের প্রশাসনিক এবং আর্থিক স্বাধীনতা না থাকা।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে পিএসসি আয়োজিত ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের রূপান্তর: অর্জন, চ্যালেঞ্জ ও সামনে এগোনোর পথ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় পিএসসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোবাশ্বের এ কথা বলেন।

পিএসসি চেয়ারম্যানের বক্তব্যের বিষয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, পরিচালনগত স্বায়ত্তশাসন অত্যন্ত জরুরি। তবে আর্থিক স্বায়ত্তশাসনের জন্য কতগুলো বিধি ও নিয়মকানুন মানতে হবে। আর্থিক স্বায়ত্তশাসন দিতে গেলে বহু চিন্তাভাবনা করতে হবে। তবে পিএসসিকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

স্বাগত বক্তব্যে পিএসসির চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম বলেন, কর্ম কমিশনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস সম্পন্ন করা। তবে এতে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা কমিশনের প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বাধীনতা না থাকা। পরীক্ষা পদ্ধতির কালক্ষেপণ কমানোর লক্ষ্যে একটি নতুন পদ্ধতি ব্যবহার করছে কমিশন। যেটিকে তাঁরা বলছেন ‘সার্কুলার সিস্টেম অব ইভালুয়েশন’। প্রতি এক বছরে একটি বিসিএস পরীক্ষা শেষ করতে চাইলে এই ‘সার্কুলার সিস্টেমে’ যেতে হবে। এর আগে পরীক্ষামূলকভাবে এটি করে দেখেছেন এবং এখন পুরোদমে এই ব্যবস্থায় খাতা দেখা হচ্ছে।

জটিলতার কথা উল্লেখ করে পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন এই পদ্ধতির জন্য একটি বিধি পরিবর্তনের প্রয়োজন ছিল। সেই বিধি পিএসসি থেকে প্রস্তাব আকারে অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়। চার মাস হয়েছে, কিন্তু এখনো অনুমোদিত বিধিটি আসেনি। কমিশন অনেক গতিশীলভাবে কাজ করতে পারত যদি বিধি করার স্বাধীনতা থাকত।

এক বছরে একটি বিসিএস শেষ করার পথনকশার কথা উল্লেখ করে পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, প্রতিবছর পয়লা নভেম্বর বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পরবর্তী ৩০ অক্টোবরের ফল প্রকাশ করা হবে।

এ সময় পিএসসি সদস্য চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস উপস্থাপনার মাধ্যমে তাঁদের কর্মপরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জগুলো কী কী তা–ও উল্লেখ করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল পিএসসির সংস্কারকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বলেন, এখানে যেন যোগ্য মানুষেরা নিয়োগ পায়। আর একটি বিসিএস এক বছরের মধ্যে অবশ্যই শেষ হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।

গত ১৫ বছরের পিএসএসিতে কয়েক ধরনের অনাচার হয়েছে বলে মন্তব্য করেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, একটি হতো কোটার মাধ্যমে, আরেকটি হতো প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যম এবং আরেকটি পরীক্ষার সময় বিশেষ করে মৌখিক পরীক্ষায় কারচুপির মাধ্যমে। এ ছাড়া এত কিছুর পরও উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে যাঁরা আওয়ামী ঘরানার ছিল না, তাদের পুলিশ ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে বাদ দেওয়া হতো।

পিএসসির মাধ্যমে নিজেদের সময়কার নিয়োগ ও কর্মজীবনের প্রসঙ্গ টেনে সাবেক আমলা ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘এখন এসে সরকারি কর্মচারীদের যে মান দেখি, অত্যন্ত দুঃখবোধ হয়।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান, পিএসসি সদস্য এম সোহেল রহমান ও সচিব মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া, সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের উপ মিশন প্রধান ডিপেক এলমার, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.