ইয়াবার জায়গা দখল করেছে নতুন মাদক টাপেন্টাডল ট্যাবলেট
ইয়াবার বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা টাপেন্টাডল ট্যাবলেট দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। অবৈধপথে ভারত থেকে আসা এই ট্যাবলেট কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পৌঁছাচ্ছে ঢাকায়। এর মধ্যে শুধু একটি কুরিয়ারেই গত পৌনে দুই বছরে এসেছে অন্তত ৩২টি চালান। এ ছাড়া কয়েকটি কুরিয়ার সার্ভিস ও বাহকের মাধ্যমে আরও অনেক চালান এসেছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। সংশ্লিষ্ট কুরিয়ার সার্ভিসগুলোর তথ্য যাচাই-বাছাই শুরু হয়েছে। আন্তঃদেশীয় এই মাদক চক্রে জড়িত রয়েছেন ভারতীয় চিকিৎসক প্রশান্ত সাহা। তিনি নিজ দেশ থেকে চালান এনে এখানকার মাদক কারবারিদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন।
রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে টাপেন্টাডলের বৃহত্তম চালানসহ (১ লাখ ২১ হাজার পিস) দু’জনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে এসব তথ্য পেয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। এসব তথ্যের ভিত্তিতে চক্রের অপর সদস্যদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। সেসঙ্গে টাপেন্টাডল চোরাচালান ও বিপণনে যুক্ত আরও কয়েকটি চক্রের ব্যাপারে তথ্য মিলেছে।
ডিএনসির পরিচালক (গোয়েন্দা ও অপারেশন) তানভীর মমতাজ বলেন, ঢাকায় টাপেন্টাডল চক্রের অন্যতম হোতা তামজীদ পাটোয়ারী ও মবিনুর রহমানকে গ্রেপ্তারের পর তাদের নেটওয়ার্কের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে ডিএনসি।
এর আগে মঙ্গলবার হাজারীবাগের হাজী আফছার উদ্দিন সড়কের ৬৮/ই/৬ নম্বর বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ টাপেন্টাডল উদ্ধার করে ডিএনসির ঢাকা মহানগর উত্তর কার্যালয়ের একটি দল। ডিএনসি উত্তরের উপপরিচালক মো. রাশেদুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত অভিযানে নেতৃত্ব দেন সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান। এ সময় জড়িত দু’জনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি নগদ ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
তদন্ত সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার তামজীদ পাটোয়ারী একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিছুদিন আগে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তিনি নিজ নামের পাশাপাশি রিফাত পাটোয়ারী ও তামজীত ছদ্মনামে অনেকদিন ধরেই টাপেন্টাডলের কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন। একটি কুরিয়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৩০ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ১ অক্টোবর পর্যন্ত তাঁর কাছে ৩২ বার চালান এসেছে। এর মধ্যে সাতবার দুই কার্টন, একবার তিন কার্টন এবং অন্যান্য চালানে এক কার্টন করে টাপেন্টাডল এসেছে। প্রথমদিকে ৫০০ বা এক হাজার পিস আনতেন। তবে চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে চালানের পরিমাণও বেড়ে যায়। শেষের চালানে ছিল প্রায় সোয়া লাখ পিস। এগুলো মবিনুর রহমানের বাসায় রাখা হতো। পরে খুচরা বিক্রেতা ও মাদকসেবীদের কাছে তা সরবরাহ করা হতো। এই চক্রের ওপর গোয়েন্দা নজরদারির বিষয়টি বুঝতে পেরে তামজীদ সম্প্রতি সস্ত্রীক ডেনমার্কে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তাঁর মোবাইল ফোনটি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। সেটির সূত্র ধরে এই নেটওয়ার্কের অনেক তথ্য মিলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অভিযান-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, মূলত ব্যথানাশক ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত টাপেন্টাডল ট্যাবলেট ভারতে ১০-১৫ টাকা পিস বিক্রি হয়। ডা. প্রশান্ত সাহা ভারতের তেলেঙ্গানা ও গান্ধীনগর থেকে এই ট্যাবলেট সংগ্রহ করে কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে এ দেশে নিয়ে আসেন। এরপর চক্রের সদস্যদের সহায়তায় কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে তামজীদের কাছে পাঠান। এখানে তিনি প্রতি পিস বিক্রি করেন ৩৫ টাকা। চাহিদা ও জোগানের তারতম্য অনুযায়ী মাদকসেবীরা ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় এই ট্যাবলেট কেনেন। এখনও ঢাকার কিছু এলাকা ও দেশের কয়েকটি জেলাতেই এর বিস্তৃতি। তবে দ্রুত এটি আরও জনপ্রিয় হচ্ছে এবং আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।