এক–এগারোর ভয়াবহ পরিণতি বিএনপির চেয়ে বেশি কেউ ভোগ করেনি: মির্জা আব্বাস

0
6
রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ আরাফাত রহমান কোকোর ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিলে বক্তব্য দেন মির্জা আব্বাস

এক–এগারোর ভয়াবহ পরিণতি বিএনপির চেয়ে বেশি কেউ ভোগ করেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, বিএনপির প্রতিটি নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পর্যন্ত এক–এগারোর নির্মম রোষানলে পড়েছিলেন। মির্জা আব্বাস এ–ও বলেন, যদি এ ধরনের কথাবার্তা বলতে থাকেন, তাহলে দেশ কোনো দিন গণতন্ত্রের চেহারা দেখবে না।

আজ শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে মির্জা আব্বাস এ কথাগুলো বলেন।

২০০৭ সালের সেনা–সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এক–এগারোর সরকার নামে পরিচিতি পেয়েছিল। এখন আবার দেশের রাজনীতিতে সেই এক–এগারোর সরকার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। কারণ, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিবের একটি মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে জুলাই–আগস্টের স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের কেউ কেউ এক–এগারোর সরকারের প্রসঙ্গ টেনেছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত বুধবার বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ থাকতে না পারলে নির্বাচন পরিচালনায় নিরপেক্ষ সরকার প্রয়োজন হবে। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি সরকারে ছাত্রদের প্রতিনিধি থেকে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগের বিষয়কে উল্লেখ করেন।

বিএনপি মহাসচিবের এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বের অন্তত চারজন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তাঁরা হলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম। ফেসবুক পোস্টে নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মূলত আরেকটি এক–এগারো সরকার গঠনের ইঙ্গিত বহন করে।

এমন প্রেক্ষাপটে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বিএনপি আয়োজিত মিলাদ মাহফিলে বক্তব্যে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এক–এগারো নিয়ে সরকারের উপদেষ্টা ও ছাত্র নেতৃত্বের বক্তব্যের জবাব দেন।

এক–এগারো প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আজকে বহু মত, বহু পথ, বহু টেলিভিশন, বহু সংবাদপত্র। ইদানীং কথা বলার সুযোগ পেয়ে বহু কথা বলা হয় বিএনপির বিরুদ্ধে। বহু লোক বহুভাবে কথা বলছেন। কী বলছেন? কেউ বলছে বিএনপি নাকি এক–এগারো আনার পাঁয়তারা করছে। তাঁদের উদ্দেশে বলতে চাই, ২০০৭ সালে এক–এগারোর যে ভয়াবহ পরিণতি, বিএনপির চেয়ে বেশি কেউ ভোগ করে নাই।’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বিএনপির সাধারণ কর্মী থেকে শুরু করে খালেদা জিয়া পর্যন্ত এই এক–এগারোর রোষানল থেকে রেহাই পাননি। তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আর আজকে অনেকে বলেন, বিএনপি এক–এগারো আনার চিন্তা করছে। যদি কেউ কিছু বলে থাকেন আমি জানি না তাঁর নিজ দায়িত্বে সেটা বলেছেন। বিএনপি এর কোনো দায়িত্ব বহন করে না।’

বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস বলেন, ‘যদি আপনারা এ ধরনের কথাবার্তা বলে সংঘাত বিভেদ সৃষ্টি করেন, তাহলে কিন্তু দেশ কোনো দিন গণতন্ত্রের চেহারা দেখবে না।’ তিনি আরও বলেন, হঠাৎ করে নতুন মুখে কথা ফুটলে বাচ্চারা যেমন আবোলতাবোল বলতে থাকে, অনেক দল অনেক ব্যক্তি যাঁরা আজকে কথাবার্তা বলছেন, তাঁরা এমনভাবে কথাবার্তা বলছেন যে মনে হয় বিএনপি যেন আওয়ামী লীগের দোসর।

বিএনপিকে আওয়ামী শিবিরের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে অভিযোগ তুলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, ভারতের দোসর এই আওয়ামী লীগ, তাদের দিকে যারা বিএনপিকে ঠেলে দিতে চায়, আমি বলব আপনারা নিজের চেহারা আয়নায় দেখুন। দেশবাসীকে আজকে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করবেন না।’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বিএনপি ১৭ বছর রাজপথে লড়াই করেছে। আমার জেল হয়েছে ১১ বছর, আমার স্ত্রীর ১৬ বছর। আমার ছোট ভাইয়ের আট বছর জেল হয়েছে। ১৭ বছর পর প্রবাস থেকে দেশে ফিরে আসতে পেরেছে। এই নিপীড়ন শুধু আমার পরিবার নয়, বাংলাদেশের প্রতিটি বিএনপি নেতা-কর্মীর ওপর এই নিপীড়ন হয়েছে। আজকে আমাদের ঠেলে দিতে চাচ্ছেন অন্য শিবিরে। উদ্দেশ্যটা কী? আওয়ামী লীগের সিল মারতে চান। আমাদের ভারতের দালাল বানাতে চান। এই কথা কখনো চিন্তা করবেন না।’

নতুন রাজনৈতিক দল গঠন প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘অনেকে বলেন নতুন একটি দল হচ্ছে। বিএনপি এটা নিয়ে জেলাস বা ঈর্ষা করছে। এই কথা যাঁরা বলেন তাঁরা জাতির শক্র। দল হবে, নতুন দল হবে কিংবা হবে না, যারা করবে তাদের ওপর নির্ভর করবে। দল ঘোষণার পর বিএনপির ভূমিকা কী থাকবে, সেটা দেখবেন। স্বাগত জানাই যাঁরা দল করবেন, যাঁরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশ পরিচালনা করবেন, প্রয়োজন পড়লে আমরা সহযোগিতা করব। কিন্তু ওই সমস্ত উল্টাপাল্টা কথা বলে দেশ–জাতিকে বিভান্ত করার চেষ্টা করবেন না।’

বিএনপি ১৭ বছর রাজপথে লড়াই করেছে উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘অনেকে বলে ৫ আগস্ট যারা এনেছে, তারা সব কিছুর অধিকার রাখে। ঠিক আছে, অসুবিধা নাই তো কোনো। কিন্তু আমরা যারা ১৭ বছর রক্ত দিলাম। আমাদের যাদের ঘর পুড়ল, আমাদের সংসার পুড়ল, তাদের কী হবে? আমাদের ইলিয়াস আলী গুম হলো, আমাদের চৌধুরী আলম গুম হলো, আমাদের প্রায় ৫ হাজার লোক গুম হয়ে গেল, হাজার হাজার নেতা-কর্মী জেল খাটল আর আমরা এখানে যারা আছি, সবাই কমবেশি…আমি তো তেরোবার জেল খেটেছি।’

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, একজনের অবদানকে স্বীকৃত দিতে গিয়ে অন্যজনের অবদান অস্বীকার করার কোনো উপায় বাংলাদেশে নাই। যাঁরা চেষ্টা করছেন, তাঁরা অপচেষ্টাই করছেন। যাঁরা চেষ্টা করেন, তাঁরা জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। সবাই তো কথা বলে, বিএনপি বললেই অসুবিধা! বিএনপিকে যারা ভিন্ন শিবিরে ঠেলে দিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন, এটার পরিণতি কিন্তু ভালো হবে না। বরং দেশটাকে ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টা করবেন।

কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘একটি দল আছে, নাম বলব না। বলে না গাছে কাঁঠাল, গোঁফে তেল। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে। তারা এমন ভাব করছে, তারা যেন কিছুই জানে না। ভাজা মাছটি উল্টিয়ে খেতে জানে না। মাঝে মাঝে টুক করে বিএনপি সম্পর্কে দু–একটি কথা বলে ফেলেন।’

জিয়া পরিবার সম্পর্কে মির্জা আব্বাস বলেন, এই পরিবারের ত্যাগ যদি জাতি ভুলে যায়, এটা ঠিক হবে না। এই পরিবারের প্রতি অন্যায় করা হবে। কোকো মারা গেলেন। তাঁর বড় ভাই দেশত্যাগী। মা এখন পর্যন্ত চিকিৎসাধীন। আমি এখনো বিশ্বাস করতে চাই, খালেদা জিয়াকে স্লো পয়জনের মাধ্যমে সুস্থ্ সবল মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হলো। অর্থাৎ খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার অর্থ হলো এই দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্রকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া।’

দোয়া মাহফিলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এবং দলীয় কর্মীরা অংশ নেন। বক্তব্য শেষে আরাফাত রহমান কোকোর আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.