একনেকের তিনটি বৈঠকেই প্রকল্প পাসের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। সরকারের মেয়াদের একদম শেষ সময়ে প্রকল্প পাসের প্রাবল্য বেড়েছে। রাস্তাঘাট, সেতু, ভবনসহ ভোটার আকৃষ্ট করার প্রকল্পই বেশি পাস হচ্ছে। এর ফলে নির্বাচনের আগে স্থানীয় জনগণের কাছে নতুন প্রকল্প পাসের খবর যাচ্ছে। প্রভাবশালী মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের এলাকার প্রকল্প আছে এই তালিকায়।
গত ২৯ আগস্ট ও ৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) দুটি সভায় ৩৭টি প্রকল্প পাস হয়েছে। আজ মঙ্গলবার আরও ১৮টি প্রকল্প পাসের জন্য একনেকে ওঠানো হচ্ছে। আজ সব কটি প্রকল্প পাস হলে ১৫ দিনের মধ্যে ৫৫টি প্রকল্প বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ঢুকে যাবে। এসব প্রকল্পে নতুন করে বরাদ্দ দিতে হবে।
চলতি অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার এডিপি নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ১ হাজার ৩০৯টি চলমান প্রকল্প আছে। এ ছাড়া ৮২৫টি প্রকল্প বরাদ্দহীন নতুন প্রকল্প হিসেবে রাখা হয়েছে। সেই তালিকা থেকে এখন প্রকল্প পাস করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, চলতি অর্থবছরটি বেশ সংকটের বছর। সামষ্টিক অর্থনীতি নানা সমস্যার মুখে আছে। নির্বাচন সামনে রেখে সরকার যেন অতিরিক্ত খরচ না করে। ছোটখাটো অনেক প্রকল্প পাস হচ্ছে। এগুলোর অগ্রাধিকার বোঝা যাচ্ছে না।
■ প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপিদের এলাকার প্রকল্প আছে
■ রাস্তাঘাট, সেতু, ভবনসহ ভোটার আকৃষ্ট করার প্রকল্পই বেশি পাস হচ্ছে।
গত ৫ সেপ্টেম্বর একনেক সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়—ভোটার আকৃষ্ট করতে জনতুষ্টির প্রকল্প পাস করা হচ্ছে কি না। জবাবে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেছিলেন, ‘রাজনৈতিক সরকার ভোটারদের আকৃষ্ট করতে ভোটের আগে বড় বড় প্রকল্প শেষ করে। দুনিয়াজুড়েই এমন হয়। এটি দোষের কিছু নয়।’
প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপিদের এলাকার প্রকল্প
মেয়াদের শেষ দিকে এসে প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপি, সচিবদের এলাকায় ‘ইচ্ছে’র প্রকল্প পাস হচ্ছে। কিছু উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। যেমন গত ২৯ আগস্ট ১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকার চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এবং নার্সিং কলেজ স্থাপন প্রকল্প পাস হয়। এই প্রকল্পটি শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির নির্বাচনী এলাকায়। এই প্রকল্প নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।
এই প্রকল্পের জন্য ৩০ একর জমি লাগবে। এর অর্ধেক জমি বর্ষার সময় পানির নিচে ডুবে যায় বলে পরিকল্পনা কমিশন মতামত দিয়েছিল। কিন্তু পুরো ৩০ একর জমি ধরেই প্রকল্পটি পাস হয়।
এই একনেক সভায় ৩১৭ কোটি টাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলায় শুভাঢ্যা খাল পুনঃখনন এবং খালের উভয় পাড়ের উন্নয়ন ও সুরক্ষা নামের একটি প্রকল্প পাস হয়। ওই এলাকাটি জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের নির্বাচনী এলাকা।
এ ছাড়া সর্বশেষ ৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত একনেকে নড়াইলের নবগঙ্গা নদীর ওপর কালিয়া সেতু নির্মাণ প্রকল্পের খরচ বাড়ানো হয়েছে। জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা নড়াইল জেলার একজন সংসদ সদস্য। পুরো নড়াইল জেলায় তিনি জনপ্রিয়।
সূত্র জানাচ্ছে, এই তিনটি প্রকল্পে রাজনৈতিক তদবির ছিল। এভাবে বেশ কিছু প্রকল্প এমপি ও মন্ত্রীর ইচ্ছে বা দাবির ভিত্তিতে নেওয়া হচ্ছে বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
যেসব প্রকল্প পাস হচ্ছে
আজ মঙ্গলবার সব মিলিয়ে ১৮টি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য একনেকে উঠছে। এর মধ্যে আছে ফেনী নদীর ওপর শুভপুর সেতু, নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর কদমরসুল সেতু নির্মাণ; গাজীপুর সিটির রাস্তাঘাট উন্নয়ন; সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থিত মাজার মসজিদ নির্মাণ; কৃষকদের বীজ সরবরাহ; শরীয়তপুর ও বরিশালের বিভিন্ন এলাকার নদীভাঙন প্রতিরোধের প্রকল্প আছে।
গত ২৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ১৪ হাজার কোটি টাকার ২০টি নতুন প্রকল্প পাস করা হয়। প্রকল্পের তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, ১৬৬ কোটি টাকার সিলেটের বালাগঞ্জে সেতু নির্মাণ প্রকল্প আছে। আবার মুন্সিগঞ্জে রামেরকান্দা-লাকিরচর সংযোগ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পও আছে। এ ছাড়া হাসপাতাল ভবন, শিশুপার্ক, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন ছোটখাটো প্রকল্পও পাস হচ্ছে।
গত ৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ১৭টি প্রকল্প পাস হয়। এসব প্রকল্পে খরচ ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা। এতে সেতু নির্মাণ, গ্রামীণ রাস্তাঘাট, ভবন নির্মাণের প্রকল্পই বেশি।