বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে সম্প্রতি বিবেকানন্দ থিয়েটার পরিবেশন করে তাদের নতুন প্রযোজনা ‘উত্তরণ’। অপূর্ব কুমার কুণ্ডু রচিত নাটকটির নির্দেশনা এবং মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন শুভাশীষ দত্ত তন্ময়। এর কাহিনি গড়ে উঠেছে একদল চোরের যাপিতজীবনকে ঘিরে। চোররা চুরি করেএবং করতে গিয়ে তাদের অর্জিত অভিজ্ঞতা তাদের মাস্টারকে বলে।
মাস্টার সব শুনে তাদের শাসন-অনুশাসন এবং স্নেহ প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে করণীয় ঠিক করে দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় বড় ভাই উত্তরণ চুরি করতে গিয়ে পায় ক্ষমা আর ছোট ভাই অনুজ পায় ঘৃণা। একসময় দুই ভাই আক্রান্ত হয়ে নগরবাসীর হাত থেকে মুক্তি পেতে ছাই-ভস্ম মেখে সাধু না হয়েও সাধু সাজে। প্রাপ্তি ঘটে অর্থ-সম্মান-প্রতিপত্তি। উভয়ে বোঝে, সাধু সেজেই যদি এতকিছু মিলতে পারে তবে প্রকৃত সাধু হলে তার প্রাপ্তি কত মহৎ। অসৎ মানুষও যে সৎসঙ্গে সৎ মানুষ হয়ে যেতে পারে, এই মহৎ ভাবের উচ্চারণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় নাটকটি। নাট্যকারের কাহিনির বুনন এবং সংলাপের উচ্চারণ দর্শকদের নিমগ্ন করে।
নির্দেশকের নির্দেশনায় স্থান-কাল-পাত্রের রহস্যময়তার যে বিশ্বস্ত দৃশ্যায়ন তা যেমন নান্দনিক, তেমনি সক্ষমতার পরিচায়ক। শক্তিশালী অভিনয় দিয়ে নাটক নির্মাণে তাঁর প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। পলাশ হেনড্রি সেনের আলোর বৈচিত্র্য, ফজলে রাব্বি সুকর্ন’র মঞ্চের বহুগামিতা, হামিদুর রহমান পাপ্পুর আবহের কাব্যময়তা নাটকটির সম্পদ।
শুভাশীষ দত্ত তন্ময় যে জাত অভিনেতা, তা ঢাকার মঞ্চ ইতোমধ্যে জেনেছে। তবে গুরুদেব এবং ছোট ভাই অনুজ চরিত্র নাটকীয়। চোর পেটানো নগরবাসী অভিনেতারা বয়সে কিশোর হলেও, তাদের চঞ্চলতা মন কাড়ে।
বিবেকানন্দ থিয়েটারের সব অভিনেতার অভিনয়ে সংলাপ উচ্চারণ যদি হয় আরেকটু উচ্চ স্বরে এবং রচিত নাটকের সংলাপের ভাব ও আদর্শকে ঘিরে তবে নিঃসন্দেহে ‘উত্তরণ’ নাটক হবে সামগ্রিক নাট্যচর্চায় এক বিশ্বস্ত উত্তরণ।