জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারকে নানাভাবে সহযোগিতা করে চলেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সরকারের প্রয়োজন অনুযায়ী সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, নতুন স্বপ্নের বাস্তবায়ন এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করছে। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী দেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মানুষের প্রত্যাশা, বাস্তবতা এবং নানা বিষয়ে সেনাবাহিনীর ভূমিকা ও অবস্থান নিয়ে তিনি কথা বলেছেন। গত ৩০ ডিসেম্বর সেনা সদর দপ্তরে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান ও কূটনৈতিক প্রতিবেদক রাহীদ এজাজ।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান: এটা সত্য। এত বড় গণ-অভ্যুত্থান। এত শহীদ, এত আহত, ঐতিহাসিক এক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে আমরা বর্তমান সময়ে এসে পৌঁছেছি। আমরা একটা নতুন স্বপ্ন, নতুন সময়ের পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছি। ২০২৪ সালে আমাদের জন্য একটা নতুন সুযোগ ও নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ঘটে যাওয়া গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্র, জনতা ও রাজনৈতিক দলসমূহের অংশগ্রহণ বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। গণ-অভ্যুত্থানে শাহাদাতবরণকারী ও আহত সবার প্রতি জাতি চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।
জেনারেল ওয়াকার: ২০২৫ সালে আমরা একটা দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথে যেতে চাই। সে জন্য সবাইকে একসঙ্গে চলতে হবে। সবাইকে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে; কিন্তু জাতীয় স্বার্থে ঐকমত্য জরুরি। তাহলেই গণতন্ত্র স্থায়ী হবে।
আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চাই। বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য এখন শান্তি ও স্থিতিশীলতা খুবই জরুরি। এই দুটি বিষয় না হলে উন্নয়ন আর সুশাসনও আসবে না। সে জন্য আমাদের মধ্যে সহিষ্ণুতা ফিরিয়ে আনতে হবে। সে জন্য একটা জাতীয় সমঝোতার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
জেনারেল ওয়াকার: আমি বিশ্বাস করি, আপনারা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সংবাদ পরিবেশন করছেন এবং ভবিষ্যতেও করবেন। তাই আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলতে এখন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।
জেনারেল ওয়াকার: আমি যা চিন্তা করছি, সেটা যদি আপনারা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে তুলে ধরেন, তাহলে তো আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলতেই পারি। সাধারণত সশস্ত্র বাহিনীর লোকজন গণমাধ্যমে কথা বলেন না। এটা অনেক আগের রেওয়াজ। বহুদিন থেকেই এই পরিবেশ গড়ে উঠেছে।
জেনারেল ওয়াকার: হ্যাঁ। এটা অতীত থেকেই হয়ে আসছে। আমরা মিডিয়ায় কথা বলার বিষয়ে দ্বিধান্বিত থাকি। তারপরও এখন দেশ একটা বিশেষ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জনগণের মনে জিজ্ঞাসা থাকতেই পারে। থাকতে পারে বিভ্রান্তি। আমি মনে করি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিস ইনফরমেশন, ডিস-ইনফরমেশন ছড়ানো হচ্ছে। সে জন্য আমাদেরও মাঝে মাঝে মিডিয়ার সামনে যেতে হচ্ছে।
দেশবাসী অবশ্যই একটা ভালো নির্বাচন চায়। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচন চায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান লক্ষ্যও সেটা।
জেনারেল ওয়াকার: দেশবাসী অবশ্যই একটা ভালো নির্বাচন চায়। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর নির্বাচন চায়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান লক্ষ্যও সেটা। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময়সীমা দিয়েছেন। সেটা ঠিক সময়। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাচনের রূপরেখা বাস্তবায়নে সব সহযোগিতা করব।
জেনারেল ওয়াকার: আমাদের মাঠে থাকতে হচ্ছে। আমরা পরিস্থিতি বুঝতে পারছি। আমরা কীভাবে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে পারি, তা নিয়ে একটা ধারণা দিই। দিনের শেষে আমার সেনাদেরই তো মাঠে যেতে হচ্ছে। এর মধ্যেই প্রায় পাঁচ মাস ধরে তাঁরা মাঠে আছেন। যত বেশি আমাদের লোকজন মাঠে থাকবেন, তত বেশি তাঁদের শৃঙ্খলাবহির্ভূত কাজে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। ডাকাত ধরতে গিয়ে আমার একজন কর্মকর্তা নিহত হলেন। পুলিশ যদি দ্রুত সংগঠিত হয়ে যেত, আমার কোনো উদ্বেগ থাকত না। তারা যদি সুসংগঠিত হয়ে যায়, বেসামরিক প্রশাসন যদি যথাযথ আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন শুরু করে দেয়, তাহলে আমরাও আশ্বস্ত হতে পারি।
জেনারেল ওয়াকার: সেটা কিছুটা ঠিক। পুলিশ পুনর্গঠিত হওয়ার জন্য কাজ চলমান। আমরা চাইব শিগগিরই সেটা ফলপ্রসূ হবে।
জেনারেল ওয়াকার: এটার জন্য রাজনৈতিক দল ও সরকার লাগবে। রাজনীতিবিদদের এগিয়ে আসতে হবে। রাজনীতি ছাড়া ও রাজনৈতিক সরকার ছাড়া এটা সম্ভব নয়।
জেনারেল ওয়াকার: ঠিক আছে, অতীতে হয়নি। এখন তো সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এ কাজগুলো করতে পারি।
জেনারেল ওয়াকার: এখন তো আমরা সবাই রাজনীতিবিদদের সঙ্গে যুক্ত আছি। তারা এখন নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, এই সংস্কার সবার জন্যও দরকার। সংবিধান সংস্কারের বিষয়টি সামনে আসছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা দরকার।
জেনারেল ওয়াকার: আমি অত বিস্তারিত যেতে চাই না। আমি সংবিধান বিশেষজ্ঞও নই। নিজের অভিজ্ঞতার আলোকেই বুঝেছি, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা প্রয়োজন। সশস্ত্র বাহিনীকে রাষ্ট্রপতির অধীনে রাখা যেতে পারে।
জেনারেল ওয়াকার: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সশস্ত্র বাহিনী প্রধান উপদেষ্টার অধীনে ছিল। আমি এই ধারণার কথা বলছি। ক্ষমতার ভারসাম্য আনার প্রসঙ্গটি নিয়ে ভাবছি। কীভাবে সেটা হতে পারে, বিশেষজ্ঞরা বললেই ভালো। কিন্তু এই পরিবর্তন আনতে পারলে শাসনব্যবস্থায় একটা ভারসাম্য আসবে।
জেনারেল ওয়াকার: না, তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। তবে একজনের সঙ্গে কিছু আলোচনা হয়েছিল। সেটা বেশ আগে।
জেনারেল ওয়াকার: আমরা আইনশৃঙ্খলার দেখভাল করছি। কিন্তু আমাদের ১/১১–এর অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়। সেনাসদস্যদের মাঠে দীর্ঘদিনের উপস্থিতি উচ্ছৃঙ্খল কাজে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি করে। যদিও সংখ্যাটা খুবই কম। শৃঙ্খলাজনিত ঘটনার জন্য আমরা সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত শেষে শাস্তিও দিই। এরপরও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়টি আমাদের জন্য বিব্রতকর। আমাদের তো এ ধরনের কাজে যুক্ততা কিংবা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার জন্য তৈরি করা হয়নি।
আমরা পুরোপুরি সরকারের পাশে রয়েছি। আমরা চেষ্টা করব প্রধান উপদেষ্টা যেভাবেই আমার বা আমাদের সাহায্য চাইবেন, আমরা সেভাবেই উনাকে সহযোগিতা করব।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার–উজ–জামান
জেনারেল ওয়াকার: পেছনে থাকা মানে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা করছি। তারা আমাদের কাছ থেকে যে ধরনের সহায়তা চাইছে, সেভাবেই সহায়তা দিচ্ছি এবং দেব। যে দিন অন্তর্বর্তী সরকার বলবে, ‘আপনাদের অনেক ধন্যবাদ, আপনারা আপনাদের কাজটা সম্পন্ন করেছেন, এখন পুলিশ আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব নেবে।’ আমরা তখন সানন্দে সেনানিবাসে ফিরে যাব।
জেনারেল ওয়াকার: আমরা পুরোপুরি সরকারের পাশে রয়েছি। আমরা চেষ্টা করব প্রধান উপদেষ্টা যেভাবেই আমার বা আমাদের সাহায্য চাইবেন, আমরা সেভাবেই উনাকে সহযোগিতা করব। এটাতে যদি আমাদের অসুবিধা হয়, সৈনিকদের যদি সাময়িক অসুবিধাও হয়, তারপরও সরকারকে সহযোগিতা করে যাব। দেশ ও জাতির স্বার্থেই আমরা এটা করব। এই জাতির জন্য, দেশের জন্য ও দেশের মানুষের স্বার্থে যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে আমরা তৈরি আছি।
জেনারেল ওয়াকার: আমি এটাকে শেষ সুযোগ বলব না। আমি এটাকে সুযোগ হিসেবে বলতে চাই। এই সুযোগ আমাদের কাজে লাগানো উচিত। এটা সবার জন্য ভালো। একটা সুশৃঙ্খল পরিবেশের মধ্যে সবকিছু যদি ঠিক হয়ে যায়, তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে অনেকেই তো এই পরিবর্তনের সুফল ভোগ করবেন। রাজনীতিতে বিরোধী দল বিরাট এক সহায়ক শক্তি। সরকার এবং বিরোধী দল একে অন্যের পরিপূরক। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এমন প্রক্রিয়া থাকলে একে অন্যের ভুল ধরিয়ে দিতে পারে। সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য থাকে। সবাই তাদের পরিধির মাঝে থেকে দায়িত্ব পালন করে যেতে পারেন। এটা তো একটা দেশের জন্য খুবই প্রয়োজন।
জেনারেল ওয়াকার: আমি আশাবাদী। রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝে ভালো রাজনীতিবিদ রয়েছেন। হয়তো ভিন্নমতের মানুষও আছেন। আমার অতীত অভিজ্ঞতায় বলে, যখন এমন একটা ক্রান্তিকাল আসে, আমাদের রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বসলে তাঁরা সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসেন।
জেনারেল ওয়াকার: আমি এমন কোনো শঙ্কা দেখি না। এখন সমঝোতা সম্ভব। একসঙ্গে বসে এটা করা সম্ভব। এটা একটা সংস্কৃতির ব্যাপারও বটে। সবার এটা বোঝা উচিত। আমি নৈরাশ্যবাদী নই। সব সময় আমি আশাবাদী।
জেনারেল ওয়াকার: কিছু কারণ যৌক্তিক আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে উসকানিও আছে।
প্রশ্নঃ সেনাবাহিনীকে তো ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আপনারা সেটার কতখানি প্রয়োগ করছেন?জেনারেল ওয়াকার: আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা তুলনামূলকভাবে পর্যালোচনা করে দেখেছি সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রয়োগের পরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে যতটা হতাশ মনে হচ্ছে কাউকে কাউকে, এতটা হতাশ আমি না। পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি তো একটা সামগ্রিক ব্যাপার। এখানে পুলিশের ভূমিকা রয়েছে, প্রশাসনের আছে, সরকারের ভূমিকা আছে। সেনাবাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। সাধারণ জনগণেরও তো ভূমিকা রয়েছে। সবার সামগ্রিক প্রয়াসের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। এটা আমাদের সবাইকে সব সময় মনে রাখতে হবে। আমরা একজনের ঘাড়ের ওপর দোষ চাপিয়ে বলি সরকার, বলি পুলিশ বা বলি সেনাবাহিনী দায়ী, এটা করা যাবে না। এখানে তো সবার একটা ভূমিকা আছে।
জেনারেল ওয়াকার: এটা অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং এটা একধরনের অসুস্থতা। কেউ যদি পিটিয়ে মেরে ফেলাতে, বিচারবহির্ভূত হত্যায় সমাধান দেখেন, এটা ভুল। এটা বন্ধ করতেই হবে।
জেনারেল ওয়াকার: ডিজিএফআই একটি স্বতন্ত্র সংস্থা। সেনাবাহিনী এ রকম কিছুতে যেতে চায় না, জড়িত হতে চায় না। আমরা এমন কিছু করব না, যাতে সশস্ত্র বাহিনীর সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জেনারেল ওয়াকার: ভারত আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। আমরা অনেক দিক থেকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল। আবার ভারতও আমাদের কাছ থেকে সুবিধাও পাচ্ছে। আনুষ্ঠানিক আর অনানুষ্ঠানিক মিলিয়ে ওদের প্রচুর মানুষ বাংলাদেশে কাজ করছে। এ দেশ থেকে অনেক মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারতে যায়। আমরা তাদের কাছ থেকে অনেক পণ্য কিনছি। কাজেই বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার ব্যাপারে ভারতের বিরাট স্বার্থ আছে। এটা একটা দেওয়া–নেওয়ার সম্পর্ক। ন্যায্যতার ভিত্তিতে হতে হবে এটা। যেকোনো দেশ সব সময় অন্য দেশ থেকে সুবিধা পেতে চাইবে। এটা তো দোষ না। আমি যদি আদায় করে নিতে না পারি, দোষ তো আমারও। এই বিষয়গুলো দেখতে হবে। আমাদের ন্যায্যতার ভিত্তিতে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলতে হবে। জনগণ যেন কোনোভাবেই মনে না করে ভারত বাংলাদেশের ওপর কর্তৃত্ব করছে বা এমন কিছু করছে, যা আমাদের স্বার্থের পরিপন্থী। কোনোভাবেই মানুষ যেন এটা না ভাবে।
ভারতের কাছে প্রধান বিষয় হচ্ছে তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে বাংলাদেশের সহযোগিতা। বিগত সরকারের কাছ থেকে এ ক্ষেত্রে তারা সহায়তা পেয়েছে।
জেনারেল ওয়াকার: দেখুন, আমার কথা হচ্ছে আমার প্রতিবেশীর সঙ্গে আমি এমন কিছু করব না, যেটা তাদের কৌশলগত স্বার্থের পরিপন্থী হয়। একই সঙ্গে আমার দিক থেকে প্রত্যাশা থাকবে যে প্রতিবেশীও আমার সঙ্গে এমন কিছু করবে না, যা আমার স্বার্থের পরিপন্থী। আমি যখন তাদের স্বার্থ দেখব, তারাও আমার স্বার্থটা সমান গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে। আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে না। স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে না মিয়ানমার সীমান্তেও। সীমান্তে আমাদের লোকজনকে হত্যা করবে না। আমরা ন্যায্য হিস্যার পানি পাব। এতে তো কোনো অসুবিধা নেই। সম্পর্কটা ন্যায্যতার ভিত্তিতে হোক।
সেনাপ্রধান বলেছেন, সামরিক বাহিনীর অবশ্যই রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। রাজনীতিতে নাক গলানোর বিষয়টি সেনাবাহিনীর জন্য ক্ষতিকর। অতীতে এগুলো হয়েছে। আমরা অতীত থেকে শিখেছি। এটা কখনো ভালো ফল বয়ে আনেনি।
জেনারেল ওয়াকার: সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়…আমাদের এই পররাষ্ট্রনীতি চমৎকার। আমাদের ভারসাম্য রেখে এগিয়ে যেতে হবে। চীন আমাদের উন্নয়নের অংশীদার। বাংলাদেশে তাদের অনেক বিনিয়োগ আছে। কাজেই চীন আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীনের অনেক সমরাস্ত্র আমরা ব্যবহার করছি। বিমানবাহিনী ব্যবহার করছে। নৌবাহিনী ব্যবহার করছে। তাদের সমরাস্ত্র তুলনামূলকভাবে সস্তা।
জেনারেল ওয়াকার: তাদের সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক ভালো। আমরা এটা বজায় রেখে চলব।
বর্তমানে জটিল ও কঠিন একটা সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। এই মুহূর্তে নিজেদের দাবিদাওয়াগুলো আমরা যেন সীমিত রাখি। সরকারকে বিরক্ত না করি। তাহলে সেটা আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সাহায্য করবে। ধৈর্য ধারণ করি।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার–উজ–জামান
জেনারেল ওয়াকার: সামরিক বাহিনীর অবশ্যই রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। রাজনীতিতে নাক গলানোর বিষয়টি সেনাবাহিনীর জন্য ক্ষতিকর। অতীতে এগুলো হয়েছে। আমরা অতীত থেকে শিখেছি। এটা কখনো ভালো ফল বয়ে আনেনি। এ জন্যই আমার অঙ্গীকার হচ্ছে, সেনাপ্রধান হিসেবে নিজের মেয়াদকালে আমি রাজনীতিতে নাক গলাব না। আমি সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে হস্তক্ষেপ করতে দেব না। এটাই আমার স্পষ্ট অঙ্গীকার। আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, রাজনীতিবিদের বিকল্প রাজনীতিবিদেরাই। তাঁদের বিকল্প সেনাবাহিনী নয়।
জেনারেল ওয়াকার: বর্তমানে জটিল ও কঠিন একটা সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশ। এই মুহূর্তে নিজেদের দাবিদাওয়াগুলো আমরা যেন সীমিত রাখি। সরকারকে বিরক্ত না করি। তাহলে সেটা আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সাহায্য করবে। ধৈর্য ধারণ করি। ব্যবসায়ী, শিল্পোদ্যোক্তাদের জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত। এটা মুনাফার সময় নয়। চিরাচরিত প্রথার বাইরে গিয়ে কিছু করাটা জরুরি। কারণ, দেশ তো এক কঠিন পথে চলেছে। এ থেকে উত্তরণ পেতে হলে রাজনৈতিক দলকে আসতে দিন। রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এলে তারা এসব সমস্যার সমাধান করবে। কাজেই আসুন, এ সময় আমরা সবাই মিলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহায়তা করি; যাতে তারা সংস্কারগুলো শেষ করে নির্বাচনের দিকে যেতে পারে। আমরা যেন তাদের ওপর বোঝা না চাপাই। আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতার জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত আছি এবং প্রস্তুত থাকব।
প্রশ্নঃ জেনারেল ওয়াকার আপনাকে ধন্যবাদ।
জেনারেল ওয়াকার: আপনাকেও ধন্যবাদ।