ষাটের দশকে বাংলা চলচ্চিত্র দিয়েই তার অভিনয়ে যাত্রা শুরু। তবে প্রথমেই অভিনেত্রী নয় বরং একজন নৃত্যশিল্পী হিসেবে তার অভিষেক হয়। বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী আনোয়ারা মুহিত। তবে সবাই তাকে চেনেন আনোয়ারা বেগম নামে।
নানামাত্রিক চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করে জীবন্ত কিংবদন্তি এই অভিনেত্রী পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়তা। দর্শকের মধ্যে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না, যিনি বলতে পারবেন আনোয়ারার হৃদয়স্পর্শী অভিনয় তাকেও আকর্ষণ করেনি। তার অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছেন এ দেশের সব শ্রেণির দর্শক।
সোমবার ১৪ জুলাই বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) অভিনেত্রী আনোয়ারাকে নিয়ে এক ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তখন এই কিংবদন্তি অভিনেত্রীকে নিয়ে এক আবেগঘন দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। অনুষ্ঠানে আগত সাংবাদিকদের চোখও এসময় আবেগের জলে ভিজে যায়। পিনপতন নীরবতায় আয়োজনের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে কিছু সময়ের জন্য। শুরুতেই গুণী এই অভিনেত্রীকে বাচসাস থেকে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়।
এ সময় তিনি বলেন, বাচসাস আমার অনেক আপন। অনেক আগে থেকেই বাচসাসের সঙ্গে পরিচয়। বাচসাসকে আমি ভালোবাসি, সম্মান ও শ্রদ্ধা করি। এই আয়োজনে হাজির হয়ে আমার যে চোখের পানি ঝরেছে তা গ্লিসারিন নয়, শ্রদ্ধা আর সম্মানের। বাচসাস আমাকে যে সম্মান দিয়েছে তা কখনও ভুলবো না। এই সম্মান আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মনে থাকবে।
দোয়েল ওটিটির সহযোগিতায় সোমবার বিকেলে মগবাজারস্থ বাচসাস কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় নিয়মিত ‘মিট দ্য প্রেস’-এর প্রথম পর্ব। সংগঠনের সভাপতি কামরুল হাসান দর্পণের সভাপতিত্বে এই আয়োজনের সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক রাহাত সাইফুল।
বাচসাস’র সভাপতি কামরুল হাসান দর্পণ বলেন, বাচসাস এই প্রথম ‘মিট দ্য প্রেস’-এর আয়োজন করেছে। আনোয়ারার মতো কিংবদন্তি অভিনেত্রীকে দিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজনের পথচলা শুরু করতে পেরে বাচসাস আনন্দিত। এখন থেকে নিয়মিত চলচ্চিত্র, টেলিভিশন ও সংগীতের তারকাশিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে ‘মিট দ্য প্রেস’-এর আয়োজন করা হবে। তারা উপস্থিত হয়ে নিজেদের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার ও সমসাময়িক প্রসঙ্গে কথা বলবেন। এই আয়োজনে সহযোগিতা করছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম দোয়েল। বাচসাস তার প্রতি কৃতজ্ঞ।
সম্পাদক রাহাত সাইফুল বলেন, বাচসাস কার্যালয়ে এই প্রথমবার ‘মিট দ্য প্রেস’-এর আয়োজন করা হয়। কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যদের আন্তরিক সহযোগিতা, সাংবাদিক সহকর্মী ও বাচসাস পরিবারের সদস্যদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি আমাদের এই আয়োজনকে আরও সমৃদ্ধ করেছে—আমরা সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। আনোয়ারা মা শুধু একজন অভিনেত্রী নন, তিনি আমাদের চলচ্চিত্র ইতিহাসের এক জীবন্ত অধ্যায়। তার চোখের জল ছিল আমাদের প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার প্রতীক। এই আবেগই আমাদের আগামী পথচলার প্রেরণা হয়ে থাকবে।
সবশেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন খ্যাতিমান এই অভিনেত্রী। তিনি তার দীর্ঘ ক্যারিয়ারে মঞ্চ, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন নাটকে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা এবং ব্যক্তিজীবনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন আনোয়ারা কন্যা চিত্রনায়িকা রুমানা ইসলাম মুক্তি।
উপস্থিত ছিলেন বাচসাস-এর সহ-সভাপতি লিটন রহমান, সালাম মাহমুদ, অর্থ সম্পাদক রুহুল সাখাওয়াত, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা মতিহার, দপ্তর সম্পাদক রুহুল আমিন ভূঁইয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য হাফিজ রহমান, পান্থ আফজাল, নিয়াজ মোর্শেদ শুভ এবং বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
বলা দরকার, ছয় শতাধিক চলচ্চিত্রের নন্দিত এই অভিনেত্রী অনবদ্য অভিনয়ের সুবাদে ৪ বার বাচসাস পুরস্কার পেয়েছেন। মা (১৯৭৭), গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৮), কসাই (১৯৮০) এবং লাল কাজল (১৯৮২) সিনেমার জন্য তিনি পুরস্কৃত হয়েছিলেন।