এইডস প্রতিরোধে এলো যুগান্তকারী এক ওষুধ!

0
18
এইচআইভি এ ওষুধটির নাম ‘লেনাক্যাপাভির’, যা বাণিজ্যিকভাবে পরিচিত ‘ইয়েজটুগো’ নামে

বিশ্বজুড়ে কোটি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া এক মরণব্যাধি এইডস। কার্যকর প্রতিষেধকের অভাবে এইচআইভি ভাইরাসজনিত এ রোগ প্রতিরোধের তেমন কোনো উপায় ছিল না এতদিন। তবে, এইচআইভি নিয়ন্ত্রণে এবার এক যুগান্তকারী সাফল্যের দেখা মিলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) প্রথমবারের মতো এমন একটি ওষুধ অনুমোদন দিয়েছে, যা এইচআইভি প্রতিরোধে প্রায় শতভাগ কার্যকর।

যুগান্তকারী এ ওষুধটির নাম ‘লেনাক্যাপাভির’, যা বাণিজ্যিকভাবে পরিচিত ‘ইয়েজটুগো’ নামে। এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য ২০২২ সালে মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন এবং ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি উভয়ই ওষুধটি অনুমোদন দিলেও চলতি বছরের ১৮ জুন ওষুধটি ইনজেকশন হিসেবে দুবার ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে মার্কিন খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন। তাদের দাবি অনুযায়ী, এই ওষুধ বছরে মাত্র দুবার ইনজেকশনের মাধ্যমে গ্রহণ করলেই এইচআইভি ভাইরাস থেকে ৯৯.৯৯ শতাংশ সুরক্ষা মিলবে।

ওষুধটি তৈরি করেছে গিলিয়াড সায়েন্সেস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বিশ্বব্যাপী ওষুধটি স্বল্পমূল্যে সহজলভ্য করতে ইতোমধ্যে ছয়টি জেনেরিক ওষুধ প্রস্তুতকারকের সঙ্গে রয়্যালটিমুক্ত লাইসেন্স চুক্তি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

লেনাক্যাপাভির হলো এক নতুন ধরনের ওষুধ, যা এইচআইভি-১ ভাইরাসের ক্যাপসিড প্রোটিন শেলকে টার্গেট করে কাজ করে। এই শেল ভাইরাসের জিনগত উপাদান রক্ষা করে এবং মানব কোষে প্রবেশ করতে ভাইরাসকে সাহায্য করে। ইনজেকশনটি এই প্রক্রিয়া ব্যাহত করে ভাইরাসের বিস্তার রোধ করে।

২০২৪ সালে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্স এটিকে ‘বছরের সেরা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার’ হিসেবে ঘোষণা করে। এই ওষুধটি মূলত ‘প্রি-এক্সপোজার প্রোফিল্যাক্সিস’ হিসেবে ব্যবহৃত হবে, যা এইচআইভিতে আক্রান্ত না এমন ব্যক্তিদের ভাইরাস সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়। ক্লিনিক্যাল গবেষণায় দেখা গেছে, এইচআইভি ভাইরাস থেকে প্রায় ১০০ শতাংশ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সক্ষম এটি।

এ ব্যাপারে গিলিয়াডের চেয়ারম্যান ও সিইও ড্যানিয়েল ওডে বলেন, এইচআইভির বিরুদ্ধে চার দশকের লড়াইয়ের এক নতুন অধ্যায় শুরু হলো। ইয়েজটুগো শুধু একটি ওষুধ নয়, এটি আমাদের সময়ের অন্যতম বৈজ্ঞানিক অর্জন। এর মাধ্যমে এইচআইভি মহামারি শেষ করার বাস্তব সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বছরে মাত্র দুবার ইনজেকশন নেওয়ার মাধ্যমে এত কার্যকর সুরক্ষা পাওয়া এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। গিলিয়াডের বিজ্ঞানীরা এইচআইভি নির্মূলে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। এই অনুমোদন তাদের কঠোর পরিশ্রমের স্বীকৃতি।

গিলিয়াড বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও সুইজারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের কাছে ‘ইয়েজটুগো’র অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে। আরও কিছু দেশ, যেমন আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো ও পেরুতেও শিগগিরই আবেদন করা হবে।

বিশ্বজুড়ে এই ওষুধ সহজলভ্য করতে ‘অ্যাডভান্সিং অ্যাকসেস প্রোগ্রাম’ চালু করেছে গিলিয়াড, যার আওতায় বিমাহীন বা আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তিরা বিনামূল্যে ওষুধ পেতে পারেন।

এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে, তারা গ্লোবাল ফান্ডের সঙ্গে মিলে আগামী তিন বছরে ২০ লাখ মানুষকে বিনামূল্যে এই ইনজেকশন সরবরাহ করবে এবং এতে তারা কোনো আর্থিক লাভ রাখবে না।

গিলিয়াড আরও জানায়, ১২০টি নিম্ন ও নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশে এই ওষুধের জেনেরিক সংস্করণ উৎপাদন ও সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে এইচআইভি প্রতিরোধে বিশ্বজুড়ে কার্যকর প্রতিকার নিশ্চিত করা যায়।

গ্লোবাল ফান্ডের নির্বাহী পরিচালক পিটার স্যান্ডস বলেন, এটি কেবল বৈজ্ঞানিক বিজয় নয়—এটি এক বাস্তব গেমচেঞ্জার। প্রথমবারের মতো আমাদের হাতে এমন একটি হাতিয়ার এসেছে, যা পুরো এইচআইভি মহামারির গতি পাল্টে দিতে সক্ষম।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.