এআইয়ের কারণে চাকরি বাঁচাতে যে পরামর্শ দিলেন এআই গডফাদার জিওফ্রে হিন্টন

0
14
জিওফ্রে হিন্টন, রয়টার্স

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ভবিষ্যতে মানুষের অনেক চাকরিকে হুমকির মুখে ফেলবে বলে সতর্ক করছেন এ প্রযুক্তির অন্যতম পথিকৃৎ জিওফ্রে হিন্টন। তাঁর মতে, ভবিষ্যতে বাঁচতে হলে মানুষের এমন কাজ শেখা উচিত, যেগুলো সহজে অটোমেশন করা যায় না। হাতে-কলমে কাজ করা পেশা আপাতত নিরাপদ হলেও, হিন্টনের মতে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক অনেক চাকরিই দ্রুত রূপ বদলে ফেলবে। আইনি সহকারী, নথি পর্যালোচক বা তথ্যসংক্ষেপের মতো কাজগুলো এআই ইতিমধ্যেই করতে পারছে। ফলে এসব পেশায় মানুষের প্রয়োজন কমে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের উদ্যোক্তা স্টিভেন বার্টলেটের সঞ্চালনায় প্রচারিত দ্য ডায়েরি অফ আ সিইও পডকাস্টে হিন্টন বলেন, ‘এআই চিন্তা করতে পারলেও শারীরিক কাজে এখনো মানুষের ধারে-কাছে আসতে পারেনি। সে হিসেবে একজন ভালো প্লাম্বার হওয়া ভবিষ্যতের জন্য নিরাপদ ও বুদ্ধিমান সিদ্ধান্ত।’ প্লাম্বিংয়ের মতো কাজে নানা রকম বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। কখনো সিঙ্কের নিচে ঢুকতে হয়, কখনো হঠাৎ পানি চুঁইয়ে পড়া ঠেকাতে হয়, আবার কোনো কোনো সমস্যার কোনো নির্দিষ্ট ম্যানুয়ালই থাকে না। হিন্টনের মতে, এই ধরনের জটিল, শারীরিক এবং পরিস্থিতিনির্ভর কাজ করা এখনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষমতার বাইরে।

৭৭ বছর বয়সী হিন্টন জানিয়েছেন, নিজের তৈরি প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর মাঝেও দ্বিধা রয়েছে। তিনি জানান, নিজের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের ভবিষ্যৎ নিয়েই তিনি সবচেয়ে বেশি চিন্তিত। তাঁর ভাষ্য, যদি এক সময় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পুরোপুরি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, তাহলে তা বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর নিয়ন্ত্রণও নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে শুরুতে কিছু মানুষের দরকার পড়লেও পরে তাঁরা এমন প্রযুক্তি বানিয়ে নিতে পারবে, যেখানে মানুষের প্রয়োজনই থাকবে না। এ বিষয়ে হিন্টন বলেন, ‘এআই যদি মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করে, তাহলে তা মানুষের বিকল্প তৈরি করে ফেলবে। তখন মানুষকে বাদ দেওয়ার নানা উপায় বেরিয়ে আসবে, যেগুলোর বেশির ভাগই হতে পারে ভয়াবহ।’

হিন্টন মনে করেন, শুধু চাকরি হারানোই নয়, প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে আয় ও সুযোগের মধ্যে যে বড় ধরনের বৈষম্য তৈরি হচ্ছে, সেটাই সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা। এআই ব্যবহারে মূলত লাভবান হচ্ছেন সেসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি, যাঁরা প্রযুক্তির মালিক। আর মাঝারি ও সহকারী পর্যায়ের কর্মীরা ক্রমেই চাকরি হারিয়ে ঝুঁকিতে পড়ছেন। যদিও কিছু নতুন পেশা সৃষ্টি হচ্ছে, তবু হিন্টনের মতে, প্রযুক্তির রূপান্তরের গতি এতটা দ্রুত যে অনেকেই এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছেন না। এতে করে কর্মসংস্থানে অনিশ্চয়তা ও বৈষম্য আরও বাড়বে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.