ইরানি তরুণী মাসার মৃত্যুর বর্ষপূর্তির বিক্ষোভে দমন–পীড়ন

0
89
পুলিশি হেফাজতে মাসা আমিনির মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হয় ১৬ সেপ্টেম্বর। ফাইল ছবি: রয়টার্স

ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী গতকাল শনিবার দেশটির কুর্দি এলাকায় বিক্ষোভ দমন করেছে।

একই দিন কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির (২২) বাবা আমজাদ আমিনিকে গ্রেপ্তার করে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। তবে কিছুক্ষণ পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

পুলিশি হেফাজতে মাসা আমিনির মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হয় গতকাল। তাঁর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ইরানজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মুখে পড়ে দেশটি।

ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে, অশান্তি ও নাশকতার চেষ্টার অভিযোগে এক দ্বৈত নাগরিককে আটক করেছে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডস। এ ছাড়া প্রতিবিপ্লব ও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গতকাল রাত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইরানের বেশির ভাগ কুর্দি এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। বড় ধরনের বিক্ষোভ-প্রতিবাদ ঠেকাতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।

মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো দেশটির বেশ কয়েকটি এলাকায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের খবর দিয়েছে।

ইরানের বাধ্যতামূলক ইসলামি পোশাকবিধি অমান্য করার অভিযোগে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর মাসাকে আটক করে দেশটির নীতি পুলিশ। ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশি হেফাজতে তাঁর মৃত্যু হয়।

মাসার মৃত্যুর জেরে দেশটিতে কয়েক মাস ধরে বিক্ষোভ চলে। বিক্ষোভ ঠেকাতে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক দমন–পীড়ন চালায়। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিন্দা জানায়।

গতকাল নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতির মধ্যেও দেশটির বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে, লোকজন ইরানের রাজধানী তেহরানের একটি প্রধান সড়কে জড়ো হয়েছেন। সেখানে এক তরুণ প্রতিবাদী দম্পতিকে উদ্দীপিত অবস্থায় দেখা যায়। সড়ক দিয়ে যাওয়া গাড়ির চালকেরা হর্ন বাজিয়ে বিক্ষোভকারীদের সমর্থন জানান।

তেহরান প্রদেশের কারচাক কারাগারের নারী ওয়ার্ডে আগুন লাগার খবর দিয়েছে সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএর। প্রতিবেদনে বলা হয়, ফাঁসির অপেক্ষায় থাকা নারী আসামিরা তাঁদের পোশাকে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে অবশ্য আগুন নিভিয়ে ফেলে কর্তৃপক্ষ। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

কুর্দিস্তান হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্ক বলছে, বিক্ষোভের সঙ্গে এই ঘটনার যোগসূত্র আছে। একপর্যায়ে বিশেষ বাহিনী কারাগারের ওয়ার্ডে প্রবেশ করে। তারা নারী বন্দীদের মারধর করে। গুলিও চালায়।

আরেকটি ঘটনা সম্পর্কে নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হেনগাও বলেছে, কুর্দি শহর মাহাবাদে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালিয়েছে। এতে অন্তত একজন আহত হয়েছেন।

হেনগাও আরও জানিয়েছে, ইরানের কেরমানশাহ শহরে বেশ কয়েক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

তবে ঘটনা দুটির সত্যতা আনুষ্ঠানিক নিশ্চিত করা হয়নি। আধা সরকারি বার্তা সংস্থা ফার্স জানায়, মাসার নিজ শহর সাকেজে বিক্ষোভের বিষয়ে সতর্কতা উপেক্ষা করার পুলিশ পেলেটগান ব্যবহার করে। এতে এক ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত হন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট হওয়া ভিডিওতে তেহরানসহ বিভিন্ন শহরের বাসিন্দাদের প্রতিবাদের দৃশ্য দেখা গেছে। তাঁদের দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা আলী খামেনির বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, মাসার মৃত্যুর জেরে বিক্ষোভে ৭১টি শিশুসহ পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি নিহত হয়। আহত হয় শত শত ব্যক্তি। গ্রেপ্তার হাজারো। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইরানে অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগে সাত ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.