বিএনপি থেকে পদত্যাগের মাত্র তিন দিনের মাথায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসন থেকে উপনির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা, এ আসন থেকে পাঁচবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়া। রোববার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা নির্বাচন অফিস থেকে তার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন সাদ মোহাম্মদ রশিদ নামের এক ব্যক্তি। জেলা নির্বাচন অফিসার মো. জিল্লুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এ আসনে উপনির্বাচন। একাদশ জাতীয় সংসদের এ আসন থেকে নির্বাচিত বিএনপির এমপি উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়া দলীয় সিদ্ধান্তে বিএনপির অন্যান্য সংসদ সদস্যের সঙ্গে গত ১১ ডিসেম্বর পদত্যাগ করলে এ আসনটি শূন্য হয়। এদিকে দলে মূল্যায়িত না হওয়ার কারণ দেখিয়ে বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) রাতে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিলে এলাকায় ব্যাপক গুঞ্জন ওঠে উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিতে যাচ্ছেন। অবশেষে গরোববার বিকেলে তার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের পর গুঞ্জনই সত্য হতে চলেছে। এদিকে তার মনোনয়নপত্র সংগ্রহের খবরে স্থানীয় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়া ১৯৭৯ সালে প্রথম তৎকালীন কুমিল্লা-১ (নাসিরনগর ও সরাইলের একাংশ) বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া -১ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। এরপর তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২-(সরাইল-আশুগঞ্জ) আসন থেকে ১৯৯১ সালে, ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনসহ দুটি নির্বাচনে ও সর্বশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি দীর্ঘ ২৭ বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন।
২০০১ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়া দলের মনোনয়ন পাননি। ওই আসন থেকে চারদলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ও ইসলামী ঐক্যজোটের তৎকালীন মহাসচিব মুফতি ফজলুল হক আমিনীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করলে উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়াকে টেকনোক্রেট কোটায় প্রতিমন্ত্রী করা হয়।
এদিকে আবদুস সাত্তার ভূইয়ার মনোনয়নপত্র সংগ্রহের প্রতিক্রিয়ায় সরাইল উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান লস্কর তপু বলেন, আবদুস সাত্তার ভূইয়া মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন বলে শুনেছি। তিনি সবসময় ক্ষমতার রাজনীতি করতে চান। বিএনপির পরিবারের কেউ তাকে গ্রহণ করবেন না।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মো. জিল্লুর রহমান বলেন, বিএনপি উকিল সাত্তার ভূইয়ার জন্য কম করেনি। তিনি বিএনপি থেকে পাঁচ বার এমপি ও প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। বর্তমান সময়ে উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়া বিএনপির সঙ্গে বেঈমানি করেছেন। তার জন্য দলের কোনো ক্ষতি হবে না।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকার বলেন, উকিল আবদুস সাত্তার ভূইয়া নিঃসন্দেহে একজন ভালো মানুষ ও জনপ্রিয় ব্যক্তি। তবে তিনি দল ত্যাগ করে স্বতন্ত্র নির্বাচন করলে খুব একটা ভালো করতে পারবেন বলে আমি মনে করি না। কারণ সেখানে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে খুবই শক্তিশালী।