দীর্ঘদিন ধরে অকার্যকর থাকা তিনটি স্থলবন্দর বন্ধ ও একটি স্থলবন্দরের কার্যক্রম স্থগিত করেছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ। খবর বাসসের।
সংবাদ সম্মেলনে শফিকুল আলম বলেন, নীলফামারীর চিলাহাটি স্থলবন্দর, চুয়াডাঙ্গার দৌলতগঞ্জ স্থলবন্দর ও রাঙামাটির তেগামুখ স্থলবন্দর সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া হবিগঞ্জের বাল্লা স্থলবন্দরের পরিচালন কার্যক্রম আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। তিনি জানান, এ বিষয়ে উপদেষ্টা কমিটি পর্যালোচনা করে সুপারিশ দেওয়ার পর সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়েছে।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘দেশে অনেকগুলো স্থলবন্দর অনুমোদন থাকলেও সেগুলোর বেশির ভাগই কার্যত অকার্যকর। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকা বা বাণিজ্যিক কার্যক্রম না থাকায় এগুলো চালু রাখতে গিয়ে সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় করতে হয়। এসব স্থানে কর্মকর্তাদের পোস্টিং দিতে হয় ও করদাতাদের অর্থ ব্যয় হয়।’
শফিকুল আলম আরও বলেন, অতীতে রাজনৈতিক বিবেচনায় সীমান্ত এলাকায় কয়েকটি স্থলবন্দর অনুমোদন দেওয়া হলেও বাস্তবে সেখানে প্রত্যাশিত বাণিজ্যিক কার্যক্রম গড়ে ওঠেনি। ফলে এগুলো সরকারের জন্য অপ্রয়োজনীয় আর্থিক বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তিনি জানান, বর্তমানে কার্যক্রমহীন আরও চারটি স্থলবন্দরে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, যেগুলোর বিষয়ে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গত মার্চে চিলাহাটি, দৌলতগঞ্জ, তেগামুখ ও বাল্লা—এই চারটি স্থলবন্দর পুরোপুরি বন্ধ রাখার সুপারিশ করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে চিলাহাটি, দৌলতগঞ্জ ও তেগামুখে কোনো অবকাঠামো নেই বলে তা বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে। আর হবিগঞ্জের বাল্লা স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ হলেও ভারতীয় অংশে অবকাঠামো ও সড়ক না থাকায় এই স্থলবন্দরের পরিচালনা কার্যক্রম স্থগিতের কথা বলা হয়েছে।
জানা যায়, গত নভেম্বরে দেশের আটটি স্থলবন্দরের উপযোগিতা দেখতে একটি কমিটি গঠন করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি নিয়ে ছয় সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়।
এই কমিটি চারটি স্থলবন্দরকে শর্ত সাপেক্ষে চালু রাখার সুপারিশ করে। যেমন ময়মনসিংহ জেলার গোবরাকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দরের দুটি স্থানের পরিবর্তে একটি স্থানে স্থলবন্দরের কার্যক্রম চালু রাখার সুপারিশ করা হয়। শেরপুরের নাকুগাঁও স্থলবন্দরের আয়-ব্যয় বিবেচনা করে এর কার্যক্রম গতিশীল করার কথা বলা হয়েছে।
কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, জামালপুরের ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দরের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এ বিনিয়োগ বিবেচনায় ন্যূনতম জনবল দিয়ে বন্দরের কার্যক্রম চালু রাখা যেতে পারে। দিনাজপুরের বিরল স্থলবন্দরে বিদ্যমান ব্যবস্থায় রেলপথে আমদানি-রপ্তানি চালু রাখা যেতে পারে।