হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ ৬০ শতাংশের বেশি সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যেই দৃশ্যমান হয়েছে দৃষ্টিনন্দন টার্মিনাল ভবন। এখন অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা এবং বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ চলছে। আগামী অক্টোবরে এই টার্মিনালের আংশিক উদ্বোধন হবে বলে জানা গেছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, আগামী অক্টোবরে টার্মিনালটির আংশিক উদ্বোধন হবে। পুরোপুরি চালু হবে আগামী বছর। এটি চালু হলে যাত্রীদের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যাবে। উড়োজাহাজ চলাচল এবং যাত্রীর সংখ্যাও বাড়বে।
বেবিচক সূত্র বলছে, হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে এখন প্রতিদিন ৩০টির বেশি বিমান সংস্থার ১২০-১৩০টি বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। প্রতিদিন এসব বিমানের ১৯ থেকে ২১ হাজার যাত্রী বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনাল (টার্মিনাল ১ ও ২) ব্যবহার করেন। বর্তমানে বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রীর সেবা দেওয়ার সুযোগ আছে। তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে আরও ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে বলে কর্তৃপক্ষ দাবি করছে।
বেবিচকের তথ্য অনুযায়ী, তৃতীয় টার্মিনালে মোট ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজের ব্যবস্থা থাকবে। আগামী অক্টোবরে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ চালু করা হবে। বহির্গমনের জন্য মোট ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার থাকবে (১৫টি সেলফ সার্ভিস চেক-ইন কাউন্টারসহ)। এ ছাড়া ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ কাউন্টারসহ বহির্গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে ৬৬টি। আগমনীর ক্ষেত্রে ৫টি স্বয়ংক্রিয় চেক-ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি কাউন্টার থাকবে। টার্মিনালে ১৬টি ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে। অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য থাকবে চারটি পৃথক বেল্ট। ১ হাজার ৪৪টি গাড়ি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন বহুতল কার পার্কিং তৈরি করা হচ্ছে। এই টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি উড়োজাহাজ পার্ক করে রাখা যাবে। টার্মিনাল ভবনটির নকশা করেছেন সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরের নকশাকার স্থপতি রোহানি বাহারিন।
২০১৭ সালে তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়। নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপানি সহযোগিতা সংস্থা জাইকা ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। আর বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এই নির্মাণকাজ করছে জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং।
গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পেতে পারে জাপান
এদিকে তৃতীয় টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ পেতে আগ্রহ দেখিয়েছে জাপান। বেবিচক সূত্র বলছে, ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে টার্মিনালটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ জাপানকে দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিষয়টি চূড়ান্ত হতে আরও অন্তত ছয় মাস সময় লাগতে পারে। তবে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) টার্মিনালটির গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ পরিচালিত হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, মন্ত্রিসভা কমিটির প্রাথমিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে তা পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ জাপানকে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, জাপান কীভাবে কাজটি করবে, আর্থিক-সংশ্লিষ্টতা কী হবে, সেবা কীভাবে দেওয়া হবে—এসব বিষয়ে তিনটি পৃথক সমীক্ষা হচ্ছে। পিপিপি কর্তৃপক্ষ, বেবিচক ও জাপান পৃথকভাবে সমীক্ষাগুলো করছে। এগুলো শেষ হতে ছয় মাসের বেশি সময় লাগবে। তারপর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিমানবন্দর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের একটি অংশ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং। বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ অবতরণের পর পথ দেখিয়ে পার্কিং বে–তে নেওয়া, দরজায় সিঁড়ি লাগানো, যাত্রীদের মালপত্র ওঠানো-নামানো, উড়োজাহাজের ভেতর পরিষ্কার করা, চেকইন কাউন্টারে সেবার মতো কাজ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের অন্তর্ভুক্ত।
দেশের সব বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস করছে। বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবার মান নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। শাহজালাল বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বেসরকারি খাতে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বেশি দূর এগোয়নি।
গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ কে করবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসার আগ পর্যন্ত তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বেবিচক পালন করবে বলে জানান মফিদুর রহমান।