কানাডার অন্টারিওতে ভয়াবহ আকারে হাম ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে শত শত মানুষ। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোতেও বেড়েছে সংক্রমণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, উত্তর আমেরিকায় হাম সংক্রমণের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। খবর আলজাজিরা’র।
অন্টারিওতে ২ হাজারের বেশি হাম রোগী শনাক্ত হয়েছে অক্টোবর ২০২৪ থেকে। অ্যালবার্টা প্রদেশে আরও ৭৬১ জন আক্রান্ত হয়েছে। কানাডার নিউ ব্রান্সউইকে একটি বড় ধর্মীয় সমাবেশ থেকে সংক্রমণ ছড়িয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিল মেনোনাইট সম্প্রদায়ের মানুষ, যারা আধুনিক চিকিৎসা ও প্রযুক্তি এড়িয়ে চলে।
অন্টারিওর তিন-চতুর্থাংশ নতুন রোগী হলো এমন শিশু, যারা টিকা নেয়নি। প্রদেশটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কিয়েরান মুর জানান, একটি নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে, যেটি জন্মের আগেই মায়ের কাছ থেকে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। মা এমএমআর টিকা নেননি।
যুক্তরাষ্ট্রেও একই অবস্থা। চলতি বছর টেক্সাস, নিউ মেক্সিকো ও ওকলাহোমাতে ১ হাজার ১৬৮টি হাম সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এরমধ্যে ৮০ শতাংশ পশ্চিম টেক্সাসেই। তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে দুজন শিশু।
মেক্সিকোতে মে মাস পর্যন্ত হাম আক্রান্ত ১ হাজার ৫২০ জন। উত্তরাঞ্চলীয় চিহুয়াহুয়া রাজ্যে রোগীর সংখ্যা বেশি। চারজন মারা গেছে। আগের বছর দেশজুড়ে আক্রান্ত ছিল মাত্র ৭ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, টিকাদানের হার কমে যাওয়াই এই পরিস্থিতির মূল কারণ। হাম প্রতিরোধে ৯৫ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু অনেক জায়গায় ধর্মীয় বা ব্যক্তিগত কারণে টিকা না নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।
মেনোনাইটদের মতো কিছু গোষ্ঠী কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোতে রয়েছে, যাদের মধ্যে টিকা গ্রহণের হার কম। তারা একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে, যার ফলে ভাইরাস দ্রুত ছড়াতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমএমআর টিকা ৯৭ শতাংশ কার্যকর। ২০০০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে হাম নির্মূল ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু এখন ফের বড় ধরনের সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রের নিয়োগ আরও উদ্বেগ বাড়িয়েছে। তিনি টিকাবিরোধী মতবাদ প্রচার করেন। এমনকি টিকায় ‘গর্ভপাত করা ভ্রূণের কোষ’ আছে বলেও দাবি করেন, যা বিজ্ঞানভিত্তিক নয়। তিনি হাম প্রতিরোধে ভিটামিন ও তেল ব্যবহারের পরামর্শ দেন, যা কার্যকর নয় বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের শঙ্কা, টিকা নিয়ে বিভ্রান্তি বাড়লে উত্তর আমেরিকায় হাম পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।