রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানায় হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আরও ১৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে গত সোমবারের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ২৩–এ দাঁড়াল।
স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গতকাল সকাল থেকেই উত্তরার হাউস বিল্ডিং থেকে জসীমউদ্দীন পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নেন কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী। এ সময় সড়কটির পাশেই আজমপুর এলাকায় উত্তরা-পূর্ব থানার সামনে অবস্থান করছিলেন পুলিশ সদস্যরা। দুপুরে পদত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষোভকারীরা আনন্দমিছিল শুরু করেন। একপর্যায়ে বিকেল ৪টার দিকে কিছু বিক্ষোভকারী ওই পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে থানা দখলের চেষ্টা করলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। তখন পুলিশ গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে আত্মরক্ষার চেষ্টা চালায়।
পরে সন্ধ্যার দিকে থানায় ঢুকে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। ভাঙচুরের পর করা হয় অগ্নিসংযোগ। রাত ৮টার দিকে সেনাসদস্যরা হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন। এ সময় থানার সামনে ছয়জনের মরদেহ পান তাঁরা। পাশাপাশি থানার ভেতর থেকে জীবিত উদ্ধার করেন ২৯ জনকে। জীবিত উদ্ধার হওয়া ও মৃত ব্যক্তিরা সবাই পুলিশ সদস্য কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আজ বেলা একটায় সরেজমিনে দেখা যায়, থানাটি ঘিরে রেখেছেন সেনাসদস্যরা। থানার সামনে হাজারো উৎসুক জনতা। চারতলা থানা ভবনের বিভিন্ন স্থান থেকে ধোঁয়া উড়ছে। ভবনের বিভিন্ন তলার জানালার কাচ ও জিনিসপত্র ভাঙা। ভবনের সামনে পড়ে আছে আগুনে পোড়া পুলিশের একটি এপিসি (সাঁজোয়া যান) ও ৮-১০টি গাড়ি। থানার ভেতরে আরও কেউ জীবিত বা মৃত কেউ আছেন কি না, খুঁজে দেখছেন সেনাসদস্যরা। পাশাপাশি থানার বিভিন্ন জিনিসপত্র তল্লাশি করছেন।
এ সময় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে কোনো সেনা কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেনাসদস্য বলেন, পরিস্থিতি খারাপ দেখে তাঁরা রাতেই থানার সামনে অবস্থান নেন। এ সময় থানার সামনের ফুটপাতে ছয়জনের লাশ পান। আর ভেতর থেকে জীবিত উদ্ধার করেন ২৯ জনকে। তাঁদের সবাই পুলিশ সদস্য কি না, নিশ্চিত হওয়া যায়নি। থানায় পড়ে থাকা অনেক জিনিসপত্র উদ্ধার করেছেন তাঁরা।
এদিকে থানার আশপাশের তিনটি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে থানায় হামলা-সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। পাশাপাশি গুলিবিদ্ধ হওয়াসহ বিভিন্নভাবে আহত হয়েছেন ১৪৪ জন।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে মারা যান ৯ জন, চিকিৎসা নেন আহত ২০ জন। কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে মারা যান ৯ জন, আহত হয়ে চিকিৎসা নেন ৮৪ জন। আর উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান ৪ জন, চিকিৎসা নেন আহত ৪০ জন। আজ দুপুরে হাসপাতালগুলোর পরিচালকেরা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘গতকাল দুপুরের পর থেকে রাত পর্যন্ত আমরা ৯ জনের মৃতদেহ পেয়েছি। তাঁদের অধিকাংশই হাসপাতালে আনার আগে মারা গেছেন। পাশাপাশি গুলিবিদ্ধ হওয়াসহ বিভিন্ন আঘাতে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় ৮৪ জন।’