কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সঙ্গে মিয়ানমারের সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) গোলাগুলি ও সংঘর্ষে এক আরসা সন্ত্রাসী ও এক রোহিঙ্গা নারী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে বালুখালী ময়নারঘোনা আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১৮) এল-১৭ ব্লকের মসজিদের পাশে পাহাড়ে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন আরসা সন্ত্রাসী মো. হাশিম (৩২) ও রোহিঙ্গা নারী নূর হাবা (৫০)। নিহত হাশিম বালুখালী ময়নারঘোনা আশ্রয়শিবিরের এল-১৭ ব্লকের বশির আহমদের ছেলে। পুলিশের দাবি, হাশিম আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী। আর নূর হাবা একই আশ্রয়শিবিরের এল-১৭ ব্লকের নুরুল ইসলামের স্ত্রী। ঘটনার পর এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সাধারণ রোহিঙ্গারা ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
আশ্রয়শিবিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার (অপারেশন ও মিডিয়া) মো. ফারুক আহমেদ বলেন, সাধারণ রোহিঙ্গাদের অপহরণ করার জন্য বেলা দেড়টার দিকে আশ্রয়শিবিরের এল-১৭ ব্লকের মসজিদের পাশের পাহাড়ে আরসার ২০ থেকে ২৫ জন সন্ত্রাসী অবস্থান নেয়। খবর পেয়ে এপিবিএন সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে সন্ত্রাসীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। আত্মরক্ষায় এপিবিএন সদস্যরাও পাল্টা গুলি ছোড়েন। গোলাগুলিতে আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী মো. হাশিম ও রোহিঙ্গা নারী নূর হাবা নিহত হন।
এপিবিএন জানায়, গোলাগুলির পর আরসা সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলে আশ্রয়শিবির থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মো. হাশিমের লাশ উদ্ধার করা হয়। অন্যদিকে গোলাগুলির সময় পালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নুর হাবার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গোলাগুলিতে এপিবিএনের দুজন সদস্য আহত হয়েছেন। তাঁদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, গোলাগুলি ও সংঘর্ষ চলাকালে পালানোর সময় অস্ত্রসহ আরসার সন্ত্রাসী সাদেককে (৩১) আটক করা হয়েছে। তিনি একই আশ্রয়শিবিরের এল-১৭ ব্লকের নুরুল হাকিমের ছেলে।
বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ৮ এপিবিএনের সহ–অধিনায়ক পুলিশ সুপার খন্দকার ফজলে রাব্বি ও ময়নারঘোনা আশ্রয়শিবিরের পুলিশ ক্যাম্পের কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উক্য সিং।
আশ্রয়শিবিরে এপিবিএনের অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে জানিয়ে সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ বলেন, সন্ত্রাসীদের ধরতে আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালাচ্ছে এপিবিএন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। নিহত আরসার সন্ত্রাসী হাশিম আশ্রয়শিবিরে সংঘটিত বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড, মাদক ব্যবসা, অপহরণ, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, গুলিতে নিহত দুই রোহিঙ্গার লাশ বিকেলে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়নি। তবে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার উখিয়ার তানজিমারখোলা আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১৯) এ-৮ ব্লকে আরসার সঙ্গে এপিবিএনের গোলাগুলি ও সংঘর্ষে আবদুল মজিদ ওরফে লালাইয়া (৪৫) নামের আরেক আরসা কমান্ডার নিহত হন। এ সময় আরসার তিনজন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছিল এপিবিএন।
পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি এপ্রিল মাসে উখিয়ার কয়েকটি আশ্রয়শিবিরে চারটি পৃথক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় দুজন আরসা সন্ত্রাসীসহ চার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। গত মার্চ মাসে কয়েকটি আশ্রয়শিবিরে ১০টি পৃথক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ১১ জন রোহিঙ্গা নিহত হন। গত পাঁচ মাসে আশ্রয়শিবিরে একাধিক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৩৯ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ১৪ জন রোহিঙ্গা মাঝি, ১০ জন আরসা সন্ত্রাসী, একজন স্বেচ্ছাসেবক ও বাকিরা সাধারণ রোহিঙ্গা।