উখিয়ায় আশ্রয়শিবিরে আরসার হামলায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গুলিবিদ্ধ, গ্রেনেড উদ্ধার

0
191
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ মোহাম্মদ নবী, ছবি: সংগৃহীত

রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, গুলিবিদ্ধ নবী আশ্রয়শিবিরে মাদক চোরাচালানের অন্যতম হোতা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নবী গ্রুপের প্রধান নবী হোসেনের সহযোগী। মাদক চোরাচালানের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে আরসা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে মোহাম্মদ নবীর বিরোধ চলছিল। আজ দুপুরে ১০ থেকে ১২ জন আরসা সন্ত্রাসী শিবিরে ঢুকে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে নবীকে কয়েকটি গুলি করে পালিয়ে যান তাঁরা। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ আহত নবীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, গুলিবিদ্ধ নবী বর্তমানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর কপালে ও পায়ে একাধিক গুলির চিহ্ন আছে। অভিযোগের ভিত্তিতে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা বিকেলে আশ্রয়শিবিরে নবীর বসতঘরে তল্লাশি চালিয়ে অবিস্ফোরিত একটি গ্রেনেড উদ্ধার করেছেন।

ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী আরও বলেন, কাল শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক দল ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্রেনেডটি নিষ্ক্রিয় করার কথা আছে। মাদক চোরাচালান ও আশ্রয়শিবিরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, মাদক চোরাচালানকে কেন্দ্র করে আরসার সঙ্গে নবী হোসেনের বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। আরসার অস্ত্রধারীদের ঠেকাতে মাদকের টাকায় অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ ও হ্যান্ড গ্রেনেড সংগ্রহ করছে নবী হোসেনের বাহিনী। এতে সাধারণ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে।

উদ্ধার হওয়া হ্যান্ড গ্রেনেড

উদ্ধার হওয়া হ্যান্ড গ্রেনেড
ছবি: সংগৃহীত

এর আগে গত বুধবার দুপুরে উখিয়ার লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-২ পূর্ব) এ ব্লকে অস্ত্রধারী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হামলায় দুই সহোদর জাহাঙ্গীর আলম (২৭) ও ছৈয়দ আলম (২২) গুলিবিদ্ধ হন। তাঁরা দুজন বর্তমানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের গলা, হাত, পা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলি লাগে বলে জানিয়েছেন উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী।

সর্বশেষ ২৯ ডিসেম্বর রাতে উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে আরসা সন্ত্রাসীদের গুলিতে রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ হোসেন ওরফে শফিক (৩০) নিহত হন। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই নুর হাশিম বাদী হয়ে উখিয়া থানায় আরসার প্রধান কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনিসহ ৪৩ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫ থেকে ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। এ ঘটনায় পুলিশ এজাহারনামীয় পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করলেও মূল হোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।

পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, গত চার মাসে আশ্রয়শিবিরে একাধিক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ২৩ রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১০ রোহিঙ্গা মাঝি ও ৫ জন আরসার সদস্য। বাকিরা সাধারণ রোহিঙ্গা।

রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, গত কয়েক দিনে আরসা সন্ত্রাসীরা শিবিরে ঢুকে কয়েক মাঝিকে বসতঘর থেকে তুলে নিয়ে গুলি করে বা কুপিয়ে হত্যা করেছেন। আশ্রয়শিবিরের অন্তত ৭০০ মাঝি আরসা আতঙ্কে ভুগছেন। প্রাণনাশের হুমকিতে বেশ কয়েক মাঝি ইতিমধ্যে শিবির ছেড়ে অন্যত্র আত্মগোপন করেছেন। উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে মাঝি আছেন প্রায় আড়াই হাজার। আশ্রয়শিবিরগুলোতে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.