উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে আরসার কমান্ডার নিহত

0
141
বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১৯) গোলাগুলির পর আরসার সন্ত্রাসীদের ধরতে পুলিশের অভিযান। মঙ্গলবার বিকেলে কক্সবাজারের উখিয়ায়, ছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে পুলিশের সঙ্গে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) গোলাগুলিতে আবদুল মজিদ ওরফে লালাইয়া (৪৫) নামের এক রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১৯) এ-৮ ব্লকে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশের দাবি, আবদুল মজিদ আরসা কমান্ডার ও আশ্রয়শিবিরের সংঘটিত চারটি হত্যা মামলার আসামি ছিলেন। আশ্রয়শিবিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহকারী পুলিশ সুপার (অপারেশন ও মিডিয়া) মো. ফারুক আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ বলেন, নিহত রোহিঙ্গা আবদুল মজিদ আরসার কমান্ডার। গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে তাঁর মৃত্যু হয়। রোহিঙ্গাদের একটি ঘরে তাঁর গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। লাশের পাশে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও দুটি গুলি পড়ে ছিল।

গোলাগুলির ঘটনার পর আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালিয়ে আরসার তিনজন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন আশ্রয়শিবিরের এ-৮ ব্লকের মোহাম্মদ তাহের (৪৫) ও লিয়াকত আলী (২৫) এবং এ-১৮ ব্লকের জামাল হোসেন (২০)। গোলাগুলির সময় পুলিশের দুজন সদস্য আহত হন।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য নিহত আবদুল মজিদের লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি। তবে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা জানান, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ২০ থেকে ২৫ জন আরসার অস্ত্রধারী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১৯) এ-৮ ব্লকের রোহিঙ্গা নেতা আমিন মাঝির বাড়ির পাশে কয়েকটি রোহিঙ্গার ঘর ঘিরে ফেলেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল, কয়েকজন রোহিঙ্গাকে অপহরণ করা। খবর পেয়ে সকাল ১০টার দিকে এপিবিএনের একটি দল ঘটনাস্থলে গেলে তাঁরা স্থানীয় রোহিঙ্গা হামিদা বেগম ও আশপাশের কয়েকটি ঘরে ঢুকে পড়েন। পরে সেখানে আরসার আরও কয়েকজন সদস্য জড়ো হন। সোয়া ১০টার দিকে আরসার প্রায় ৫০ জনের একটি দল পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়লে আত্মরক্ষায় পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। আধা ঘণ্টা গোলাগুলির পর আরসার অস্ত্রধারীরা পিছু হটেন এবং জঙ্গলের দিকে চলে যান। এরপর পুলিশ আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাদের ঘর তল্লাশি করে আরসার তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় একটি রোহিঙ্গা বসতি থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আরসার কমান্ডার আবদুল মজিদের লাশ উদ্ধার করা হয়।

সহকারী পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ বলেন, ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। আরসা সন্ত্রাসীদের ধরতে আশ্রয়শিবিরে পুলিশের অভিযান চলছে।

আশ্রয়শিবিরে আধিপত্য বিস্তার, মাদক চোরাচালান ও পূর্বশত্রুতার জেরে মিয়ানমারের একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। পুলিশ জানায়, ১ এপ্রিল ভোরে বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮) মিয়ানমারের দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় সৈয়দ আলম (৬১) নামের একজন রোহিঙ্গা নিহত হন। গত ২১ মার্চ দুপুরে বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১৩) জি-৪ ব্লকে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় দুই রোহিঙ্গা নিহত হন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার অভিযোগে তাঁদের গুলি করে হত্যা করেন সন্ত্রাসীরা।

পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের দেওয়া তথ্যমতে, মার্চ মাসে উখিয়ার বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে ১০টি পৃথক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ১১ জন রোহিঙ্গা নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হয় এক শিশুসহ চারজন। এ নিয়ে গত পাঁচ মাসে আশ্রয়শিবিরে সংঘাতে অন্তত ৩৭ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জন রোহিঙ্গা মাঝি, ৯ জন আরসা সন্ত্রাসী, একজন স্বেচ্ছাসেবক ও বাকিরা সাধারণ রোহিঙ্গা।

সম্প্রতি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে অস্থিরতার জন্য আরসাসহ তিনটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও সাতটি ডাকাত দল সক্রিয় আছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.