তিন সদস্যর এই তদন্ত দলের প্রধান হচ্ছেন বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক (পরিদর্শন ও আইন) মো. আহসানুল গণি। অপর দুজন হচ্ছেন সহকারী মহাব্যবস্থাপক (প্রকল্প ও ঋণ) আবদুর রাজ্জাক ও সহকারী মহাব্যবস্থাপক (আইন) আমিনুল ইসলাম। এ সময় তাঁদের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক পাবনা শাখার ব্যবস্থাপক কাজী জসিম উদ্দীন ও শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক ও মামলার বাদী সৈয়দ মোজাম্মেল হক।
সরেজমিন ভাড়ইমারি গ্রামে দেখা যায়, নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সকাল ১০টার মধ্যেই তদন্ত কমিটির সদস্যরা ভাড়ইমারি গ্রামে পৌঁছান। তবে কৃষকদের কেউ সেখানে নেই। সবাই মাঠে কাজে ব্যস্ত। তদন্ত দল পৌঁছানোর খবরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ কৃষকেরা সেখানে আসতে থাকেন। তদন্ত দল কৃষকদের কাছে ঋণ পরিষদের তথ্য জানতে চান। কিন্তু কৃষকেরা ঋণ পরিশোধের তেমন কোনো কাগজ দেখাতে পারেননি। তবে তাঁরা মুখে মুখে পরিশোধের হিসাব ও তারিখ জানান। কৃষকদের মনে রাখা তথ্য ব্যাংকের স্টেটমেন্টের সঙ্গে মিলে যায়। এ সময় কয়েকজন নিজেদের সামান্য বকেয়ার কথা শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তাঁরা তদন্ত দলের কাছে প্রশ্ন তোলেন, টাকা পরিশোধ করে কেন জেল খাটতে হলো? কৃষকদের এই প্রশ্নে তদন্ত দলের সদস্যরা চুপ হয়ে যান।
৪৩৩ টাকা বকেয়া থাকা আতিয়ার রহমান বলেন, ‘আমাদের কি মানসুম্মান নাই? ৪০০ টাহার জন্যি জেল খাটা লাগল। হগলে মনে করল, কত টেহা জিনি মারে খাইছি। গেরামে মুখ দেহাবের পারিনে।’
মজনু প্রামাণিক বলেন, ‘৪০ হাজারে ১৫ হাজার সুদ দিলেম। তারপরেও জেলে গেলেম। ইডা কুন নিয়ম, বুঝলেম না। আমাগের এই হয়রানির বিচার চাই।’
এ প্রসঙ্গে তদন্ত দলের প্রধান বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের উপমহাব্যবস্থাপক (পরিদর্শন ও আইন) মো. আহসানুল গণি বলেন, মূলত গ্রুপ ঋণের কারণেই সবার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এখানে ব্যাংকের কিছু করার ছিল না। তবে যাঁদের কম টাকা বকেয়া, তাঁদের বাদ দেওয়া যেত। এটা হয়তো ভুলবশত হয়েছে। পরবর্তীকালে বিষয়টি দেখা হবে। ১০ লাখ টাকা পরিশোধের পরও এত বকেয়া কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১৫ শতাংশ সুদ হারে ঋণ দেওয়া হয়েছিল। কিছু কৃষক টাকা পরিশোধ না করায় চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ বেড়ে গেছে।
উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের ভাড়ইমারি গ্রামে ‘ভাড়ইমারি উত্তরপাড়া সবজি চাষি সমবায় সমিতি’ নামে কৃষকদের একটি সমিতি রয়েছে। এই কৃষকেরা বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক থেকে ১৬ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করে। কৃষকদের দাবি, তাঁরা এ ঋণের ১৩ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। কিন্তু পরবর্তীকালে সমবায় ব্যাংক আরও ১৩ লাখ টাকা পাওনা দাবি করে এবং ঋণের শর্তভঙ্গের দায়ে প্রতারণার মামলা করে। মামলায় আদালত ৩৭ কৃষকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ১২ কৃষককে গ্রেপ্তার করে গত ২৫ নভেম্বর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। ২৭ নভেম্বর গ্রেপ্তার ১২ জনসহ ৩৭ কৃষক জামিন পান।